গোমস্তাপুরে জমি নিয়ে বিরোধে মাহিন্দ্রা চালককে হত্যা: সাবেক খাদ্যমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
ইয়াসিন আরাফাত,চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলায় জমিজমা সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে এক মাহিন্দ্রা চালককে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিচারের দাবিতে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। হত্যাকাণ্ডের এক বছরের বেশি সময় পার হলেও বিচার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি না হওয়ায় এবং আসামিদের প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
শনিবার (৫ জুলাই) বিকেলে গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের আড্ডা-শেরপুর গ্রামের শত শত মানুষ ‘জয়নার হত্যার বিচার চাই’ স্লোগানে রাস্তায় নামেন।
আড্ডা বাজার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শেরপুর এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে বাজার চত্বরে মানববন্ধনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০২৪ সালের ২৪ মার্চ রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে শেরপুর পশ্চিমপাড়ার ফসলী জমিতে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মাহিন্দ্রা চালক জয়নাল আবেদিনকে তুলে নিয়ে যান স্থানীয় যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
তারা তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ফেলে রেখে যায়। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৬ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
নিহত জয়নাল আবেদিন শেরপুর গ্রামের মো. মাহবুবুর রহমানের ছেলে। পেশায় তিনি একজন সাধারণ মাহিন্দ্রা চালক ছিলেন। স্থানীয় সূত্র মতে, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন নেয়ামতপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোতালিব হোসেন বাবার, যিনি ঘটনার সময় এলাকায় প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, জয়নালের হত্যার পরদিনই আসামিরা ভয়ঙ্কর তাণ্ডব চালায়। অন্তত ১১টি দোকান ও বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে। গরু-ছাগলও নিয়ে যায় তারা।
হত্যাকাণ্ড ও তাণ্ডবের ঘটনায় এলাকা জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, এবং সাধারণ মানুষ মুখ বন্ধ করে রাখতে বাধ্য হয়।
বক্তারা অভিযোগ করেন, হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ সময় পরও পুলিশ ও তদন্ত সংস্থা সিআইডি যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। এখনও চার্জশিট দেওয়া হয়নি। আসামিরা প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
অন্যদিকে, নিহত জয়নালের পরিবারকে নিয়মিত প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা মামলা প্রত্যাহার করে নেয়।
এ ব্যাপারে তারা বলেন, “একটি গরিব পরিবারের সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, অথচ প্রভাবশালী আসামিদের কারণে আজও বিচার পাওয়া যায়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্লিপ্ত ভূমিকা আমাদের হতাশ করেছে।”এই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের তালিকায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের নাম উঠে আসায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পুরো ঘটনা।
বক্তারা জানান, তিনি এবং তার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা এই ঘটনার পেছনে পরিকল্পনায় জড়িত। তদন্তে তার নাম বারবার উঠে এলেও আজও তাকে আইনের আওতায় আনা হয়নি।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা হুঁশিয়ারি দেন, “যদি দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় না আনা হয়, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব আমরা।”
এলাকাবাসী প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি করে বলেন, তারা ন্যায়বিচার চান এবং মাহিন্দ্রা চালক জয়নালের পরিবারের পাশে দাড়ানোর আহ্বান জানান মানবাধিকার সংগঠন ও গণমাধ্যমের প্রতি।