

হাসানুজ্জামান সিদ্দিকী হাসান ,জলঢাকা নীলফামারী প্রতিনিধিঃঅনিশ্চয়তা নিয়ে বড় হচ্ছে ২৩ মাস বয়সী জোড়া লাগা শিশু লাবিবা-লামিসা। সন্তান নিয়ে যেখানে আনন্দে দিন কাটানোর কথা সেখানে মা-বাবার চোখ জুড়ে এখন শুধুই অন্ধকার।নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার কৈমারী যদুনাথ পাড়া এলাকার লাল মিয়া ও মনুফা বেগম দম্পত্তির একমাত্র চাওয়া চিকিৎসার মাধ্যমে জোড়া লাগা দুই শিশুকে আলাদা করে দেয়া। কিন্তু অর্থের অভাবে তা হচ্ছে না।স্থানীয়দের অভিযোগ, জন্মের পর থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘোরাঘুরি করেও স্বাভাবিক করতে পারেনি জোড়া এই দুই শিশুকে।
অবিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জলঢাকা উপজেলা শহরের একটি ক্লিনিকে সিজারের মাধ্যমে প্রসব হয় এই জোড়া লাগা দুই শিশুর। জন্মের পর খাওয়ার পরে পেটফুলে থাকলে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করা হয় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
দেড় মাস বয়সে রংপুর মেডিক্যালে অপারেশনের মাধ্যমে পায়খানার রাস্তা আলাদা করে দেয়া হয় তাদের। এরপর অার এ সমস্যা থাকে না।।
এখন অন্য সমস্যা না থাকলেও স্বাভাবিক ভাবে জন্ম না নেয়ায় জোড়া শিশু হিসেবে বেড়ে উঠতে হচ্ছে তাদের। একজন হাটতে চাইলে তো অন্যজন বসতে চায়, একজন খেতে চাইলে অন্যজন কাদে। একজন ঘুমাতে চাইলে তো অন্যজন চিৎকার করে। তবে দিন যত যাচ্ছে ততই তাদের নিয়ে শংকা বাড়ছে পরিবারে।লাবিবা-লামিসার দাদী ইলমা খাতুন বলেন, নাতনি দুটি জম্মেছে ঠিকই। তারা তো স্বাভাবিক নয়। চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের আলাদা করতে হবে। এজন্য অনেক টাকা দরকার।আমরা গরী্ মানুষ এতে টাকা পাব কই।
অনেকে সহযোগীতা করেছেন। ঢাকা পর্যন্ত গিয়েছে তারা চিকিৎসার জন্য। চিকিৎসাটা দ্রুত শেষ হওয়া দরকার। যেন তারা স্বাভাবিক ভাবে আলাদা হয়ে বেড়ে উঠতে পারে। এই শিশুদের নিয়ে আমরা অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।
লাবিবা-লামিসার মা মনুফা বেগম বলেন, জন্মের পর থেকে কষ্টের শেষ নেই আমার। ঠিকমত ঘুমাতে পারি না। এদের সাথে সবসময় থাকতে হয়।
একজন হাটতে চাইলে, অন্যজন বসে। একজন ঘুমাতে চাইলে আরেকজন বেরাতে চায়। একজন খায় তো আরেকজন কাদে। প্রতিটি দিন যে কিভাবে কাটে তা বলে শেষ করা যাবে না।
দু’জনকে কোলে নিয়ে তো আর সবসময় বেরানো যায় না। সবার কোলেও যেতে চায় না। এখন তো ছোট আছে বড় হলে কি হবে এদের।
প্রতিবেশি মাহমুদা বেগম বলেন, দিন আনি দিন খায় ওমরা। ছাওয়া দুটাক অপারেশন করি আলাদা করা খুব দরকার। ওমার তো সাধ্য নাই। অনেক দিন থাকি শুনিছি যে অপারেশন হইবে হইবে। এলাও হয়ছে না। মেডিক্যালও গেইল কয় বার। অনেক টাকা পাইসা নাগে, মানুষ আগায় আসিলে ওমার খুব উপকার হয়।
জোড়া শিশু লাবিবা-লামিসার বাবা লাল মিয়া বলেন, জন্মের পর এ হাসপাতাল ও হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা চালাচ্ছি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে গেছিলাম। চিকিৎসকরা বোর্ড বসানোর কথা। এখন করোনা চলছে। কবে যে কি হয়। বুঝতে পারছি না। শিশু দুটি তো বড় হচ্ছে। অপারেশন করির সময় তো অনেক টাকা দরকার। আমার সামর্থ্য নেই। তাদের ভবিষ্যত নিয়ে আমি চিন্তিত।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগীতা চাই। তিনি দেখলে আমার সমস্যা দ্রুত সমাধান করে দেবেন আমার বিশ্বাস।
জানতে চাইলে জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসান বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জোড়া শিশু দুটির চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়েছিলো কিন্তু করোনার কারণে থমকে গেছে। কারণ এই শিশুদুটি চিকিৎসায় কয়েক রকম চিকিৎসক প্রয়োজন। তারা বোর্ড বসাবেন। আমি আবারো যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত অপারেশনে যাওয়া সম্ভব হয়