শিক্ষার্থীদের ভাবনাই স্বাধীনতা দিবস
আলিফুল ইসলাম আলিফ – ক্যাম্পাস প্রতিনিধি : ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ২৫ শে মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি বাহিনী বর্বর হামলা চালালে বাঙালির স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু হয়। প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলে, তার পক্ষ থেকে এম. এ. হান্নান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। ২৭শে মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান একই ঘোষণা পাঠ করেন। এই দিন ত্যাগ ও বিজয়ের প্রতীক, যা আমাদের স্বাধীনতার চেতনা ধরে রাখার অনুপ্রেরণা দেয়। স্বাধীনতা দিবসের উপর ভিত্তি করেই আসুন জেনে নেই আমাদের শিক্ষার্থীদের ভাবনা গুলো তারা স্বাধীনতা বলতে কি বুঝে এবং তারা কিভাবে সেটা উদযাপন করতে চায় এবং কিভাবে স্বাধীনতা চেতনাগুলো ধরে রাখতে চায় ।
সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী
” রায়হান আলী শাকিল ” বলেন—স্বাধীনতা শব্দটি একটি আবেগের নাম। যে আবেগে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস লেপ্টে আছে। তবে এই মহানন্দের নেপথ্যের ঘটনা তেমনই অভাবনীয়, বিভীষিকাময়, লোমহর্ষক ও সংগ্রামের ঘটনা। লাখো বোনের ভাই, নববধূর স্বামী আর মায়ের ছেলের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ মহানন্দ। এতে আমার অগণিত বোনের ইজ্জতকে বলপূর্বক দখল করে প্রাণনাশ আর নৃশংসভাবে হত্যাযজ্ঞ সৃষ্টি করে একে একে নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনাও কম না। আর ২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আমরা ভোগ করছি। বর্তমানে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল ও ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। দেশকে আরও সমৃদ্ধ করতে হলে শুধু সরকার নয় সবারই রয়েছে দায়িত্ব ও কর্তব্য। পাশাপাশি সর্বস্তরে মননশীল বা উচ্চতর শিক্ষিত লোকই কেবল- জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে স্বদেশ আরও প্রগতিশীল হবে। বিশেষত আমাদের সবাইকে নিরেট অসাম্প্রদায়িক হয়ে উঠতে হবে। এক্ষেত্রে নজরুলের চেতনার মতো চেতনাকে ধারণ, লালন ও বহন করলেই অনন্য উৎকর্ষ সাধন হবে বলে আমার বিশ্বাস। অতঃপর কথিত শ্রেণি বা বিভাজন করা জাতপাতের ঊর্ধ্বে থেকে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনে দেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের যথার্থ সম্মান প্রদর্শন হবে।
স্বাধীনতা দিবসে তার ভাবনা কি এবং তিনি কেমন স্বাধীনতা চান ? এই সম্বন্ধে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় তখন ,
ঢাকা নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী
” জান্নাতুন নাঈমা ” বলেন —আমাকে যদি বলা হয় স্বাধীনতা দিবসে আমার ভাবনা কি? তাহলে আমি বলবো “সত্যিকারের স্বাধীনতা চাই”
স্বাধীনতা মানে শুধু শৃঙ্খলমুক্ত হওয়া নয়, এটি নিরাপদ, সম্মানজনক ও স্বাধীন জীবনযাপনের অধিকার। একজন নারী হিসেবে স্বাধীনতা মানে শুধু বাড়ির বাইরে যাওয়ার অনুমতি নয়, বরং ভয় ও হুমকিমুক্ত পরিবেশে বাঁচার নিশ্চয়তা। কিন্তু ধর্ষণ ও সহিংসতার মতো অপরাধ আমাদের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে! কেউ কেউ হারিয়ে যায় চিরতরে, নিঃশব্দে। তাদের আর প্রতিবাদ করার সুযোগ থাকে না, বিচারও মেলে না অনেকের। আছিয়ার মতো কত মেয়ে হারিয়ে যায়, সমাজ একদিনের শোক করে, তারপর ভুলে যায়। আমরা তো এমন স্বাধীনতা চাইনি! এমন স্বাধীনতা চাই না, যেখানে ছয় বছরের শিশু মানুষরূপী পশুদের হাত থেকে রক্ষা পায় না। আমি এমন স্বাধীনতা চাই না, যেখানে বৈষম্য আর অসম্মান থাকবে, বিশেষ করে নারীদের প্রতি।
আমি এমন স্বাধীনতা চেয়েছি, যেখানে নারীদের সম্মান থাকবে। এমন স্বাধীনতা চাই, যা আমাকে মুক্ত আলোয় বাঁচার সাহস দেবে। এমন স্বাধীনতা চাইবো আমি যেখানে সকলের জন্য সমানভাবে আইন প্রয়োগ হবে। যেহেতু আমি একজন নার্স। আমার স্বাধীনতা হলো সেবা করা, মানুষকে সুস্থ জীবন দিতে সাহায্য করা। কিন্তু সেটিও তখনই সম্ভব, যখন সমাজ নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। একজন ধর্ষিতার চিকিৎসা করতে গিয়ে আমি চাই না, সমাজ তাকে দোষারোপ করুক। আমি চাই, অন্যায়ের বিচার হোক, নারীরা নির্ভয়ে বাঁচুক।আমরা যদি সত্যিকারের স্বাধীনতা চাই, তবে সমাজকে বদলাতে হবে, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। আসুন, সবাই মিলে সত্যিকারের স্বাধীনতার পথ গড়ে তুলি। দেশের ৫৩তম স্বাধীনতা দিবসে এটিই আমার একমাত্র চাওয়া!
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
” মো: ফেরদৌস মিয়া ” কে
যখন জিজ্ঞাসা করা হয় , তিনি স্বাধীনতা বলতে কি বুঝলেন এবং কিভাবে তিনি স্বাধীনতার চেতনাকে ধরে রাখতে চায় ? তখন তিনি বলেন —স্বাধীনতা মানেই হল দায়িত্ববোধ। এবং এই দায়িত্ববোধের কথা যখন আসে তখন আমরা দেখি শিক্ষার্থীরাই শ্রেষ্ঠ। অতীতে অনেক ঘটনা দেখে তার প্রমাণ পাওয়া যায় তবে স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করাটা কঠিন। শিক্ষার্থীদের ভাষায় স্বাধীনতা বলতে দেশপ্রেম আত্মত্যাগ ও দায়িত্ববোধের অঢেল সমাহার বোঝায়। স্বাধীনতা আমাদেরকে দেশপ্রেমী উদ্বুদ্ধ করে আমাদেরকে উদ্রিত করে ইতিহাস জানার ইতিহাস কে বোঝার এবং নতুন করে ইতিহাস লেখার । স্বাধীনতা আমাদেরকে দেশপ্রেম উত্তেজিত করে সমাজ পরিবর্তনের নতুন ধারা তৈরি করে। শিক্ষার্থীদের ভাবনা স্বাধীনতা দিবস বলতে আমরা যারা বুঝি যে আনন্দ প্রকাশে একটা মাধ্যম কোন এক অরাজগতা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটা আশার প্রদীপ এবং দেশটাকে সুন্দর সুশৃঙ্খভাবে গঠন করার একটা নতুন উদ্যোগ যেখানে কেউ কারো প্রতি থাকবে না কোন রাগ বিচ্ছেদ সবার সবাইকে সহযোগিতা করবে সুন্দর সুশৃঙ্খলা একটা পরিবেশ গড়ে তুলবে ।
স্বাধীনতা দিবস এবং তা উদযাপন নিয়ে যখন আরো জানতে চাওয়া হয় তখন,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
“রায়হান রানা ” বলেন —
স্বাধীনতা দিবস শুধু উদযাপনের দিন নয়, এটি দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ও দায়িত্ববোধের শিক্ষা দেয়। শিক্ষার্থীরা মনে করে, স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্যায়ন হয় দেশের প্রতি ভালোবাসা, সততা ও দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে।
বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দিনটি উদযাপিত হয় পতাকা উত্তোলন, র্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, যা তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশ গঠনে অনুপ্রাণিত করে। তারা স্বপ্ন দেখে দুর্নীতিমুক্ত, প্রযুক্তিনির্ভর, শিক্ষার সমান সুযোগসম্পন্ন একটি উন্নত বাংলাদেশের।
স্বাধীনতা দিবস শুধু অতীতকে স্মরণ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে ওঠার অঙ্গীকারের দিন। তাই আমাদের উচিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা ও দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করা, কারণ আমরাই আগামীর বাংলাদেশ গড়ার কারিগর ।