ডিআইজি প্রিজন পার্থ গোপালের ৮ বছর কারাদণ্ড

Share the post
দুর্নীতির মামলায় বরখাস্ত হওয়া সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) পার্থ গোপাল বণিকের ৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রোববার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় দেন।রায়ে দুই ধারায় পার্থ গোপাল বণিকের ৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের এক ধারায় তার ৫ বছর কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর ক্ষমতার অপব্যবহারের অপর এক ধারায় ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জব্দকৃত ৮০ লাখ টাকার মধ্যে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত ৬৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের আদেশ দেওয়া হয়। অবশিষ্ট ১৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা আসামি ফেরত পাওয়ার অধিকারী বলে রায়ে বলা হয়েছে। রায়ে দুই ধারায় দেওয়া সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে সব মিলিয়ে আসামির ৫ বছর সাজা ভোগ করতে হবে। তবে মানি লন্ডারিং আইনের আরেক অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন সাবেক এই কারা কর্মকর্তা। রায় ঘোষণার আগে পার্থ গোপালকে কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। রায় ঘোষণার পর তাকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে ফের কারাগারে পাঠানো হয়।
রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানান, এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে পার্থর স্ত্রী ও স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, পার্থ গোপাল বণিক ডিআইজি প্রিজন পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় অনিয়মের মাধ্যমে যে অর্থ উপার্জন করেছিলেন, সেই সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে দুদকে ডাকা হয়। দুদকে ডাকার পর তিনি তা স্বীকার করেন। এরপর তার বাড়িতে অভিযান চালায় দুদক। সেখান থেকে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার হয়েছিল। পরে জেলখানায় থাকা অবস্থায় তিনি কিছু ইনকাম ট্যাক্সের ঘোষণা দিয়ে এটাকে বৈধ করার চেষ্টা করেছেন। আদালত তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে ৬৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বাকি ১৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার আদেশ দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, কেউ তাকে সরাসরি ঘুষ দিয়েছেন এ রকম সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ার কারণে হয়তো আদালত তাকে এক ধারায় খালাস দিয়েছেন।
মামলায় আসামিপক্ষে ছিলেন এহসানুল হক সামাজী। তিনি জানান, এ রায়ের আইনগত প্রশ্নে উচ্চ আদালতে আসামিপক্ষ যথাসময়ে আপিল করবে।মামলা, তদন্ত ও বিচার : ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই ডিআইজি প্রিজন পার্থর বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে ওইদিনই তার বিরুদ্ধে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) মামলাটি করা হয়। মামলা ও গ্রেফতারের পরিপ্রেক্ষিতে একইদিন তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন আদালতে মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। চার্জশিটে বলা হয়, পার্থ বণিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুসের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে নিজ বাড়িতে সংরক্ষণ করছেন বলে তথ্য পায় দুদকের অনুসন্ধান টিম।
২০১৯ সালের ২৮ জুলাই পার্থ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এসে অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য দেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি জানান, তার বাসায় নিজ হেফাজতে ৩০ লাখ টাকা রয়েছে। ওই অর্থের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি কোনো বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি। অর্থাৎ ওই অর্থ তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ অর্থ বলে প্রতীয়মান হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে নিয়ে অনুসন্ধান টিম ঢাকার কলাবাগান গ্রিনরোডে তার আবাসিক বাসায় (ডমিনো প্লানেটা, বি-৬, ২৭-২৮ নর্থ রোড) অভিযান চালায়। অভিযানে তার বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে তিনি সরকারি দায়িত্ব পালনকালে ঘুস, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই অর্থ উপার্জন করেছেন।
২০২০ সালের ৪ নভেম্বর চার্জ (অভিযোগ) গঠনের মাধ্যমে এ মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। ১৬ নভেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ২৪ নভেম্বর আত্মপক্ষ শুনানিতে আদালতের কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন পার্থ। মামলায় ১৪ সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। ২৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করা হয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

ইউনাইটেড চ্যারিটি ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম বিভাগীয় নতুন কমিটি ঘোষণা।

Share the post

Share the postমোঃ রুবেল: ইউনাইটেড চ্যারিটি ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ।স্বেচ্ছায় রক্তদান নিয়ে কাজ করছে সামাজিক সংগঠন’ ইউনাইটেড চ্যারিটি ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলায় ও ৮ বিভাগের চলোমান কর্যক্রম। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটি নিয়ে নতুন পথ চলার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হল। একের কাঁদে অন্য হাত,মানবতার বাঁধন টিকে থাক,এই স্লোগানকে বুকে লালন করে একদণ তরুণ স্বেচ্ছাসেবক মানবতার […]

চন্দনাইশে মানবতার ফেরিওয়ালার পক্ষ থেকে এক নারীকে সেলাই মেশিন উপহার

Share the post

Share the postমোঃ রুবেল খান, চট্টগ্রাম:চন্দনাইশের মধ্যম হাশিমপুর ৪নং ওয়ার্ডের মোজাহের পাড়ার বাসিন্দা মুন্নি নামে এক নারীকে সেলাই মেশিন উপহার দিয়েছে মানবতার ফেরিওয়ালা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নারী উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে স্বাবলম্বী করতে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।