নিহত পুলিশের পরিবারকে ফ্ল্যাট দেয়ার দাবি সিএমপি কমিশনারের
চট্টগ্রাম: কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হওয়া পুলিশ সদস্যের পরিবারকে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান।
রোববার নগরীর হালিশহরে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইন্সে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ অনুষ্ঠানে তিনি এই দাবি জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, সত্যিকার অর্থে আমাদের চাকরি ঝুঁকিপূর্ণ। দুই দিন আগেও চট্টগ্রাম শহরে জঙ্গি হামলা হয়েছে। চোরের মত..একটি বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। বিস্ফোরণে আমাদের দুইজন সদস্য আহত হয়েছে। আমি গতকাল হাসপাতালে গিয়ে তাদের দেখে এসেছি। যে অবস্থায় তারা ছিল, তাদের বেঁচে থাকাটাই ভাগ্যের ব্যাপার। লাশ খুঁজে পাওয়া যেত না, এমন বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছিল।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন সংগ্রাম করি, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে। আজকেও একজন পুলিশ সদস্য মৃত্যুবরণ করতে পারেন বা মৃত্যুর মুখোমুখি হতে পারেন। প্রতিদিন আমরা মৃত্যুর মুখোমুখি হই। কর্তব্যরত অবস্থায় যদি পুলিশ সদস্য মারা যায় তাদের পরিবার যেন একটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ পায়, সরকারের কাছে আমি এই দাবি জানাই। এখন আমাদের অর্থনীতির যে অবস্থা, একটি করে ফ্ল্যাট দেওয়া তেমন কঠিন কিছু নয়। বিডিআর বিদ্রোহের সময় মারা যাওয়াদের পরিবার একটি করে ফ্ল্যাট পেয়েছিল। আমরাও প্রতিনিয়ত দুর্বৃত্তের সঙ্গে লড়াই করি। আমরা আশা করতে পারি, কর্তব্যরত অবস্থায় মারা গেলে আমার পরিবার অন্তত নিশ্চিত আশ্রয় পাবে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, দেশের স্বাধীনতা আনতে যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিলেন তারা মুক্তিযোদ্ধা। দেশের দুর্বিপাকে, সবচেয়ে বিপদের সময় যারা বীরের মত যুদ্ধ করে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জীবন দেয় তারাও এ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা। আমি তাদেরকে কেন নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেব না, যারা হলি আটিজানে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে, এসি রবিউল, ওসি সালাউদ্দিনকে কেন আমরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেব না।
দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত অবস্থায় মারা যাওয়া চট্টগ্রামের ২১ পুলিশ সদস্যের পরিবারকে এ অনুষ্ঠানে সম্মাননা দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিএমপি কমিশনার মো.মাহাবুবর রহমান, সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) আমেনা বেগম, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মোস্তাক আহমেদ, অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) শ্যামল কুমার নাথ, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাহাব উদ্দিন, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ।
এসময় সিএমপি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ, আরআরএফ, এপিবিএন, শিল্প, হাইওয়ে, রেলওয়ে, পিবিআই, র্যাব, ট্যুরিস্ট এবং নৌ-পুলিশের ইউনিট প্রধানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-এর কর্মসূচির শুরুতে সশস্ত্র অভিবাদনসহ মৃত্যুবরণকারী পুলিশ সদস্যদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। আলোচনা সভার শুরুতে মৃত্যুবরণকারী পুলিশ সদস্যদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা ও আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া-মোনাজাত করা হয়।

প্রসঙ্গত, কর্তব্য পালনের সময় মৃত্যু হওয়া পুলিশ সদস্যদের স্মরণে ২০১৬ সাল থেকে প্রতি বছর ১ মার্চ ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ পালন করা হয়।