মনোনয়ন বঞ্চিত আ.লীগের ৬ নেতা লড়বেন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে!

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এবার প্রথম আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চালু হওয়ায় মনোনয়নের দৌড়ে থাকা প্রার্থীদের মধ্যে এবার বাদ পড়েছেন সাবেক এবং বর্তমান কাউন্সিলররা।
নগরের ৪১টি ওয়র্ডের মধ্যে প্রত্যেক ওয়ার্ডে চার-পাঁচজন মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও পরিবারের রাজনৈতিক ঐতিহ্যের কারণে সক্রিয় রাজনীতি না করেও কেউ কেউ মনোনয়ন পেয়েছেন বলে অভিযোগ মনোনয়ন বঞ্চিতদের। তবে এমন সব অভিযোগ ছাপিয়ে দলের টিকেট না পেলেও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এসব আওয়ামী লীগ নেতারা।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরে পুরনোদের মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন ২৭ জন। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পুরোনো ১৯ কাউন্সিলর বাদ পড়েছেন বলে জানা গেছে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি ) বিকেলে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে চান এমন ৬ জন কাউন্সিলর এবং সাবেক কাউন্সিলরের খবর পাওয়া গেছে। তারা হলেন-১১নং দক্ষিণ কাট্টলীর বর্তমান কাউন্সিলর মোরশেদ আকতার চৌধুরী, ৩৩নং ফিরিঙ্গি বাজার ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, ২১নং জামালখান ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট এম এ নাসের, ১২নং সরাইপাড়া ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর সাবের আহম্মেদ সওদাগর, ৩১নং আলকরণ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর তারেক সোলায়মান সেলিম, ২৬নং উত্তর হালিশহর থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়া হালিশহর থানা ইউনিট আওয়ামী লীগের সদস্য লায়ন মোহম্মদ ইলিয়াস।
৩৩ নং ফিরিঙ্গি বাজার ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব বলেন, জনগণই হচ্ছে সব কিছু। গত নির্বাচনেও আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছিলাম। জনগণ আমাকে প্রত্যাশিত রায় দিয়েছে। সেই রায়ে আমি কাউন্সিলর হয়েছি। গতবার যিনি আমার প্রতিদন্ধী ছিলেন তিনি ফিরিঙ্গি বাজার ওয়ার্ডের চার চার বারের কাউন্সিলর ছিলেন। এছাড়া তিনি ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। স্থানীয় নির্বাচনে জনগণের ভোট সবচেয়ে বড়। এ ৫ বছর মানুষের পাশে ছিলাম। সৌন্দর্য বর্ধন থেকে শুরু করে হতদরিদ্র মানুষের পাশে থেকে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছি।
‘আমি কমার্স কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলাম এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলাম। দল একটি ভিন্ন বিষয়, স্থানীয় নির্বাচনও ভিন্ন বিষয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীকে দল মনোনয়ন দিবে না। আমি ব্যাক্তি ইমেজের ওপর নির্বাচন করবো।’
৩১নং আলকরণ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর তারেক সোলায়মান সেলিম বলেন, ব্যাক্তিগত আক্রোশের কারণে আমি মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছি। এলাকার মানুষের ভালোবাসা পেয়ে সিক্ত হয়েছি। দলের নীতি নির্ধারনী নেতা কর্মীদের সাথে আলোচনা করে নির্বাচন করবো।
২১নং জামালখান ওয়ার্ডে থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত অ্যাডভোকেট এম এ নাসের নির্বাচন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তার ফেসবুক পোস্টে। তিনি লিখেন, ‘২১নং ওযার্ডের সর্বস্তরের মানুষের তীব্র ভালবাসাও জোর সমর্থন অনুভব করে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবো।’
১১নং দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সির মোরশেদ আকতার চৌধুরী এলাকার সর্বস্তরের নাগরিকদের দাবির মুখে তিনি আসন্ন চসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ার সীদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ তিনি বলেন, আমার এতোদিনের সাজানো বাগান আমি কাউকে ছেড়ে দিতে পারিনা৷ আমার এলাকার জনসাধারণ আমাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জোর দাবি জানিয়ে আসছে তাই স্বিদ্ধান্ত নিলাম।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করছি না৷ আমি আজীবন নৌকার পক্ষে ছিলাম এবং আসন্ন নির্বাচনে মেয়র মনোনীত নৌকার প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করবো৷ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচন তাই এখানে দলীয় প্রতীকের ব্যবহার নেই ৷
এর আগে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেলেও নির্বাচনে স্বতন্ত্র হয়ে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন ১২নং সরাইপাড়া ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর সাবের আহম্মেদ। তিনি একুশে পত্রিকাকে বলেন, নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আমি নির্বাচন করবো। দলের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই।
এদিকে ঝামেলা এড়াতে অনেকে এ মুহূর্তে বিষয়টি ঘোষণা না দিলেও আগামী রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে জানা যাবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর তালিকায় কারা কারা থাকছেন৷ যদিও মনোনয়ন ঘোষণার দিন গণভবনে প্রবেশের সময় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সকল প্রার্থীর কাছ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার পত্রে সাক্ষর নেয়া হয়েছিলো কিন্তু বিদ্রোহী অনেকের দাবি ঐ প্রত্যাহারপত্র আইনত গ্রহণ যোগ্য।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ৃয়া সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাধারণ ওয়ার্ডে ৪১জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৪ জনের নাম ঘোষণা করেন।