নেত্রকোনায় মাঠে নেই আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ শূন্য ‘দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ’ খ্যাত নেত্রকোনা
সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা : নিরব নিস্তব্ধ, ‘আওয়ামী লীগ শূন্য’ হয়ে পড়েছে একসময়ের ‘দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ’ হিসেবে পরিচিত নেত্রকোনা জেলা। জানা গেছে,(৫ আগস্ট) শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকেই জেলা উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের নেতারাও সব আত্মগোপনে চলে গেছেন। নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন কর্মীরাও। জেলার পাঁচ এমপির মধ্যে তিনজনেরই সন্ধান নেই। তাদের মোবাইলফোনসহ যোগাযোগের সব মাধ্যম বন্ধ। নিজ বাসায় ও অবস্থান করছেন না কেউ,এর মধ্যে নেত্রকোনা-২ আসনের সাবেক এমপি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় ও নেত্রকোনা-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আহমদ হোসেন আটক হয়ে রিমান্ডে রয়েছেন। নেত্রকোনা জেলার প্রতিটি স্হানে লোকে লোকারণ্য থাকতো সবসময়। কিন্তু সেই দৃশ্য এখন নিস্তব্ধ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও আওয়ামী লীগের প্রতিটি দলীয় কার্যালয়।
শনিবার (৩১ আগস্ট) সদ্য সাবেক নেত্রকোনা ১ আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাক আহমেদ রুহি এমপি, সদ্য সাবেক নেত্রকোনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আশরাফ আলী খান খসরু এমপি, সদ্য সাবেক স্বতন্ত্র নেত্রকোনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইফতেখার উদ্দিন পিন্টু এমপি ও নেত্রকোনা -৩ আসনের সাবেক এমপি অসীম কুমার উকিল, নেত্রকোনা-৪ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসান এমপি সহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে আমার কোনো দ্বিমত ছিল না। তবে আমি চেষ্টা করেছি সবাইকে নিয়ে যেন আমার এলাকায় কোনো প্রকার সহিংসতা না হয়। সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা কে কোথায় আছেন তা আমি জানি না।
তবে গণমাধ্যমে নেত্রীর (শেখ হাসিনার) বক্তব্য দেখে অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, নেত্রকোনায় শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুর দিকে বেশ তেমন উত্তেজনা ছিল না, দাপুটে ছিল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন নেতাকর্মীরা। কিন্তু ২ আগস্ট প্রথম দফায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় আওয়ামী লীগ। এসময় শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় তারা পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন।(৫ আগস্ট) শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় অফিস জ্বালিয়ে দেয় দূবৃত্বরা। পরে পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।অন্যদিকে(৪ আগস্ট) জেলা শহরের বিভিন্ন অলিগলি থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের একটি বেপরোয়া টিম। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে। পরে ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আবারও সংঘর্ষে জড়ান অন্য একটি টিম।ঢাকা সহ সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের মিছিলে গুলি ছুড়লে এই সংঘর্ষ বাঁধে। সারাদেশের অনেক জায়গায় এসময় নেতাদের অনেকেরই সঙ্গে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। কিন্তু কয়েক মিনিটও টিকতে পারেননি তারা। নিমিষেই অনেকে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন।এরপর থেকেই মূলত আর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নেত্রকোনা শহরে এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। বর্তমানে বিএনপিসহ তাদের সমমনা শরিকদের বিপরীতে মাঠের রাজনীতিতে এককভাবে সক্রিয় রয়েছে ইসলামী দলগুলো।দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু, সুহৃদ ও সমমনা বলে পরিচিত ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে দেখা যাচ্ছে না তাদের পাশে।এখানেই শেষ নয়। ধারাবাহিকভাবে গণসমাবেশ, গণমিছিল, অবস্থান কর্মসূচি, পদযাত্রাসহ একের পর এক কর্মসূচি পালন করে চলেছে বিএনপি। মাঠে আওয়ামী লীগ নেই বললেই চলে।