চরভদ্রাসন উপজেলায় অত্যান্ত নিম্নমান সামগ্রী দিয়ে রাস্তা  নির্মানের  অভিযোগ

Share the post
ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি:ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় অত্যান্ত নিম্নমান সামগ্রী দিয়ে এক কি.মি. আয়তনের একটি এইচবিবি রাস্তা (ইটের রাস্তা) নির্মান হচ্ছে বলে ব্যাপক অভিযোগ এলাকাবাসীর। নির্মনাধীন রাস্তাটি হলো-উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদীর এক পারের আরজখার ডাঙ্গী গ্রাম থেকে ফকির ডাঙ্গী গ্রামের জামে মসজিদ পর্যন্ত ৫৪০ মিটার আয়তন এবং পদ্মা নদীর অপর পারে ছমির বেপারী ডাঙ্গী গ্রামের পাগলার বাজার হতে উত্তর দিকে ৪৬০ মিটার সহ মোট এক কি.মি এইচবিবি রাস্তা নির্মান। অত্যান্ত নিম্নমান সামগ্রী দিয়ে নির্মানাধীন রাস্তাটির প্রায় ৯০ শতভাগ সম্পন্ন করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। কিন্তু এ রাস্তা নির্মানকালে অত্যান্ত নিম্নমানের ইট ব্যাবহার, কম পরিমান বালু ও পর্যাপ্ত ভরাট মাটি না দিয়ে নির্মান কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এছাড়া নির্মানাধীন ইটের রাস্তায় তিনটি স্থলে পাইপ কালভার্ট বসানোর শর্ত থাকলেও তা (পাইপ কালভার্ট) নির্মানের মাত্র তিন দিনের মাথায় ভেঙে গেছে বলে জানা গেছে। মোটকথা এতো নিম্নমান সামগ্রী দিয়ে রাস্তাটি করে নির্মান করা হয়েছে যে, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ঢলের পানির চাপে বা স্রোতের কোপে তা এক ধাক্কায় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলার ভাঙন কবলিত পদ্মা পারের চরাঞ্চলের বসতিদের যাতায়াত সুগোম করার লক্ষে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে অধীনে পদ্মা নদীর এপার-ওপার মিলে দুই খন্ডে মোট এক কি.মি এইচবিবি রাস্তা নির্মানের প্রকল্প দেওয়া হয়। গত ২৪ ফেব্রুয়ারী দরপত্র আহবান মূলে ‘মেসার্স শোভন কম্পিউটার’ নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ রাস্তা নির্মানের কাজটি পায়। রাস্তাটি নির্মান কাজের প্রকল্প ব্যায় নির্ধারন করা হয়েছে ৮১ লাখ ১১ হাজার ২৬৫ টাকা। উক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি কার্যাদেশ পাওয়ার পর অত্যান্ত নিম্নমান সামগ্রী দিয়ে রাস্তা নির্মান কাজ সম্পন্ন করতে থাকেন। এ প্রকল্পর প্রায় ৮০ শতভাগ কাজ চলাকালে রাস্তার মধ্যে দিয়ে বসানো পাইপ কালভার্টগুলো ভেঙে পড়লে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ তুলে ধরেন। পরে উর্দ্ধতনরা সরেজমিন পরিদর্শন করে রাস্তাটির নির্মান কাজ কয়েকদিন বন্ধ রেখে পরবর্তিতে ভালো মানের সামগ্রী দিয়ে বাকী কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। কিন্তু নির্মানাধীন ইটের রাস্তাটি ৮০ শতভাগ কাজই হয়েছে অত্যান্ত নিম্নমান সামগ্রী দিয়ে। তাই রাস্তাটি টেকসই হবে না বলে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছেন।
বুধবার উক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স শোভন কম্পিউটার’ এর স্বত্তাধিকারী আঃ রাজ্জাককে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, “রাস্তাটি নির্মানকালে এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ইউএনও সরেজমিনে রাস্তা পরিদর্শন করেছেন এবং পরবর্তিতে রাস্তায় ভালো মানের সামগ্রী ব্যাবহার করা হয়েছে”।
একই দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা খাতুন বলেন, “এলাকাবাসী অভিযোগ করার পর আমি নির্মানাধীন এইচবিবি রাস্তাটি পরিদর্শন করেছি। আমি মূল ঠিকাদারকে ডেকে এনে নিম্নমান সামগ্রী উপরে ফেলে মানসম্মত ইট, বালু ও পর্যাপ্ত ভরাট মাটি ব্যাবহার করতে বলেছি। এমনকি, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকেও আমি একই নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু আমার অজান্তে তারা কি করেছে তা আমি খোঁজ না নিয়ে বলতে পারবো না”। আর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুদেব কৃষ্ণ জানান,“এলাকাবাসীর অভিযোগ পাওয়ার পর নির্মানাধীন রাস্তায় ভালো মানের সামগ্রী ব্যাবহার করা হয়েছে”।
উপজেলার গাজীরটেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াকুব আলী বলেন,“রাস্তাটি আমার ইউনিয়নের সীমানা ঘেষে নির্মান করা হচ্ছে। উক্ত রাস্তা নির্মানের কার্যাদেশে ইটের স্লোপিংয়ের নিচে ছয় ইঞ্চি বালু ফেলে লেয়ার করার নির্দেশ থাকলেও সেখানে দুই ইঞ্চি বালুও ফেলা হয় নাই, রাস্তায় মাটি ভরাটের জন্য ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ আছে কিন্তু রাস্তার পাশ দিয়ে কোনো মাটিই ফেলা হয় নাই। অত্যান্ত নিম্নমান ইট ব্যাবহার করা হয়েছে। ওই রাস্তার মধ্যে নিম্নমান সামগ্রী দিয়ে তিনবার পাইপ কালভার্ট নির্মান করা হয়েছে কিন্তু তা তিনবারই ভেঙে পড়েছে। আর নির্মানাধীন রাস্তায় এখনো পেলাসাইটিং নির্মান করা হয় নাই বলেও তিনি জানান”।আর উক্ত রাস্তার পাশের এক বসতি দীপু খান জানান,“ অভিযোগ পাওয়ার পর ইউএনও স্যার উক্ত রাস্তা পরিদর্শন করে যেসব নির্দেশনা দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার তার একটা কথাও রাখে নাই। ঠিকাদার আপন খেয়াল মতো কাজ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে চলেছে”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

চরভদ্রাসনে ডাম্পিং গ্রাউন্ড না থাকায় নদীতে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, জনদুর্ভোগ চরমে

Share the post

Share the postফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি:ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার ভুবনেশ্বর নদীর তীরে অবস্থিত সদর বাজারে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় বাজারের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষণ, দুর্গন্ধ, জলাবদ্ধতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকির মতো সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাজারের কাঁচাবাজার, মাছ,মাংসের বাজার ও ফলবাজারের প্লাস্টিক বর্জ্য সহ প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যা সরাসরি নদীতে ফেলা […]

চরভদ্রাসনে ম্যাজিস্ট্রেটের আগমনে ওষুধের দোকান বন্ধ, ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

Share the post

Share the postফরিদপুর জেলা প্রতিনিধ -ফরিদপুরের  চরভদ্রাসন উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়তেই উপজেলার অধিকাংশ ওষুধের দোকান হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। এতে সাধারণ রোগী ও ভুক্তভোগীরা ওষুধ কিনতে এসে চরম দুর্ভোগে পড়েন।জানা গেছে, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মেয়াদোত্তীর্ণ, অনুমোদনহীন ও ভেজাল ওষুধ শনাক্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে ম্যাজিস্ট্রেট আসার […]