ঈশ্বরদীতে ব্যবসায়ী শাকিল হত্যাকান্ডের মূলরহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সহিত জড়িত ০২ জন আসামী আটক।

Share the post

শুভ হাসান পাবনা জেলা প্রতিনিধি : ইং-২৮/০৫/২০২১ তারিখ রাত্রী অনুমান ১০.৩০ ঘটিকার সময় ঈশ্বরদী থানা পুলিশের নিকট সংবাদ আসে যে, ঈশ্বরদী থানাধীন রূপনগর কলেজপাড়া মহল্লায় জনৈক আহসান হাবীব এর বাড়ীর ২য় তলার ভাড়াটিয়া শাকিল আহমেদ (৩৫), পিতা-মোঃ ইব্রাহিম হোসেন প্রাং, সাং-দুবলাচারা (পতিরাজপুর), থানা-ঈশ্বরদী, জেলা-পাবনা খুন হইয়াছে। পুলিশ উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হইয়া দেখিতে পান যে শাকিলের মরদেহ তাহার শয়ন কক্ষের বিছানার উপরে চিৎ অবস্থায় পরে আছে এবং তাহার স্ত্রী মোছাঃ মিম খাতুন (২০) শাকিলের মৃতদেহের পার্শ্বে বসে আছে। মৃতের স্ত্রী মিম জানান রাত্রী অনুমান ০৮.০০ ঘটিকার সময় ০২জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি শাকিলের ভাড়া বাসায় আসিয়া শাকিলকে ডাকাডাকি করিলে শাকিলের স্ত্রী মিম ঘরের দরজা খুলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আসামীদ্বয় জোরপূর্বক ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া মিমকে পরপর ০২টি থাপ্পর মারে এবং বুকের নিচে একটি লাথি মারিলে মিম অজ্ঞান হয়ে যায়। শাকিলের স্ত্রী ইং-২৮/০৫/২০২১ তারিখ রাত্রী অনুমান ০৯.০০ ঘটিকার সময় জ্ঞান ফিরে দেখতে পায় তাহার হাত,পা ও মুখ কাপড় দ্বারা বাঁধা এবং ঘরের দরজা বাহির থেকে আটকানো। মিম তার হাত-পা বাঁধা অবস্থায় প্রতিবেশিদের সাহায্য পাবার আশায় প্রায় একঘন্টা যাবত দুই পা দিয়ে ঘরের দরজা ও ওয়ারড্রপে লাথি মারিয়া শব্দ করিতে থাকে। রাত্রী অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় উক্ত বাড়ীর মালিকের স্ত্রী মোছাঃ নাজমা বেগম ২য় তলায় শব্দ শুনিয়া শাকিলের দরজার নিকট গিয়ে দেখতে পান যে ঘরের দরজার বাহির থেকে ছিটকিনি লাগানো। তাহা দেখিয়া নাজমা বেগম শাকিলের ঘরের দরজার ছিটকিনি খুলিয়া দরজার পার্শ্বে শাকিলের স্ত্রী মিম হাত,পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় পরে থাকতে দেখেন। তখন নাজমা বেগম মিমের হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেন এবং চিৎকার করিয়া প্রতিবেশিদের ডাকেন। শাকিলের শয়ন কক্ষে গিয়া খাটের বিছানার উপর শাকিলের মৃতদেহ চিৎ অবস্থায় পরে থাকতে দেখেন। শাকিলের মৃতদেহের ডান কাঁধের উপরে সামান্য ছেলা জখম ব্যতীত অন্যকোন জখম দেখা যায় নাই। এই ঘটনার বিষয়ে মৃত শাকিলের মামা মোঃ কোরবান আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

শাকিলকে হত্যার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ সুপার, পাবনা জনাব মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান, বিপিএম, মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় জনাব, মোঃ মাসুদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) ও জনাব,মোঃ ফিরোজ করিব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ঈশ্বরদী সার্কেল, পাবনার নেতৃত্বে অফিসার ইনচার্জ মোঃ আসাদুজ্জামান, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ হাদিউল ইসলাম সহ পুলিশের একটি চৌকশ টিম কাজ শুরু করিলে বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করিয়া ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ঘটনাটি উদঘাটনসহ ০২জন আসামীকে গ্রেফতার করেন। তদন্তকালে জানা যায় যে, মৃত শাকিলের স্ত্রী মিম এর সহিত শাকিলের ছোট ভাই সাব্বির এর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক রহিয়াছে। এছাড়া শাকিলের সহিত শাকিলের পিতা-মাতা ও ভাইয়ের জমিজমা ও পুকুরে মাছ চাষের ভাগাভাগি লইয়া বিরোধ তৈরী হওয়ায় শাকিল একই বাড়ীতে অবস্থান করিয়া আলাদা ভাবে সংসার শুরু করে। শাকিল তার স্ত্রী মিম ও সাব্বির এর পরকীয়ার বিষয়টি আঁচ করতে পারিয়া শাকিলের স্ত্রী মিমকে তাহার দেবর সাব্বির এর সহিত কথা বলিতে নিষেধ করিয়া দেয়।

কিন্তু সাব্বির গোপনে একটি মোবাইল ফোন মিমকে দেয় যা মিম লুকিয়ে রেখে শুধু মাত্র সাব্বির এর সাথেই গোপনে কথা বলিতো এবং প্রায় সময়ে তারা বাড়ী ফাঁকা পেলে ঘনিষ্ট ভাবে মিশতো। সাম্পতিক সময়ে আরো কিছু বিবাদকে কেন্দ্র করে একপর্যায়ে শাকিল গত ইং-১৯/০৫/২০২১ তারিখ তার স্ত্রীকে লইয়া ঈশ্বরদী থানাধীন রূপনগর কলেজপাড়া মহল্লায় জনৈক আহসান হাবীব এর বাড়ীর ২য় তলায় ভাড়াটিয়া হিসাবে উঠে। ইহাতে মিম এবং সাব্বির একে অপরের থেকে কিছুটা দূরে চলে যাওয়ায় তারা উভয়ই শাকিলের প্রতি মনেমনে ক্ষিপ্ত হয় এবং শাকিলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

উক্ত পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শাকিলের স্ত্রী মিম ইং-২৭/০৫/২০২১ তারিখ রাত্রী অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় পানির সঙ্গে তিনটি ঘুমের ট্যাবলেট গুড়া করে মিশিয়ে শাকিলকে খাওয়ায়। ইং ২৮/০৫/২০২১ তারিখ শাকিল সারাটা দিন ঘরের মধ্যে শুধু ঘুমাইতে থাকে। সাব্বির ইং-২৮/০৫/২০২১ তারিখ সন্ধ্যার পর শাকিলের ভাড়া বাসায় যাবে মর্মে পূর্বেই মিমকে মোবাইল ফোনে জানাইয়াছিল। ঐদিন সন্ধ্যার পরে সাব্বির গোপনে শাকিলের বাসায় যায়। তখনো শাকিল ঘুমের ঔষধের প্রভাবে খাটের উপর শুয়ে ঘুমাচ্ছিল। সাব্বির এবং মিম পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শোফাসেট এর কুশন বালিশ লইয়া শাকিলের শয়ন কক্ষে প্রবেশ করিয়া শাকিলকে ঘুমন্ত অবস্থায় নাকে-মুখে বালিশ চাপা দিয়া শ্বাসরোধ করিয়া হত্যা করে। শাকিলকে অতিরিক্ত ঘুমের ঔষধ খাওয়ানোর ফলে শাকিল তেমন কোন প্রতিরোধ করিতে পারেনি। আসামী মিম ও সাব্বির ভিকটিম শাকিলকে হত্যা করিয়া বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামী সাব্বির ওড়না দিয়ে মিম এর দুই পা, শাকিলের পাঞ্চাবী দিয়ে মিম এর দুই হাত এবং মিমের পরিহিত ওড়না দিয়ে মিম এর মুখ বেঁধে বাহির দরজার নিকট রেখে ঘরের দরজাটি বাহির থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়।

এ সময় সাব্বির মিমের সঙ্গে গোপনে কথা বলার জন্য তাকে দেয়া মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায় এবং বাসার মেইন গেইটের চাবি বাসা থেকে নিয়ে গিয়ে মেইন গেইট খুলে বের হয়ে যাওয়ার সময় চাবিটি একবাসা পরে প্রাচীরের দেওয়ালের উপর রেখে দেয়। এই সংক্রান্তে আসামী মিম ও সাব্বিরকে গ্রেফতার করা হয়। সাব্বির এর নিকট থেকে মিম এর কথা বলার উক্ত গোপন মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। মিম এর দোষস্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় বিজ্ঞ আদালতে রের্কড করা হইয়াছে। এই ঘটনার সহিত আরো কোন আসামী জড়িত আছে কি না, তাহা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আসামী সাব্বির কে চারদিনের পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলাটি তদন্ত সমাপ্ত করে বিজ্ঞ আদালতে অভিযুক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

চোরাচালান, মাদক দমন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোন

Share the post

Share the postমোঃ সামিরুজ্জামান, প্রতিনিধি চ্যানেল ২১: বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের সুবিশাল সমুদ্র, উপকূলীয় এবং নদী তীরবর্তী অঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এ অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, জনগণের জানমালের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, চোরাচালান ও মাদক দমন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা থেকে শুরু করে নানামুখী দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে […]

‎নবীগঞ্জে গলায় ফাঁস দিয়ে এক যুবকের আত্মহত্যা

Share the post

Share the post স্বপন রবি দাশ,হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের পশ্চিম জাহিদপুর গ্রামের তানভীর আহমেদ (৩০) নামে এক যুবক নিজ রুমে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি মৃত সিরাজ মিয়ার পুত্র। ‎স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্র জানায়, শুক্রবার রাতের দিকে তানভীর নিজের রুমে ঘুমাতে যান। শনিবার সকাল ৯টার দিকে রুমের দরজা না খোলায় পরিবারের সদস্যরা […]