ঈমানের পরীক্ষা আল্লাহর অফুরন্ত রহমত প্রাপ্তির মাধ্যম – অধ্যক্ষ ছৈয়্যদ মুনির উল্লাহ্

Share the post
ডেস্ক নিউজ, চট্টগ্রাম।
যুগে যুগে ইসলামের ইতিহাসে আল্লাহ ও রাসুল (দঃ) এর পথে মতে যাঁরা নিজেদের নিয়োজিত করেছেন সকলকেই কঠিন পরীক্ষা ও মুসিবতের মাধ্যমে জীবন কাটাতে হয়েছে কিন্তু সুখের বিষয় হলো এ পথের কঠিন বাস্তবতায় আল্লাহর দয়া সর্বক্ষনে ছিলো। ধৈর্য ধারণকারীর সাথে স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্বক্ষণ সাথী হয়ে থাকেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।
দ্বীনের পথে দাওয়াত দিতে গিয়ে স্বয়ং রাসুল (দঃ) তায়েফের জমিনে রক্তাক্ত হয়েছিলেন, আপন জন্মভূমি ত্যাগ করতে হয়েছিল, শেবে আবু তালেবে তিন বছর নির্জনে কাটাতে হয়েছিলো, তীব্র কষ্টে ধৈর্যধারনের মধ্য দিয়ে পাড়ি দিতে হয় জীবনের বেশিরভাগ সময় এমন দুঃখ কষ্টের ভিতরে লুকিয়ে থাকে জান্নাতের হাতছানি।
এত বাধা, দুঃখ কষ্ট একমাত্র আল্লাহর পথে চলতে গিয়ে এখানে দুনিয়াবি কোন স্বার্থ ছিলোনা সময়ের পরিক্রমায় গাউছে আজমের তরিক্বতেও এমন পরীক্ষা, ত্যাগ তীতিক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে কারণ হকের পথে বাধা আসবে, জুলুম নির্যাতনের কষ্ট আসবে কারণ উনি খলিলুল্ল্হা, খলিফাতুর রাসুল এসব কিছু চৌদ্দশত বছর আগের সুন্নত আল্লাহর অনুগ্রহে বর্তমানে বাস্তবায়িত হচ্ছে আপাত দৃষ্টে কষ্ট মনে হলেও প্রকৃত পক্ষে এ কষ্ট মহামুক্তির সুসংবাদ, নিয়ামতের আধার। হযরত গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সমস্ত জীবন কষ্টের মহাসমুদ্র পাড়ি দিয়েছেন ধৈর্যের মাধ্যমে, সবরে জামিলের অনুপম দৃষ্টান্ত যেন উনার পবিত্র জীবন, উনি রাসুলনোমা মুর্শেদ প্রিয় রাসুল (দঃ) এর পথ ধরে চলেছেন আজীবন তাই উনার পথেও ঈমানের পরীক্ষা সীমাহীন, এতো আনন্দের বিষয় ইনশাআল্লাহ এ পথের দুনিয়াতে মহা পুরষ্কার হলো খাতেমা বিল খায়ের তথা ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করা, প্রিয় রাসুলের দিদার লাভের সৌভাগ্য, দুঃখ কষ্ট ভোগ করার মাধ্যমে সুন্নাতে রাসুল (দঃ) আদায়ের মহা সুযোগ।
হযরত গাউছুল আজম সমস্থ জীবন খুব সাধারন বেশে কাটিয়েছে গেছেন ছিল না অর্থ বিত্ত ক্ষমতা যশ খ্যাতির মোহ উনার একমাত্র লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছিলো আল্লাহ এবং রাসূল (দঃ) কে রাজি খুশি করানো। যার জন্য সমস্ত জীবন দিনে রাতে কেঁেদছেন, তরিক্বত ও মাদ্রাসার খেদমতে নিরলস ত্যাগ ও শ্রম দিয়ে গেছেন। উনিই বলেছেন এ তরিক্বতকে আমি নবীর কাছে সোপর্দ করেছি। বস্তুত পক্ষে এ তরিক্বতে আসা সহজ হতে পারে কিন্তু এখানে টিকে থাকতে গেলে পরিক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয় কারণ আল্লাহ কোরআনের সুরা বাকারার ১৫৫ নং আয়াতে বলেছেন “আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ জীবন ও ফল ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা করিব, তুমি সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলগণকে”। আল্লাহকে পাবার এ পথে পরীক্ষাতো থাকবেই কারণ আল্লাহ নিজেই বলেছেন পরীক্ষা নেবেন। মনে রাখতে হবে সবরকারীর সাথে স্বয়ং আল্লাহ থাকেন। হযরত গাউছে আজম আল্লাহর রঙে রঙিন, নবীর মুহাব্বতে নিজেকে বিলীন করেছেন, উনি কোরআনকে ধারণ করেছেন নিজের মাঝে এবং কোরআনের নূরকে বিশ^ময় ছড়িয়ে দিয়েছেন ফয়েজে কোরআনের মাধ্যমে।
হযরত গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন, ‘তিনটি জিনিস তোমাদের কাছে আমানত রেখে যাচ্ছি কাগতিয়া মাদরাসা, আমার তরিক্বত এবং তোমাদের ঈমান’। এখানে ঈমানের কথা বলেছিলেন কারণ ঈমান রক্ষার জন্য যে পরীক্ষা আমাদের উপর আসবে সেটা উনি উনার গাউছিয়্যতের দৃষ্টিতে আগেই দেখেছেন। উনি আমাদের শিখিয়ে গেছেন এখলাস ও সবরের মাধ্যমে কিভাবে জীবন কাটাতে হয়। উনার সমস্ত জীবনই খুলছিয়ত ও লিল্লাহিয়তের উপর প্রতিষ্ঠিত। এখন আমাদের একটাই দায়িত্ব এখলাসের সাথে তরিক্বতের পথে দায়েম ও কায়েম থাকা। সফলতা দানের মালিক একমাত্র আল্লাহ আর গাউছুল আজমের সব কথা ও কাজ তৌহিদ প্রতিষ্ঠার জন্য, এ পথের আলো হলো প্রিয় রাসুলের মুহাব্বত। ইনশাআল্লাহ, আঁধার শেষে নতুন সকাল আসবেই, পৃথিবীর প্রান্ত হতে প্রান্তে এ মকবুল তরিক্বত পৌঁছে যাবে স্বমহিমায় এতো গাউছুল আজমের দোয়া নিঃসন্দেহে যা কবুল হবেই।
১৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বাদে জুমা হতে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদের গাউছুল আজম সিটিতে ঐতিহাসিক গাউছুল আজম কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের মহান মোর্শেদ আওলাদে রাসূল হযরতুলহাজ্ব আল্লামা অধ্যক্ষ শায়খ ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ্ আহমদী মাদ্দাজিল্লুহুল আলী এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট সদস্য ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য গাউছুল আজম কনফারেন্সে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামীলীগ এর দপ্তর সম্পাদক আলহাজ্ব মোহাম্মদ নূর খাঁন, প্রফেসর ড. জালাল আহমদ, জালালাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ¦ মুহাম্মদ শাহেদ ইকবাল বাবু, কাউন্সিলর আলহাজ¦ মুহাম্মদ মোবারক আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ সরোয়ার কামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান।
বক্তব্য রাখেন হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আবু বকর, মাওলানা মুহাম্মদ রকিব উদ্দিন, মুহাম্মদ সালাউদ্দীন, মাওলানা মুহাম্মদ এরশাদুল হক, মাওলানা মুহাম্মদ জসিম উদ্দীন নূরী প্রমূখ।
অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড: জালাল আহমদ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন জালালবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ্ব মোহাম্মদ সাহেদ ইকবাল বাবু, মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি মুহাম্মত সালাহ উদ্দীন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব সরোয়ার কামাল, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান।
আজকের কনফারেন্স এর বিশেষ অতিথি, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন এর মহাসচিব হযরতুলহাজ¦ অধ্যক্ষ আল্লামা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী ছাহেবের শশুর এর মৃত্যুতে কনফারেন্স এর প্রধান অতিথি মহোদয় গভীরভাবে শোক প্রকাশ করেছেন। পবিত্র ফাতেহা শরীফ পাঠের মাধ্যমে উনার রূহের মাগফেরাত কামনা করা হয়।
প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর বলেন, যুব সমাজ হচ্ছে একটি দেশের প্রাণশক্তি। সেই যুব সমাজকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে আল্লাহ ও রাসূলের দেখানো পথে এবং মতে পরিচালিত করে দেশকে এগিয়ে নিতে অবদান রেখে চলেছেন কাগতিয়া দরবার শরীফ।
কনফারেন্সে যোগদানের উদ্দেশ্যে সকাল থেকেই চট্টগ্রামের আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, সীতাকুন্ড, বোয়ালখালী, আনোয়ারা পটিয়া ছাড়াও রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, মহেশখালী থেকে গাড়িযোগে কাগতিয়া দরবারের অসংখ্য অনুসারী, ভক্ত ও সাধারণ মুসলমানেরা কনফারেন্সস্থলে আসতে থাকে। চট্টগ্রাম ছাড়াও ফেনী, কুমিল্লা, বি.বাড়িয়া, চাঁদপুর ও ঢাকা থেকেও কাগতিয়া দরবারের হাজার হাজার অনুসারী ও মুসলমানেরা উপস্থিত হন। কনফারেন্সে যোগদানের জন্য শুধু দেশের নয়, বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সৌদিআরবসহ ওমান, কাতার, কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, আবুধাবী, শারজাহ্ হতেও কাগতিয়া দরবারের অনুসারী সপ্তাহখানেক পূর্ব থেকে বাংলাদেশে আসেন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আলোকসজ্জিত করা হয় এবং চট্টগ্রামের প্রায় সকল প্রবেশমুখে ও বিভিন্ন উপজেলায় উত্তোলন করা হয় তোরণ। মাগরিবের আগেই কনফারেন্সস্থল গাউছুল আজম কমপ্লেক্সের বিশাল ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে জনসমুদ্রে রূপ নেয়।
মিলাদ ও কিয়াম শেষে প্রধান অতিথি দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ্র ঐক্য, সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি, অসহায় নির্যাতিত মুসলমানদের হেফাজত এবং দরবারের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আন্হুর ফুয়ুজাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

রাউজানে সাবেক স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আজিজুল হকের উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল

Share the post

Share the post মিলন বৈদ্য শুভ, রাউজান চট্টগ্রাম: পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে দোয়া ও ইফতার মাহফিল রাউজান উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ সভাপতি মোহাম্মদ আজিজুল হকের আয়োজন ও সভাপতিত্বে ২৩ রমজান ২৪ মার্চ সোমবার ২নং ডাবুয়া ইউনিয়নস্থ হিঙ্গলা হযরত মুছা শাহ (রঃ) এর মাজার সংলগ্ন মাঠ প্রাঙ্গণে যথাযোগ্য মর্যাদায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠক মাওলানা মোহাম্মদ কামাল উদ্দিনের […]

শ্রীশ্রী জ্বালাকুমারী মাতৃমন্দিরে অষ্টপ্রহরব্যাপী মহোৎসব উদযাপিত

Share the post

Share the postমিলন বৈদ্য শুভ, রাউজান, চট্টগ্রাম: দক্ষিণ রাউজানের উত্তর গুজরা  সবুজ সংঘ কর্তৃক পরিচালিত সার্বজনীন শ্রীশ্রী জ্বালাকুমারী মাতৃমন্দিরে অনুষ্ঠিত হলো বর্ণাঢ্য অষ্টপ্রহরব্যাপী মহানাম যজ্ঞ ও বাৎসরিক পূজা মহোৎসব। ২১, ২২ ও ২৩ মার্চ তিন দিনব্যাপী আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় নানা আচার-অনুষ্ঠান, যার মধ্যে ছিল মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, নগরকীর্তন, শ্রীমদ্ভগবদগীতাপাঠ, […]