অফডকের ১৬৬ কনটেইনার পণ্য রপ্তানি এখনো অনিশ্চিত
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চট্টগ্রাম থেকে রাশিয়াগামী ১৬৬ টিইইউস কনটেইনার পণ্য রাশিয়ার বন্দরে রপ্তানির বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত। মূলত বিদেশি সব শিপিং কোম্পানিগুলোর রাশিয়াগামী জাহাজ সার্ভিস বন্ধ রাখায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। দেশের ৯টি বেসরকারি অফডকে থাকা কনটেইনার বুকিং না নেওয়ায় দীর্ঘদিন একই স্থানেই পড়ে রয়েছে। এরমধ্যে ভার্টেক্স ডিপোতে ৪২ টিইইউস, পোর্ট লিংক ডিপোতে ৩৮ টিইইউস, ইসহাক ডিপোতে ৩৫ টিইইউস, কেডিএস ডিপোতে ১৮ টিইইউস, শফি ও বিএম কনটেইনার ডিপোর প্রতিটিতে ১২ টিইইউস, ওসিএল ডিপেতে ৫ টিইইউস, এসএপিএল ও ইস্পাহানি সামিত এ্যলায়েন্স ডিপোর প্রতিটিতে ২ টিইইউস করে মোট ১৬৬ টিইইউস কনটেইনার পড়ে রয়েছে। ফলে এগুলো ঠিক কবে রাশিয়ায় পাঠানো সম্ভব হবে তা অনিশ্চিত।
দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত তৈরি পোশাকশিল্পের পণ্যই রয়েছে ওইসব কনটেইনারে। আন্তর্জাতিক বড় বড় শিপিং কোম্পানিগুলো রাশিয়ায় পণ্য পরিবহন বন্ধ ঘোষণার প্রভাবে চট্টগ্রামের বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলোতে আটকা পড়ে আছে এই রপ্তানির পোশাকগুলো। শিপিং এজেন্টসগুলোর মতে, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান মেডিটেরিয়েন শিপিং কোম্পানি, মায়ের্কস, হ্যাপাগ লয়েড এবং ওয়ান লাইন গত ১ মার্চ থেকে রাশিয়ায় পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা দেয়। অন্য শিপিং কোম্পানিগুলোর মধ্যে যারা এখনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি তারাও পণ্য বুকিং নিচ্ছে না। তাছাড়া সুইফটে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞার কারণেও পণ্য পরিবহন বিল পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়াতে অনেক শিপিং কোম্পানি এখন রাশিয়া-ইউক্রেনগামী পণ্য বুকিং নিতে চাইছে না।
বেসরকারি আইসিডিগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর্টস এসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রামের বেসরকারি ১৯টি কনটেইনার ডিপোর মধ্যে এ পর্যন্ত ৯টি ডিপোতে রাশিয়াগামী রপ্তানিপণ্যের ১৬৬ কনটেইনার চালান আটকে আছে। দেশের বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানা থেকে রপ্তানির এসব পণ্য ডিপোগুলোতে এসেছে। শিপিং কোম্পানিগুলো বুকিং না নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার আগেই রাশিয়াতে রপ্তানির উদ্দেশ্যে এসব পণ্য ডিপোগুলোতে এসেছিল। বুকিং বন্ধ ঘোষণার পর গার্মেন্টস কোম্পানিগুলোও আর পণ্য পাঠাচ্ছে না। আপাতত এসব পণ্য তাদের কারখানায় রাখছে।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, কনটেইনার নিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেনের বন্দরে গেলে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে খালাস হবে কি না এবিষয়ে মেইন লাইন অপারেটরগুলোর মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। মূলত তারা বিষয়টি কিছুদিনের জন্য পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু এদিকে অফডকে ব্যবসায়ীদের কনটেইনার ভর্তি পণ্য পড়ে থাকায় তাদের পোর্ট ডেমারেজের আশঙ্কা রয়েছে। ফলে তারা বিশাল অংকের ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদমিরি পুতিন। এরপর থেকে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এ কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব পড়া শুরু হয়েছে। জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানিকারকেরা।