ইচ্ছেমতো ফি বাড়াচ্ছে রাজধানীর স্কুলগুলো, জিম্মি অভিভাবকরা
নতুন বছরে রাজধানীর স্কুলগুলোতে বেতনসহ বিভিন্ন ফি বাড়ার হিড়িক লেগেছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রতিবছর এমন ফি বৃদ্ধিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়ম মেনেই তারা বেতনসহ বিভিন্ন ফি বাড়াচ্ছে। প্রশাসন বলছে, অনুমোদন না নিয়েই এসব ফি বাড়ানো হচ্ছে। প্রমাণ পেলে টাকা ফেরত দেয়াসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল। নিয়ম থাকলেও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা না বলেই ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনবার বেতন বাড়িয়েছে। সেশন ফি, ওয়াসা বিদ্যুৎসহ নানা ফির পাশাপাশি প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বেতন বাবদ এবার বাড়তি গুণতে হবে প্রায় আড়াই হাজার টাকা। এ নিয়ে নানা অভিযোগ স্কুলটির বনশ্রী শাখার অভিভাবকদের।
এক অভিভাবক বলেন, অভিভাকদের সঙ্গে আলোচনা না করেই ১শ’ থেকে ২শ’ টাকা করে প্রতি বছর তারা বেতন বাড়াচ্ছে।
আরেক অভিভাবক বলেন, এভাবে প্রতি বছর বেতন বাড়ালে তো আমাদের জন্য সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।
আরও একজন অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, একজন ছাত্র আজ ৪ বছর ধরে এখানে পড়ছে। এখন তাকে আবার অতিরিক্ত ৮ হাজার টাকা দিয়ে রিঅ্যাডমিশন নিতে হয়।
এ বিষয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ক্যামেরায় কথা বলতে রাজি হননি। তবে একে স্কুলের প্রধান অকপটেই স্বীকার করলেন বেতনসহ সেশন ফি বাড়ানোর বিষয়টি।
ঢাকা একে উচ্চ বিদ্যালয় অধ্যক্ষ মো. ফজলুল হক বলেন, ৬ষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত গত বছর ছিল ৬ হাজার টাকা। বেতন ছিল ৬৫০ টাকা। মোট খরচ ছিল ৬ হাজার ৬৫০ টাকা। এ বছর আমরা করেছি বেতন চার্জ ৬৬০০ টাকা, আর মাসিক বেতন ৭০০ টাকা। মোট খরচ ৭ হাজার তিনশত টাকা।
অধিকাংশ স্কুলে বেতন ও ফি বাড়ালেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৬ সালের পরিপত্র অনুযায়ী জেলা প্রশাসনের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা মানে না কোনো স্কুলই।
ঢাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ফারজানা জামান বলেন, জেলা শিক্ষা অফিসারের কাজ থেকে এখন পর্যন্ত আমি কোনো ধরনের সুপাশি কিংবা আবেদন পাইনি। এখানে অনুমোদনের তো কোনো প্রশ্নই আসে না।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বলছেন, নিয়ম বহির্ভূত ফি ও বেতন আদায়ের বিরুদ্ধে ১৬টি টিম মনিটরিং করছে। প্রমাণ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, যদি তারা কৌশল করে চাপ দিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে। তাহলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব। যদি এ রকম অতিরিক্ত ফি নিয়ে থাকে, তাহলে আমরা তাদের বাধ্য করব তারা যেনো অভিভাবকদের এ টাকা ফেরত দিয়ে দেয়।
ঢাকা মহানগরিতে এমপিও ও ননএমপিও মিলে বেসরকারি প্রায় ৩৫১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সন্তানের স্কুলের সেশন চার্জ বেতন ছাড়াও নানা ফির জাতাকলে পিষ্ট অভিভাবকরা। শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ফি যেন অন্তরায় না হয় সেটি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।