

আশিকুর রহমান, নরসিংদী : দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জেলার গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নরসিংদী। শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানার দুষিত বর্জ্যের কারণে পরিবেশ ও মেঘনা,আড়িয়াল খাঁ, শীতলক্ষ্যা, পুরাতন ব্রম্মপুত্র ও হাড়িধোয়া নদীর পানি দূষণ হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য। এমন পরিস্থিতিতে নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের সক্রিয় ভূমিকা রাখার কথা। অথচ এ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ঘুমের ভাব ধরে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। উৎকোচ নিয়ে পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড জেনেও নিশ্চুপ থাকছেন। সে সঙ্গে তারা পরিবেশ আইন ও বিধিবহির্ভূত কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দিলেও তা কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকছে। নরসিংদীতে ডাইং ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের যেসব ফ্যাক্টরীতে রং ও ক্যামিকেল ব্যবহৃত হয় সেইসব ফ্যাক্টরীতে ইটিপি ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলেও তা মানছে না প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। ওইসব প্রতিষ্ঠানে নামে ইটিপি থাকেলও তা ব্যবহারে ব্যয়বহুল হওয়ায় বন্ধ রাখেন অনেকে। লোকদেখানো দুই-একবার চালু করলেও তা পুরোসময় থাকে বন্ধ। ফলে দিন দিন নদী পানি যেমন দূর্ষিত হচ্ছে, তেমনি নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।
নরসিংদীতে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের মধ্যে দূষণরোধে পরিবেশ আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ ও শাস্তির বিধান নিশ্চিত করার পরিবর্তে মাসোহারা আদায়ের বিষয় স্পষ্ট।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার ভগীরথপুর (শেখেরচর) বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পুরাতন ব্রম্মপুত্র। একসময়ে এই নদীপথে দূর-দূরান্ত থেকে নৌকা ও গয়না আসতো ঐহিত্যবাহী বাবুর হাটে। আর এসব নৌকা বা গয়না দিয়ে মালামাল নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্য যাওয়া হতো। বর্তমানে এই নদী আজ স্মৃতি। পরিবেশের নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে ব্যাঙের ছাতার মত আশেপাশে ডিএন, ব্রাদার্স,
সুখী, বাংলাদেশ ডিজিটাল টেক্সটাইল এন্ড ডাইং, ইভা, সুপার ফাইন সহ অসংখ্য ডাইং ফ্যাক্টরী গড়ে ওঠেছে। এর এসব কলকারখানা ও ডাইং ফ্যাক্টরীর দূষিত বর্জ্য এবং ক্যামিকেল মিশ্রিত পানি সরাসরি নিক্ষেপ করা হচ্ছে পুরাতন ব্রক্ষপুত্র নদীতে। ফলের নদীর পানি নষ্ট হয়ে কালো আলকাতরার মতো হয়ে গেছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ইটিপির মাধ্যমে তরল বর্জ্য পানিগুলো শোধন করে ছাড়ার আইন থাকলেও সেটা মানছেন না। পরিবেশ আইনে স্পটভাবে বলা আছে পরিবেশ আইন বহির্ভূত কাজ করলে উক্ত প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা সহ লাইসেন্স বাতিল করার বিধান রয়েছে। আর এসব নিয়ম-নীতি ও শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে কি না, তা যাচাই করার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর নরসিংদী তা না করেই আর্থিক সুবিধা পেয়ে অফিসে বসে ওইসব প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র প্রদান ও নবায়ন করা হয়। এসব ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা লাখ লাখ টাকা ঘুস নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে হিডেন ইকোনমির আওতায় প্রতিষ্ঠিত শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিবেশ দূষণ করছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের বেশকিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই স্বার্থান্বেষী মহল বিধি-বহির্ভূতভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে জনস্রোতি রয়েছে। ফলে পরিবেশ অধিদপ্তর আইন প্রয়োগ বাস্তবায়ন না করে মাসোহারা আদায়ের মাধ্যমে নিশ্চুপ ভুমিকা পালন করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ডাইং মালিক ও কর্মচারী জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মনোনীত একজন প্রতিনিধি (দালাল) এর মাধ্যমে বেশ কিছু ডাইংয়ের ইটিপি পরিচালিত হয়। মাসিক চুক্তির মাধ্যমে সেই দালাল, নির্ধারণ করে দেন কোন ফ্যাক্টরীর ইটিপি কখন,কতক্ষণ চালু থাকবে। যদি কখনো ঢাকা বা বিভাগীয় পর্যায়ের তদন্ত দল আসে, তাহলে দালালের মাধ্যমে আগে ভাগে জানিয়ে দেওয়া হয় মালিক পক্ষকে। যদি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আচমকা পরিদর্শনে কোন ব্যক্তি- প্রতিষ্ঠান পরিবেশ দূষণে চিহ্নিত হয়,তাহলে জড়িত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দিলেও তা কেবল কাগজে-কলমে থাকছে।
এ বিষয়ে নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কামরুজ্জামান সরকার মনোনীত ব্যক্তি বা দালালের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমাদের এখানে কাউকে মনোনীত করার কোন সুযোগ নেই। এটা যদি কেউ বলে থাকেন,সেটা মিথ্যা কথা। পরিবেশ আইনে ডাইং ফ্যাক্টরীর ইটিপি পরিচালনা করার দায়িত্ব দেওয়ার কোনো বিধান নেই। আর যারা করছেন তারা দালাল। তাদেরকে চিহ্নিত করার জন্য সহযোগিতা করুন। কবে নাগাদ সর্বশেষ পরিদর্শন করেছেন জানতে চাইলে তিনি অনেকটা উত্তেজিত কন্ঠে বলেন, এ প্রশ্ন সাংবাদিকতার মধ্যে পড়ে না। আমি এ তথ্য আপনাকে দিতে পারবো না। তবে কবে গিয়েছি তা আমার মনে নেই। প্রতিনিধির এমন প্রশ্নের জবাবে পাশ কাটিয়ে তিনি বেশিরভাগ সময় তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কল্পকাহিনী তুলে ধরেন।