নেত্রকোনায় ফুরিয়ে যায়নি মাটির পাত্রের কদর তবুও বিলুপ্তির পথে

Share the post

সোহেল খান দূর্জয়,নেত্রকোনা প্রতিনিধিঃ মাটির হাড়িতে রান্না করা দেশি ধানের লালচে রঙের নরম ভাতের সঙ্গে কৈ মাছের ঝোল খাওয়ার স্মৃতি আজও ভুলতে পারেন না নেত্রকোনার পাল পাড়ার(৮৫) বছরের বৃদ্ধ আইয়ুব হোসেন।
স্মৃতি ঘেঁটে তিনি বলেন, সে যুগে মানুষ পাত্র বলতে মাটির পাত্রই চিনত। মাটির পাত্র পরিবেশবান্ধব ও মানবদেহের জন্য উপকারী।

এক সময় নেত্রকোনা সদর, বারহাট্টা, কলমাকান্দা ও দূর্গাপুর উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে মাটির পাত্রের ব্যাপক প্রচলন ছিল। মাটির হাড়ি-পাতিল, কলসি, মালসা, জগ, ঘটি, বদনা, তাওয়া, কোলা, সরা, ফুলদানি, ফুলের টব, চাড়ি, ঢাকনা, নানা রকম পিঠা তৈরির ছাঁচ, দইয়ের পাত্র, খেলনা ও ব্যাংক প্রভৃতি মাটির পাত্রের ব্যবহার হতো।এক সময় নেত্রকোনা মৃৎ শিল্পের জন্য সমধিক পরিচিত ছিল। অন্যান্য পেশাজীবীর মতো কুমাররাও প্রতিযোগিতাপূর্ণ পৈত্রিক পেশায় দীর্ঘদিন টিকে ছিল। আধুনিকতার ভীড়ে ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বর্তমানে মৃৎ শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। মাটির পাত্রের স্থান দখল করেছে অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, পিতল, প্লাস্টিক, সিলভার, মেলামাইন, কড়ি, কাঁসার তৈরি নানা ধাতব সামগ্রী।

এ পেশায় জড়িত নেত্রকোনা জেলার অনেক কুমার-কুমারী কালের প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে তাদের পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় যোগ দিচ্ছে। আর যারা বাব দাদার পেশা বলে ধরে রেখেছে তাদের অবস্থা বড়ই করুন। তাদের পরিবারগুলো নানা প্রতিকূলতার মাঝে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।

জেলায় এক সময় কয়েক হাজার মৃৎশিল্পী পরিবার এ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করত। তাদের উৎপাদিত পাত্র বিক্রি করত বিভিন্ন হাটে, বাজারে, গ্রামে ও বিভিন্ন মেলায়।

কিন্তু ক্রমবর্ধমান আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশে মৃৎশিল্পের যথাযথ উন্নতি না হওয়ায় এ শিল্পটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে টিকতে পারছে না। কয়েক বছর আগেই মাটির তৈরি এসব জিনিসপত্রের প্রচুর চাহিদা ছিল। এখন মাটির পাত্র খুব কম ব্যবহার করছে মানুষ। বর্তমানে মৃৎশিল্প সামগ্রীর চাহিদা ও কদর কমে যাওয়ায় কুমোরদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এক সময় কি শহর কি গ্রাম প্রতিটি বাড়িতে মাটির তৈরি তৈজসপত্র ছাড়া যেন কল্পনাও করা যেত না। মাটির হাঁড়িতে রান্না, মাটির শানকে খাওয়া, পানি রাখতে মাটির কলস, গ্রাম বাংলায় ধান ভিজাতে মাটির কোলার ব্যবহার ছিল বেশি। এখনকার মানুষ মাটির তৈরি এসব জিনিষপত্রকে সেকেলে ভেবে থাকে।

তবে এত কিছুর পরও মাটির তৈরি বাহারি সৌখিন জিনিসপত্রের চাহিদা দিনদিন আবার বাড়ছে। শহুরে পরিবারে, অফিস, রেঁস্তারায় রঙ তুলির ব্যবহার করা মাটির তৈরি জিনিস শোপিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এতে ভালো মুনাফাও পাওয়া যায়। কিন্তু রঙ তুলি দিয়ে বাহারি জিনিসপত্র কীভাবে তৈরি করতে হয় সে কৌশল জানা নেই তাদের। এ জন্য নেত্রকোনার মৃৎশিল্পীরা সরকারি বা রেসরকারিভাবে তাদের প্রশিক্ষণের জন্য জোর দাবি জানান ।

অন্যদিকে শিল্পপ্রেমীরা চান কোনোভাবেই যাতে দেশের ঐতিহ্যবাহী এই মৃৎশিল্প কালের আর্বতে হারিয়ে না যায়। তাই মৃৎশিল্প রক্ষার্থে তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর ও বেসরকারি সংস্থার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

রাজশাহীর ধামরাই স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের নেতৃত্বে সিফাত-আলমগীর

Share the post

Share the post সৈয়দ মাহিন ,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি :রাজশাহীতে অবস্থানরত সাভার-ধামরাই স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ২০২৫-২৬ সেশনের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সভাপতি হিসেবে আরবী বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাত সিফাত  এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ব্যাংকিং এন্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের আলমগীর এইচ রানা নির্বাচিত হয়েছেন। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সংগঠনটির এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ […]

ওয়েব পোর্টাল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ইবির আইসিটি বিভাগে নবীনবরণ

Share the post

Share the postইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) বিভাগ ও স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব আইসিটি (এসএআইসিটি)-এর উদ্যোগে নবীনবরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় বিভাগের ওয়েব পোর্টালের উদ্বোধনও করা হয়। রবিবার (১৭ আগস্ট) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইবনে সিনা বিজ্ঞান ভবনের ১০২ নং এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এসময় আইসিটি বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে […]