আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।
আজ ১০ জানুয়ারি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এদিন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে জাতির অবিসংবাদিত নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন।
একাত্তরের ২৫শে মার্চ অপারেশন সার্চ লাইট শুরুর পর পরই ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু। বাঙালি যখন স্বাধীনতার জন্য লড়ছে, তিনি তখন মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে। চূড়ান্ত বিজয়ের পর, আন্তর্জাতিক চাপে, ৮ জানুয়ারি তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি জান্তা।২৯০ দিন কারাবাসের পর বিশেষ ফ্লাইটে ৮ জানুয়ারি যান লন্ডনে। পরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বিশেষ বিমানে ৯ জানুয়ারি যাত্রা করেন দেশের পথে দিল্লী হয়ে ঢাকা ফেরেন। সেখানে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ দেশটির জনগণের কাছ থেকে পান উষ্ণ সংবর্ধনা। বক্তৃতায়, মুক্তিযুদ্ধে তাদের সহযোগিতার জন্য জানান কৃতজ্ঞতা।
পরে দূরদর্শী কূটনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে ইন্দিরা গান্ধীকে অনুরোধ করেন, তার সৈন্যদের ফিরিয়ে নিতে।
১০ জানুয়ারি দুপুরে ঢাকায় পৌঁছানোর পর আনন্দে আত্মহারা লাখো মানুষ বিমানবন্দর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত স্বাগত জানায় প্রাণপ্রিয় নেতাকে। বিকেল পাঁচটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রায় ১০ লাখ লোকের সামনে ভাষণ দেন বাঙালির অবিসংবাদিত এই নেতা।
পরের দিন দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে এভাবেই লিখা হয়, ‘স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নামলো তার দু’চোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ বাতাস।
জনগণ-মন-নন্দিত শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তার ঐতিহাসিক ধ্রুপদী বক্তৃতায় বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারবো কি-না। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’
সশ্রদ্ধচিত্তে তিনি সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন, সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ এক বিবৃতিতে মঙ্গলবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আয়োজিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভাসহ সকল কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের জন্য দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীসহ সংগঠনের সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সদ্য স্বাধীন দেশে এই অলিখিত ভাষণটি সেদিন তিনি দিয়েছিলেন, তা ছিল রাষ্ট্রনায়কোচিত ও দিকনির্দেশনামূলক। ইতিহাসবিদেরা আরো বলছেন, বঙ্গবন্ধু সেদিন দেশ গড়ার যে দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন তা মেনেই অর্জন হতে পারে সামগ্রিক উন্নয়ন।
এদিকে দিবসটি পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা জানান। এসময় কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার মহান স্থপতির প্রতি সম্মান জানান প্রধানমন্ত্রী।
পরে সাড়ে আটটায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কেন্দ্রীয় নেতারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে জাতির পিতার প্রতিকৃতির বেদি।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।