চোরাচালান, মাদক দমন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোন
মোঃ সামিরুজ্জামান, প্রতিনিধি চ্যানেল ২১: বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের সুবিশাল সমুদ্র, উপকূলীয় এবং নদী তীরবর্তী অঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এ অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, জনগণের জানমালের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, চোরাচালান ও মাদক দমন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা থেকে শুরু করে নানামুখী দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সংস্থাটি সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। কোস্ট গার্ডের নিরলস প্রচেষ্টা ও টহল কার্যক্রমের ফলেই পায়রা বন্দর বর্তমানে একটি নিরাপদ বন্দরে রূপ নিয়েছে। দক্ষিণ জোনের আওতাধীন এলাকায় নিয়মিত ফুট পেট্রোল, উচ্চ গতির বোট ও জাহাজের টহল, জরুরি মুহূর্তে কুইক রেসপন্স ফোর্স ও ডাইভিং টিম মোতায়েনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রদান অব্যাহত রয়েছে।
মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণে কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। জাটকা নিধন ও মা ইলিশ রক্ষায় পরিচালিত অভিযানে কোটি কোটি মিটার অবৈধ জাল, হাজারো বেহুন্দি ও চায়না দুয়ারি জাল জব্দ ও ধ্বংস করা হয়েছে। একই সঙ্গে কোটি কোটি টাকার সমমূল্যের জাটকা, ইলিশ, সামুদ্রিক মাছ, পাঙ্গাস পোনা ও চিংড়ির রেণু জব্দের পর নদীতে অবমুক্ত করা হয়েছে, যার ফলে মাছের প্রজনন ও বিচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবুও কিছু অসাধু জেলে ও ব্যবসায়ী অধিক লাভের আশায় ট্রলিং বোটে অবৈধ গিয়ার ও কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মাছ ধরায় সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক অভিযানে দক্ষিণ জোন কর্তৃপক্ষ শতাধিক অবৈধ ট্রলিং বোট জব্দ করে আইনের আওতায় এনেছে।
আইন-শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সন্ত্রাস ও অস্ত্র দমনেও কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোন উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত কয়েক মাসে বিপুল পরিমাণ দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, হাতবোমা, রকেট ফ্লেয়ার ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্বর্ণ, রুপা ও বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রীসহ ডাকাতদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত সম্পদ উদ্ধার এবং বহু দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও ডাকাতকে আটক করা হয়েছে।
মাদক দমনে দক্ষিণ জোনের অভিযানও সমানভাবে প্রশংসনীয়। সাম্প্রতিক অভিযানে কয়েক কেজি গাঁজা, ইয়াবা ট্যাবলেট ও গাঁজা গাছ উদ্ধার করা হয়েছে। চোরাচালান বিরোধী অভিযানে জব্দ করা হয়েছে টনকে টন হাঙর, সামুদ্রিক প্রাণী, শাপলা পাতা, বিপুল পরিমাণ অবৈধ পলিথিন, অপরিশোধিত পাম ওয়েল, এমনকি হরিণের মাংস ও শিং। আটক করা হয়েছে বিদেশি ব্র্যান্ডের হাজারো সিগারেট, আতশবাজি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় অবৈধ দ্রব্যসামগ্রী।
অবৈধ বালু উত্তোলনের মতো পরিবেশ ধ্বংসকারী কর্মকাণ্ড রোধেও কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোন নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। গত ছয় মাসে একাধিক ড্রেজার ও বাল্কহেড জব্দ করা হয়েছে, যার বাজারমূল্য শত কোটি টাকা।
মানবিক কার্যক্রমেও কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিভিন্ন মেডিক্যাল ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের মাঝে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ অভিযানে শত শত মানুষকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, পাওয়া গেছে একাধিক মৃতদেহও। সম্প্রতি জলদস্যুদের কবল থেকে চারটি ফিশিং ট্রলার ও প্রায় সত্তর জন জেলেকে মুক্ত করে তাদের চিকিৎসা ও সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। একই সঙ্গে দুর্যোগকালীন সময়ে কোস্ট গার্ড পরিবার কল্যাণ সংঘের সহায়তায় বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমও পরিচালিত হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দক্ষিণ জোন নিয়মিতভাবে দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনছে। চোরাচালান ও মাদক প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক টহল অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ‘তারুণ্যের উৎসব-২০২৫’-এ ভোলায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে মৎস্য সংরক্ষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগকালীন উদ্ধার ও অগ্নি নির্বাপণ বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করেছে কোস্ট গার্ড।
সামুদ্রিক অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে, উপকূলীয় নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং জনগণের আস্থা ধরে রাখতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোন প্রতিনিয়ত তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোঃ ইমাম হাসান আজাদ জানিয়েছেন, ভবিষ্যতেও এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং সুনীল অর্থনীতি বাস্তবায়নে কোস্ট গার্ড সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করবে।