গ্রাহকের টাকায় ১০ লাখ করে বেতন নিতেন রাসেল-শামীমা
শুধু তাই নয়, কোম্পানির প্রায় ২৫-৩০টি যানবাহন রয়েছে। ব্যক্তিপর্যায়ে সাভারে গ্রেপ্তার রাসেলের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জায়গা-জমিসহ অন্যান্য সম্পদ রয়েছে বলে র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন।অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে (প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান) ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছে পুলিশ।শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে হাজির করে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে এ রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোহাম্মদ রাসেল আমাদের হাজার কোটি টাকার দেনার কথা জানান। ইভ্যালির দায় ও দেনা সম্পর্কে নানা প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইভ্যালির দায় ছিল ৪০৩ কোটি টাকা, যেখানে তাদের সম্পদ ছিল ৬৫ কোটি টাকা। বিভিন্ন সংস্থার এসব প্রতিবেদনের বিষয়ে গ্রেপ্তার রাসেল আমাদের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
র্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ইভ্যালি তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান। কোনো ব্যবসায়িক লাভ এ যাবৎ করতে পারেন নাই মোহাম্মদ রাসেল। গ্রাহকদের অর্থে যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করতেন তিনি। ক্রমে ক্রমে তার দেনা বৃদ্ধি পেয়েছে।র্যাব কর্মকর্তা মঈন জানান, গ্রেপ্তার রাসেল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন ইভ্যালির অ্যাকাউন্টে বর্তমানে ৩০ লাখ টাকা রয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি গেটওয়েতে ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা আছে, যা গ্রাহকদের।
এর আগে, প্রতারণার অভিযোগে গুলশান থানায় বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এক গ্রাহকের করা মামলায় বৃহস্পতিবার বিকেলে (১৬ সেপ্টেম্বর) মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে প্রতিষ্ঠানটির সিইও রাসেল ও তার স্ত্রী চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে সেখান থেকে তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়।
২০১৬ সালে প্রথমে অনলাইনে ডায়াপার বিক্রি দিয়ে যাত্রা শুরু করেন রাসেল। ২০১৭ সালে এই ব্যবসা করতে গিয়ে বড় একটি অনলাইন প্লাটফর্মের কথা চিন্তা করেন তিনি। সেই চিন্তা থেকেই প্রতিষ্ঠা করেন দেশীয় ই-কমার্স কোম্পানি ‘ইভ্যালি’। প্রায় ১৭ লাখ নিয়মিত ক্রেতা, ২০ হাজারের বেশি বিক্রেতা নিয়ে বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতে স্বল্প সময়ে প্রথম সারিতে উঠে আসে ‘ইভ্যালি’।
বিশাল অফার ছাড়ের ছড়াছড়ি আর ক্যাশব্যাকের আকর্ষণ দিয়ে ক্রেতা বাড়ানোর কৌশল নিয়ে সফল হলেও প্রতিষ্ঠানটি এখন গ্রাহক ভোগান্তির শীর্ষে অবস্থান করছে। ক্যাশব্যাক দীর্ঘদিন কোম্পানির হিসাবে পড়ে থাকলেও জটিল নিয়মের কারণে গ্রাহক তা ক্যাশ (নগদায়ন) করাতে পারে না। ক্যাশব্যাক অফারের সঙ্গে আরও টাকা যোগ করে তবেই সে টাকা দিয়ে নতুন করে পণ্য কিনতে হয়।
মোটরসাইকেল, গাড়ি, মোবাইল, ঘরের সরঞ্জাম এবং আসবাবপত্রের মতো উচ্চমূল্যের পণ্যে লোভনীয় ছাড় দেয় ইভ্যালি। প্রতিষ্ঠার শুরুতে সাইক্লোন, আর্থকোয়েক ইত্যাদি নামে তারা ক্রেতাদের ১০০ শতাংশ ও ১৫০ শতাংশ ক্যাশব্যাকের মতো অত্যন্ত লোভনীয় অফার দেয়। ইভ্যালির ব্যবসার এ কৌশলের ফলে মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি অনেক সমালোচনারও সৃষ্টি হয়।