বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হওয়া শিক্ষার্থী নাফিউল ইসলাম সরকারী ভাবে চিকিৎসা সহায়তা চান

Share the post
মির্জা তুষার আহমেদ,নওগাঁ : গত জুলাই মাসে বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বগুড়ায় শিক্ষার্থীদের মিছিলে পুলিশের চালানো বুলেটে বাম চোখে গুলিবিদ্ধ হয় মেধাবী শিক্ষার্থী নাফিউল ইসলাম। ব্যয়বহুল চিকিৎসার জন্য অর্থের যোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন নাফিউলের পরিবার। তারপরও চোখ ফিরে পাবে কিনা এবং স্বাভাবিক মানুষের মতো দুই চোখ দিয়ে দেখতে পাবে কিনা সেই হতাশায় মেধাবী শিক্ষার্থী নাফিউল।
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের শিয়ালা গ্রামের শুকবর আলীর ছেলে নাফিউল ইসলাম। ১৮বছরের নাফিউল ইসলাম ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি বগুড়া (আইআইটিবি) নামের বেসরকারি পলিটেকনিকে কম্পিউটার বিভাগের চতুর্থ পর্বের শিক্ষার্থী। প্রকৌশলী করার আশা নিয়ে নাফিউলকে বগুড়াতে পাঠায় তার পরিবার। দেশে ঘটে যাওয়া বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিজের সুন্দর ও স্বাভাবিক ভবিষ্যৎ ফিরে পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে নাফিউল ইসলামের। তিন ভাইয়ের মধ্যে নাফিউল তৃতীয়। সে ২০২২সালে উপজেলার শিয়ালা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পাশ করে। শিক্ষার্থী নাফিউল ইসলাম জানান, সহপাঠিদের সঙ্গে গত ১৭জুলাই সকালে বগুড়ার কলোনীতে সরকারি পলিটেকনিকের সামনে শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন। পরের দিন ১৮জুলাই বিকালে মিছিল নিয়ে বের হলে পুলিশের এলোপাতাড়ি ভাবে নির্বিচারে গুলি চালায় এ সময় একটি গুলি এসে তার বাম চোখের ভিতর দিয়ে মস্তিষ্কে ঢুকে যায়। এরপর সহপাঠিরা গুরুত্বর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বগুড়ার বিভিন্ন হাসপাতালে নিলে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হয়। বর্তমানে ঢাকার ভিশন আই সেন্টারে চিকিৎসা চলছে। কিন্তু একাধিকবার অপারেশন করেও মস্তিষ্কের মধ্যে আটকে থাকা গুলি বের করতে পারেননি চিকিৎসকরা। বর্তমানে নাফিউল এক চোখ দিয়ে দেখতে পাচ্ছে। আদেও নাফিউল আরেক চোখ ফিরে পাবে কিনা সেই নিশ্চয়তাও দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা।
নাফিউলের মা জেসমিন বেগম বলেন, এখন আমার ছেলের ভবিষ্যৎ কি? জানি না আমার ছেলে তার আরেকটি চোখ ফিরে পাবে কিনা। আজ স্বৈরাচার শেখ হাসিনার জন্যই আমার ছেলের সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে গেলো। তাই চিকিৎসার জন্য দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারী কাছে সহযোগিতা প্রদানসহ ভবিষ্যতে আমার ছেলের জন্য একটি চাকরী প্রদান করার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।নাফিউলের বাবা শুকবর আলী জানান, ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ যোগাতে গিয়ে বর্তমানে তিনি হিশশিম খাচ্ছেন। যে সামান্য পরিমাণ জমি-জমা আছে সেই জমিটুকু বন্ধক রেখে নাফিউলের চিকিৎসা চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই কয়েক লাখ টাকা চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়ে গেছে। তার মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে বর্তমানে নাফিউলের চিকিৎসার খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারী ভাবে সহায়তা না পেলে নাফিউলের জন্য উন্নত চিকিৎসা অব্যাহত রাখা তার পক্ষে আর সম্ভব হবে না। একডালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আলহাজ্ব মো: শাহজাহান আলী বলেন সরকারী ভাবে নাফিউলকে সহযোগিতা করা খুবই জরুরী। মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তা শুকবর আলীর জমি-জমাও তেমন একটা নেই। যা ছিলো তা বন্ধক রেখে ছেলের চিকিৎসা করছে। সরকারী ভাবে সহযোগিতা করা না হলে মাঝ পথেই থেমে যাবে মেধাবী নাফিউলের চোখের চিকিৎসা। এছাড়া আমার পক্ষ থেকেও নাফিউলকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমীন বলেন উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নাফিউলের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি তদন্তে ইবিতে তথ্য চেয়ে নোটিশ

Share the post

Share the postসুবংকর রায়, ইবি প্রতিনিধি :কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি)২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ-সংক্রান্ত অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতাকারীদের চিহ্নিতকরণে তথ্য চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আর এসকল সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধানের নিমিত্তে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। আজ মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ-সংক্রান্ত অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতাকারীদের […]

নরসিংদীতে পোশাককর্মীর পর এবার ৩ সন্তানের জননীকে ধর্ষণের অভিযোগ

Share the post

Share the post আশিকুর রহমান, নরসিংদী :- নরসিংদীর বেলাবতে এক পোশাককর্মীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের পর এবার রায়পুরা উপজেলায় ৩ সন্তানের জননী পঞ্চাশোর্ধ এক নারী ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। পরপর এধরণের ঘটনায় জেলাজুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ছে। তবে বেলাব এর ঘটনায় পুলিশ ২ জনকে আটক করেছেন। আটককৃতরা হলেন, বেলাব উপজেলার মাটিয়াল পাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে দেলোয়ার হোসেন […]