কিশোরগঞ্জে পালকির মতোই জীর্ণতার দোলাচলে বইছে বেহারাদের জীবন সংসার, সমাজ তাদেরকে দেখে অন্যচোখে

Share the post

আকিব হৃদয়, কিশোরগঞ্জঃ ভূপেন হাজারিকার জীবনমুখি গানে উল্লেখ করা পালকির বেহারাদের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে! পালি ভাষায় পলাঙ্কো। বাংলা ও হিন্দি ভাষায় পালকি। রামায়নে উল্লেখ করা হয়েছে মানুষ ভেতরে রেখে অন্যমানুষেরা কাঁধে করে বহন করা কাঠের তৈরি এই পালকির কথা। পালকির বাহকদের বলা হয় বেহারা। প্রাচীন এ বাহনটির সঙ্গে মিশে আছে বাংলার অতীত-ঐতিহ্য আর নানা লোকগাঁথা। কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ঘোড়াউত্রা নদী তীরের কারপাশা রবিদাস পল্লীর সুবল রবিদাসের পূর্বপুরুষদের জীবন কেটেছে পালকির বেহারার পেশায়। এক সময় তাদের পল্লীতে শত শত পালকি ছিল। বিয়ে বা অন্য কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান হলে কিংবা শহরের বাবুরা বেড়াতে এলে ডাক পড়ত তাদের। কিন্তু এসব এখন কেবলই স্মৃতি! পূর্বপুরুষের পেশা ধরে রাখলেও আগের সেই জৌলুস এখন নেই। তাইতো পুরনো এ কাঠের পালকির মতোই জীর্ণতার দোলাচলে বইছে তার জীবন সংসার। পারস্য পর্যটক ইবনে বতুতা তার ভ্রমণে পালকি ব্যবহার করতেন। সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে সেনাধ্যক্ষদের প্রধান বাহন ছিল পালকি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহে থাকার সময় জমিদারি কাচারি পরিদর্শনে যেতেন পালকিতে চড়ে। মূলত প্রাচীন কাল থেকে পালকির ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে পালকির ব্যবহার কমে যাওয়ায় চরম দুর্দিনে বংশ পরম্পরায় এ পেশায় জড়িত রবিদাস সম্প্রদায়ের এসব বেহারারা। খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটছে তাদের। সমাজের চোখে চরম অবহেলিত ও নিচু বর্ণের এসব মানুষেরা কীভাবে বেঁচে আছেন আর কীভাবে কাটছে তাদের জীবন সেই খবর এখন আর কেউ রাখে না। কারপাশা উজানহাটি গ্রামের ছোট্ট এ রবিদাস পল্লীতে বৃটিশ আমল থেকেই স্থাণীয়ভাবে, মুচি, হিসেবে পরিচিত রবিদাস সম্প্রদায়ের লোকজন বাস করে আসছেন। মূলত পালকির বেহারাই ছিল তাদের পেশা। বর্তমানে এ পল্লীতে কোনোভাবে টিকে আছে ১০টি পরিবারের ৩৫ জন মানুষ। তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। চরম অনমানবিক পরিস্থিতিতে খেয়ে না খেয়ে চলছে তাদের জীবন। অনেকেরই স্বামী নেই। তবুও মিলছে না সরকারের বিধবা ভাতা কিংবা ভিজিডি কার্ড সুবিধা। পুরো এলাকায় হাতেগোণা কয়েকটি পালকি থাকলেও ভাড়া হয় কালেভদ্রে। জুতা সেলাই আর সেলুনে চুল কেটে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা এখানকার পুরুষদের। আর নারীরা মাটি কেটে, অন্যের বাড়িতে কাজ করে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার চেষ্টা করেন। জেলার ১৩টি উপজেলাতেই একই চিত্র রবিদাস সম্প্রদায়ের পালকির বেহারাদের। জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলায় সব মিলে দুইশর মতো রবিদাস সম্প্রদায়ের পরিবারের বাস।

এর মধ্যে পালকির বেহারার পেশায় এখনও টিকে আছে কয়েক উপজেলার ১০টির মতো পরিবার। বাঙালির আদি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অন্যতম অনুসঙ্গ এ পালকিকে সীমিত পরিসরে হলেও টিকিয়ে রাখা এবং বেহারাদের জীবনমান উন্নয়নে উদ্যোগ নেয়া হবে এমনটাই মনে করছেন এ পেশায় জড়িতরা। তবে পালকির বেহারা বা রবিদাস সম্প্রদায়ের সার্বিক সহযোগিতার বিষয়টি মাথায় রেখে তাদের জন্য নতুন কিছু করার চিন্তা চলছে বলে জানালেন জেলা পরিষদের চেয়ারমান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান। দেশের সব মানুষের সামগ্রিক জীবনমানের উন্নতি হলেও চরম দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করা এসব মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সরকারের নেই উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

“পিতাকে খুন করে ৯৯৯ ফোন,কন্যার নিজের আত্নসমর্পণ”

Share the post

Share the postমাহমুদুল ইসলাম সাগর ,সাভার উপজেলা প্রতিনিধি : ঢাকার সাভারে উপজেলায় পিতাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনায় ঘাতক মেয়ে নিজে ৯৯৯ কল করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। বৃহস্পতিবার (৮মে) ভোরে সাভারের মজিদপুর কাঠালবাগান এলাকায় আ: কাদেরের ভাড়া বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আব্দুল কাদেরের বাড়ির কেয়ারটেকার রহিজ উদ্দিন বলেন, গত ৫ […]

ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলমান, সংহতি শিক্ষকদের

Share the post

Share the postআব্দুল্লাহ আল মামুন, ববি প্রতিনিধি : বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিনের পদত্যাগের একদফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ৷ এছাড়াও আন্দোলনকারীরা পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে শুক্রবার অনুষ্ঠিতব্য বিজ্ঞান শাখার ‘এ’ ইউনিটের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় উপাচার্যকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন৷ পদত্যাগের দাবি মেনে নেওয়া না হলে […]