সখিপুরে এগিয়ে যাচ্ছে হতেয়ার “গ্রন্থকুঞ্জ”
মাসুদ পারভেজ, স্টাফ রিপোর্টার : ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ সংক্ষেপে যাকে সিডিএফবি নামে সবাই চিনে। এই সিডিএফবির বিশেষ প্রজেক্ট গ্রন্থাগার থেকে গ্রন্থকুঞ্জ স্থাপিত হয়েছে টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার হতেয়া গ্রামে। চারিদিকে জঙ্গল অথচ অন্যান্য এলাকার থেকে এ গ্রাম একধাপ এগিয়ে। নেই পাকা রাস্তা অথচ প্রাইমারি, মাদ্রাসা, হাই স্কুল, কলেজ সবই আছে এই গ্রামে, শুধু নেই পাঠাগার। কিন্তু এই কথাটা এখন আর সত্য নয়, এখন শুধু পাঠাগারই না স্থাপিত হয়েছে একটি সৃজনশীল পাঠাগার গ্রন্থকুঞ্জ। যেখানে প্রতি সপ্তাহে একদিন শিশুদের হাতের লেখা শেখানো হয়, দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বুক ব্যাংক, আবৃত্তি, গান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও ছবি আঁকাসহ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি সংক্রান্ত নানামুখী কর্মসূচি। যে সকল পাঠক গ্রন্থকুঞ্জে বসে পড়তে পারে না তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ সুযোগ। এক সপ্তাহের জন্য শর্তসাপেক্ষে বই নিতে পারেন বাড়িতে। এতে গ্রন্থকুঞ্জ আশপাশের গৃহিণীদের নজরে পড়েছে বেশ। সিডিএফবি প্রতিষ্ঠাতা এ আর আহম্মেদ সুজন জানান, প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ সুযোগের অভাবে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তেমনি সেখানে একজন পাঠক সহজেই কোন বই হাতের কাছে পায় না। সংগ্রহ করতে হয় শহরতলি বা জেলা শহর থেকে। এজন্য তারা বই পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আমরা এই সুযোগটা তাদের দিয়ে যেতে চাই যাতে তারা সহজেই হাতের কাছে বই পান। শুধু সাহিত্যের বইয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে আমরা সাংস্কৃতিক নানা কর্মসূচি করে থাকি। এছাড়া কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের দিকে বিশেষ নজর দেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য-উপাত্ত দিয়ে। গ্রন্থকুঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মাসুম রানা জয় বলেন, আমরা চাই একটি প্রগতিশীল সমাজ গড়ে তুলতে। যেখানে কোন অন্যায় রেষারেষি থাকবেনা, থাকবেনা কোন মূর্খতা। মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো থাকবে, সুন্দর একটি দেশ তৈরি হবে। এমন একটি লাইব্রেরি পেয়ে এলাকাবাসীরা খুবই খুশি। তারা উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ ও শুভকামনা জানান। গ্রন্থকুঞ্জের সদস্য মীম, জুঁই ও ইমন জানায়, আমরা একাডেমিক বইয়ের বাইরে বই পড়ার তেমন সুযোগ পেতাম না। কিন্তু গ্রন্থকুঞ্জ এখন হাতের মুঠোয়, আমরা চাইলেই পড়ে উঠতে পারছি নানা ধরনের বই এরমধ্যে গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, বিজ্ঞান বিষয়ক বই, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক বইসহ ইসলামি ইতিহাস ও সংস্কৃতি উল্লেখযোগ্য। এ বিষয়ে গ্রন্থকুঞ্জের সভাপতি ও হতেয়া ডিগ্রী কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্রী জুঁই বলেন, এখান থেকে আমরা সবাই উপকার পাচ্ছি কারণ এখানে বিনামূল্যে বই পড়া ও বাড়িতে নিয়ে যাওয়া যায়। এখান থেকে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের জ্ঞান বিকাশ হচ্ছে। এ আর আহম্মেদ সুজন আরও জানান, গতবছর ১২ সেপ্টেম্বর ছোট্ট একটি রুম নিয়ে যাত্রা শুরু গ্রন্থকুঞ্জের। এই কয়েকমাসে এই ঘরে পাঠকের চাহিদা এত বেড়েছে যে এখন একসাথে সব পাঠক জায়গা দিতে পারছিনা। ইন্টারনেট জগতের মায়া ছেড়ে এরা যে বইপোকা হয়ে যাবে এটা আমাদের বড় পাওয়া। পাঠক বাড়ার সাথে সাথে বইয়ের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে৷ আমরা বই সংগ্রহ করছি নানাভাবে । অনেক ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান বই দিয়ে গ্রন্থকুঞ্জে বই বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।