

সোহেল খান দূর্জয়,নেত্রকোনা : থোকায় থোকায় ঝুলে আছে শিম। আবার কোথাও সাদা-বেগুনী ফুলে ফুলে ভরে গেছে শিমগাছ। দাম বেশি,তাই ক্ষেত থেকে শিম তুলছেন কৃষকেরা। শস্য ভাণ্ডারখ্যাত নেত্রকোনা জেলা, জেলার প্রতিটি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে চলছে শিম চাষ। এই অঞ্চলের খালিয়াজুরী উপজেলার প্রায় গ্রামে বিস্তৃত বিশাল চরে এ বছর শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় শিমের বাম্পার ফলন ও বাজার দর ভালো থাকায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। এসব শিম উপজেলার বাজার ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে বাইরের জেলা-উপজেলাগুলোতে। এতে একদিকে যেমন শিম চাষে আগ্রহ বেড়েছে অন্যদিকে আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব শিম ক্ষেতের পরিচর্যা, শিম উত্তোলন ও বাজারজাতকরণের কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন ওইসব এলাকার দুই শতাধিক শ্রমিক। শিম চাষি ও শ্রমিকরা জানান, সপ্তাহে তারা দুবার শিম তুলে বিক্রি করতে পারেন বাজারে।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলায় ১৩৪০ হেক্টর জমিতে ১৩ টন হারে শিমের মোট ফলন হয়েছিল ৪৪২০ টন। এবছর ১৪৯০ হেক্টর জমিতে ১৩ টন হারে ৫০৭০ টন ফলনের আশা করছে কৃষি অফিস। ৪০ হাজার টাকা দরে যার গড় মূল্য হবে ২০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। উৎপাদিত শিমের জাতের মধ্যে রয়েছে বারি শিম-২, বারি শিম-৪, নলডুগ এবং আশ্বিনা। বারি শিম-২ স্থানীয়ভাবে ঢাকাইয়া শিম নামে পরিচিত। জেলায় এ জাতের শিমের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয়। ৩০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করেছেন বলাইশিমুল ইউনিয়নের রাজিবপুর গ্রামের কৃষক মো. আব্দুল আজিজ ও মো. মনির হোসেন। তারা জানান, পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবছর শিমের ভালো ফলন হয়েছে। সেইসঙ্গে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় তারা অনেক লাভবান। চার হাজার থেকে ২৫০০ টাকা দরে ইতোমধ্যে তারা ১০ মণ শিম বিক্রি করেছেন। আরো ১০ মণ শিম বিক্রির আশা করছেন এই দুই শিম চাষি। তবে চরাঞ্চলে পর্যাপ্ত সেচ ব্যবস্থা না থাকায় আক্ষেপ তাদের।
এদিকে দূর্গাপুর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের প্রয়াত কৃষক আ. লতিফের পুত্র মো. মেহেদী হাসান বলেন, তিন বছর আগে আমার বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর শিম ও অন্যান্য ফসলের আবাদ করেই আমি সংসারের হাল ধরেছি। নিজের পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, এবছর শিমের ভালো ফলন হয়েছে। ক্ষেতে পানির ব্যবস্থা করতে পারলে শিম আরো বেশি হতো।অন্যদিকে মোহনগঞ্জ উপজেলার বড়তলী গ্রামের শিমক্ষেত পরিচর্যা করছেন নূরজাহান বেগম নামের একজন নারী শিম চাষী। তিনি বলেন, দৈনিক ৩০০ টাকার চুক্তিতে মালিকের বাড়িতে একবেলা খাবার খেয়ে সারাদিন শিম উত্তোলন ও ক্ষেতের পরিচর্যা করেন অনেকেই। মালিক প্রতিদিন শিমও দেন। এই বাড়তি আয়ে তাদের সংসারের অভাব মিটিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, জেলার বিভিন্ন এলাকার সবজি চাষিদের নিয়ে আমরা সভা করেছি। কৃষি অফিস থেকে তাদের সার ও বীজও দেওয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত তাদের বিভিন্ন পরামর্শও দিয়ে আসছি। সে হিসেবে চাষিরা শিমক্ষেতে ভালো ফলন পাচ্ছেন। দামও ভালো পাওয়ায় জেলায় এবছর শিমের চাষ বেড়েছে।