

জলিলুর রহমান জনি,সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে রোগীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। নোংরা পরিবেশ, জনবল সংকট ও চিকিৎসকের অভাবে সেবার মান প্রশ্নবিদ্ধ।
সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে রোগীদের দুর্ভোগের কোনো সীমা নেই। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, চিকিৎসক সংকট এবং সার্বিক অব্যবস্থাপনার কারণে রোগীরা চরম অসন্তোষে রয়েছেন।
মো: রাব্বি নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘শয্যা খালি নেই। দুই দিন ধরে বারান্দার এই জায়গাতে রেখেই আত্মীয় কে চিকিৎসা করাচ্ছি। এখানকার পরিবেশ খুবই নোংরা। ডাক্তারও ঠিকমতো আসেন না। একজন এসেছিলেন। বলেছেন ভালো চিকিৎসার জন্য অন্য কোথাও ভর্তি করাতে। রোগী নিয়ে আমরা চলে যাব।’
এমন অবস্থার শিকার শুধু রাব্বি নন, হাসপাতালটিতে আসা প্রায় সব রোগীকেই নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সরকার থেকে আধুনিক ভবন ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হলেও সেবার ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও চিকিৎসকের দেখা মেলে না বলে অভিযোগ করেন সেবাপ্রার্থীরা।
বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে রোগী ও তাদের স্বজনদের গা গোলানোর মতো পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। ফ্যান নষ্ট থাকায় রোগীরা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। বালিশবিহীন নোংরা বিছানায় তেলাপোকা হাঁটাহাঁটি করে। চিকিৎসকের পরিবর্তে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার রোগীদের ওষুধ লেখেন। হাসপাতালের কর্মকর্তারা জনবল সংকটের বিষয়টি সামনে এনেছেন। বলেছেন, চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকাবাসী অভি মাহমুদ , ‘সদর হাসপাতালের অবস্থা খুবই খারাপ। বিভিন্ন জায়গা ময়লা-আবর্জনায় নোংরা হয়ে রয়েছে। ফ্যানগুলো নষ্ট। গরমে রোগীদের কষ্ট পেতে হয়।’
আমলাপাড়ার বাসিন্দা জোসনা খাতুন বলেন, ‘এখানকার নোংরা পরিবেশ রোগীদের আরও অসুস্থ করে তোলে। একটি পশুকেও আরও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখা হয়। এগুলো দেখার কি কেউ নেই?’
রোগীর স্বজন রেজাউল জানান, ‘এক বেডে দুজন রোগীকে থাকতে হচ্ছে। ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। চিকিৎসক পাওয়া যায় না। সঙ্গে রয়েছে আবর্জনার গন্ধ। এই হাসপাতালে এলে দুর্ভোগের শেষ থাকে না।’
সমস্যা কেবল বহির্বিভাগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ভ্যাকসিন সংকট এই হাসপাতালের আরেকটি বড় সমস্যা। সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের মোকলেস ইসলাম এসেছিলেন ভ্যাকসিনের আশায়। কিন্তু তাকে খালি হাতে ফিরতে হয়। তিনি বলেন, ‘হাতে-পায়ে বিড়াল কামড়ে দিয়েছিল। জলাতঙ্কের ভ্যাকসিনের জন্য এসেছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ জানাল ভ্যাকসিনের মজুত নেই। অগত্যা বাইরে থেকে কিনতে হলো।’
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শিমুল তালুকদার বলেন, ‘২৫০ শয্যার হাসপাতালে ৩০০ জনের বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। ক্লিনার থাকার কথা ৫৫ থেকে ৬০ জন, আছেন ছয়জন। আউটসোর্সে আছেন আরও ছয়জন। এত কম পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে এত বড় হাসপাতাল পরিষ্কার রাখা যায় না। আগে তো দুর্গন্ধের কারণে হাঁটাও যেত না। এখন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে বিকেলে চিকিৎসকরা রাউন্ড দিতেন না। এখন সকাল-বিকেল দুই বেলা রাউন্ড দেওয়া হয়। চিকিৎসকদের দেরিতে আসার কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আকিকুন নাহারও জনবল সংকটের বিষয়টি সামনে আনেন। তিনি বলেন, ‘কম জনবল দিয়ে হাসপাতাল চালানো কঠিন হয়ে গেছে। তারপরও পরিবেশ উন্নয়নের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। হাসপাতালের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এই দুর্দশার জন্য জনবল সংকটকে মূলত দায়ী করা হলেও, রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতালের সার্বিক সেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভবিষ্যতে এই সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।