সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা: বিসিএস পরীক্ষা না দিয়েও বিসিএস ক্যাডার হয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হয়েছেন প্রধান তথ্য কমিশনার ড. আবদুল মালেকের কন্যা নাবিলা তাবাসসুম মিকি। জানা যায়, ড. আবদুল মালেক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী থাকাকালীন সময়ে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অধীনে ২০০ নাম্বারের লিখিত (বাংলা, ইংরাজী, সাধারণ জ্ঞান এবং গণিত) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১০০ নাম্বারের মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে ২০১৩ সালের ৩ এপ্রিল নাবিলা তাবাসসুম মিকিসহ ৪৪ জন নন-ক্যাডার পদে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে সহকারী প্রকৌশলী হিসাবে যোগদান করেন। ২০২২ সালের ৮ মে ৪৬.০০.০০০০.০৮৩.১৯.০০১.১৭-১৯৬ নং স্মারকে পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য শিক্ষা সমাপ্ত প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক (চ:দা:) পদ হতে ৩২টি পৌর সভার পানি সরবরাহ ও মানব বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ এনভায়রনমেন্টাল প্রকল্পে নির্বাহী প্রকৌশলী (চ:দা:) পদে পদায়ন লাভ করেন। একই বছরের ২৫ অক্টোবর ৪৬.০০.০০০০.০৮৩.১৯.০০১.১৭-৬৬২ নং স্মারকে জরীপ অনুসন্ধান ও গবেষণা বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী (চ:দা:) পদে তিনি বদলী হন। ২০১৫ সালে ড. আবদুল মালেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পদায়ন লাভ করে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগবিধি, ১৯৮১ সংশোধন ছাড়াই ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারী স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কন্যা নাবিলা তাবাসসুম মিকি সহ ৯৫ জন কর্মকর্তাকে রাজস্ব বাজেটে যোগদানের তারিখ হতে ক্যাডারভুক্তির প্রজ্ঞাপন জারী করেন। নিয়ম বর্হিভূত প্রজ্ঞাপন জারীর বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে রীট পিটিশন দাখিল হয়। মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে রীটের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৯ জুন ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারী তারিখের জারীকৃত প্রজ্ঞাপনটি স্থানীয় সরকার বিভাগ বাতিল করেন।
২০২২ সালের ১৫ জুন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ক্যাডার ভূক্তির প্রজ্ঞাপনের মতো একই রকম আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারী করে নাবিলা তাবাসসুম মিকিসহ ৯০ জন কর্মকর্তাকে বিসিএস (জনস্বাস্থ্য) ক্যাডারভুক্ত করা হয়। সদ্য ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিব-১, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব এবং তথ্য সচিব পদে দীর্ঘদিন কর্মরত থেকে ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর ড. আবদুল মালেক সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের মাত্র ১ মাসের মাথায় ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারী তথ্য কমিশনার (সিনিয়র সচিব) হিসাবে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ লাভ করেন। ২০২৩ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত তিনি তথ্য কমিশনার (সিনিয়র সচিব) হিসাবে কর্মরত থাকার পর ২২ মার্চ প্রধান তথ্য কমিশনার হিসাবে যোগদান করে অদ্যবদি পর্যন্ত উক্ত পদে কর্মরত আছেন। অভিযোগ রয়েছে প্রধান তথ্য কমিশনার ড. আবদুল মালেক দীর্ঘদিন শেখ হাসিনা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ক্ষমতার দাপট খাটিয়ে নিজ কন্যাসহ বহু অবৈধ নিয়োগ ও বদলী বাণিজ্য করেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাবার ক্ষমতার দাপটে নাবিলা তাবাসসুম মিকি চাকরিতে যোগদানের পর থেকে অফিস না করলেও প্রমোশনসহ সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেন। জনরোষে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও বাবা মেয়ে রয়েছেন বহাল তবিয়তে। নাবিলা তাবাসসুম মিকি চাকরিতে যোগদানের পর থেকে অফিস, প্রশিক্ষণ বা কোন সেমিনারে অংশ না নিলেও তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার কেউ সাহস পেতনা। ছাত্র জনতার বিপ্লবের ফলে জনরোষে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নিজেকে নিরাপদ রাখতেই দ্রুত শিক্ষা ছুটি গ্রহণ করেন বলে নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। গত ২২ আগস্ট ২০২৪ তারিখে যথাযথ কতৃপক্ষের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ নামক একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করার জন্য ২৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে ২৪ এপ্রিল ২০২৬ সাল পর্যন্ত ১ বছর ৮ মাসের শিক্ষা ছুটির আবেদন করেন নাবিলা তাবাসসুম মিকি। ২২ আগস্ট ২০২৪ তারিখের আবেদনের প্রেক্ষিতে নাবিলা তাবাসসুম মিকির শিক্ষা ছুটি মঞ্জুরে অনুরোধ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অীধদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহনসাধু খাঁ ৪৬.০৩.০০০০.০০১.১২.৬২৭.১২-৯৫২ নং স্মারকে সচিব বরাবর পত্র প্রেরণ করেন। নাবিলা তাবাসসুম মিকির আবেদন ও প্রধান প্রকৌশলীর অনুরোধপত্রে অধ্যয়নের ব্যয়ভার নিজে বহন করবেন মর্মে উল্লেখ করা হয়।
অথচ, ‘জনপ্রশাসন প্রশিক্ষণ ও উচ্চ শিক্ষা নীতিমালা ২০২৩’ অনুযায়ী উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করার লক্ষ্যে পূর্ণবৃত্তিপ্রাপ্ত হলে বৃত্তিপ্রাপ্ত মেয়াদের জন্য প্রেষণ মঞ্জুর করা হয়। প্রেষণে থাকলে পূর্ণ বেতন- ভাতা পাওয়া যায় কিন্তু শিক্ষা ছুটিতে কেবলমাত্র মূল বেতন পাওয়া যায়। নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বলেন, বিগত সরকারের আমলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। এই দুর্নীতির নেতৃত্বে ছিলেন, বর্তমান প্রধান তথ্য কমিশনার ড. আবদুল মালেক। তিনি একাধারে শেখ হাসিনার একান্ত সচিব-১, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব এবং তথ্য সচিব পদে দীর্ঘদিন কর্মরত থেকে ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের মাত্র ১ মাসের মাথায় ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারী তথ্য কমিশনার (সিনিয়র সচিব) হিসাবে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ লাভ করেন। ২০২৩ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত তিনি তথ্য কমিশনার (সিনিয়র সচিব) হিসাবে কর্মরত থাকার পর ২০২৩ সালের ২২ মার্চ প্রধান তথ্য কমিশনার হিসাবে যোগদান করে অদ্যবদি পর্যন্ত উক্ত পদে কর্মরত আছেন। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলেও প্রশাসনের প্রতিটি দপ্তরে তাঁর বিশ্বস্ত ও অনুগত কর্মকর্তাদের স্বপদে বহাল তবিয়তে রেখে অথবা অন্যত্র বদলী করে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তবর্তী সরকারের সফলতা আসবেনা।