

ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ তুলে মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুর ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে অংশ নেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। উপস্থিত ছিলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের বজলুর রহমান, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সাজ্জাদ সাব্বির, ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের জারিন তাসমিন পুষ্প প্রমুখ।
এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ‘ক্যাম্পাসে লাশ কেনো, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, প্রশাসন স্বর্গে’, ‘সাজিদ তো কবরে, এরপর কী আপনি আমি?’, ‘লন্ডন ট্যুর কেমন ছিল স্যার?’, ‘তোমরা আবেগী হয়ো না’, ‘প্রশাসনের প্রহসন, মানি না মানবো না’, ‘মাছের বেলাই সবাই সই, লাশ পড়লে ভিসি কোই’, ‘সাজিদ হত্যার বিচার চাই’, ‘ময়না তদন্তের রিপোর্ট চাই’— ইত্যাদি প্লেকার্ড দেখা যায়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, “১৮ হাজার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রশাসন সুষ্ঠু তদন্তে ব্যর্থ হচ্ছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে ঘটনাটি কাকতালীয় নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে আমাদের মনে হয়েছে। চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন তা প্রকাশ করতে পারেনি— যা আমাদের গভীরভাবে শঙ্কিত করছে।”
তারা আরও বলেন, “যদি এই হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা পড়ে যায়, তবে যারা হত্যার সঙ্গে জড়িত তারা আরও সাহস পাবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যা করে পার পেয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত তৈরি হবে। যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে খেলতে চায়, তারা শক্তি পাবে।”
উপাচার্যের বিদেশ সফর নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, “উপাচার্য স্যার লন্ডনে সফরে থাকলেও একটি ভিডিও বার্তায় আমাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে পারতেন, সেটিও করেননি। অথচ তিনিই ছাত্রদের আন্দোলনের রক্তের বিনিময়ে উপাচার্যের পদে বসেছেন।”
আন্দোলনকারীরা বলেন, “আমরা কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করতে চাই না। আমরা শুধু চাই, যারা দায়িত্বে আছেন তারা যেন আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন এবং এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করেন।”
সবশেষে শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমাদের একমাত্র দাবি— নিরাপদ ক্যাম্পাস। যেখানে আমরা নিরাপদে শিক্ষা, চিন্তা, সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারব। আমরা আমাদের ভাই সাজিদের হত্যার বিচার চাই, আর কিছু না।”
উল্লেখ্য, ১৭ জুলাই বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে সাজিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে এই মৃত্যুকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না তার সহপাঠী, বন্ধু এবং স্বজনেরা। ফলে মৃত্যু ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে তৈরি হয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও উত্তেজনা।