বিশ্বে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হবে কক্সবাজার সৈকত

Share the post

বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় সি-বিচ হিসেবে গড়ে তোলা হবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে। প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যগামী বড়ো আকারের প্লেনগুলো যাতে ব্যবহার করতে পারে সে লক্ষ্যেই গড়ে তোলা হচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দর। সেই লক্ষ্যে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ের নির্মাণ কাজের শুরু হয়েছে।

সমুদ্রের জলরাশি ভেদ করে রানওয়ের নির্মাণ শৈলী দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে এবারই প্রথম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহেই কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে ৯ হাজার ফুট থেকে ১০ হাজার ৭’শ ফুটে উন্নীত করার পরিকল্পনা। যার মাঝে ১ হাজার ৩’শ ফুট রানওয়ের স্থাপন হবে সমুদ্রের মধ্যে।

 
কক্সবাজার বিমানবন্দরের মহেশখালী চ্যানেলে জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে সম্প্রসারণ হচ্ছে এই রানওয়ে। প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১৫’শ ৬৯ কোটি টাকা।
 
সাগরের মধ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ করতে প্রথমে সাগরের নিচে স্থাপন করা হবে জিওটিউব। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করা হবে পানি। শুরু হবে খনন প্রক্রিয়া ও বালু ভরাট কার্যক্রম। এরপর প্রাথমিক পর্যায়ে হতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে হবে বালুর স্তর বিন্যাস। চূড়ান্ত পর্যায়ে হবে রানওয়ের জন্য বালুর স্তর বিন্যাস। তারপর হবে পাথরের স্তর বিন্যাস এবং নিচ্ছিদ্রকরণ, পিচ ঢালাই ও নিচ্ছিদ্রকরণ। এভাবেই তৈরি হবে রানওয়ে এবং প্রাথমিক সমুদ্র হতে রক্ষাকারী বাঁধ। এর পরপরই হবে রানওয়ের শোভাবর্ধন ও নির্দেশক বাতি স্থাপন। সম্প্রসারণ কাজ শেষ হলে এটি হবে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে সম্বলিত বিমানবন্দর।

রোববার (২৯ আগস্ট) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই মহাযজ্ঞের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় তিনি বলেন, এই বিমানবন্দরের মাধ্যমেই কক্সবাজারের সাথে নতুনভাবে পরিচিত হবে পুরো বিশ্ব। যার কারণে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় সি-বিচ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশের ভৌগলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের সাথে যোগাযোগের একটা কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত করতে চায়। সেক্ষেত্রে, কক্সবাজার হবে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সি-বিচ ও পর্যটন কেন্দ্র এবং অত্যন্ত আধুনিক শহর। যাতে আর্থিকভাবেও আমাদের দেশ অনেক বেশি লাভবান হবে।
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেক চিন্তা ও পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে এবং কক্সবাজার নিয়ে তো আরও বেশি। কক্সবাজার হবে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সি বিচ এবং পর্যটন কেন্দ্র এবং অত্যন্ত আধুনিক শহর। সেইভাবে পুরো কক্সবাজারটাকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ করবো।
 
কক্সবাজার বিমানবন্দর বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় রিফুয়েলিং হাব হিসেবে গড়ে উঠবে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের সাথে যোগাযোগের একটা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চায়।
 
তিনি বলেন, ‘এই বিমানবন্দর সম্প্রসারণ হলে পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে বা প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে যত প্লেন যাবে, তাদের রিফুয়েলিংয়ের জন্য সব থেকে সুবিধাজনক জায়গা হবে এই কক্সবাজার। কারণ, একেক সময় পৃথিবীর একেকটি জায়গা উঠে আসে। একসময় হংকং, তারপর সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক এখন দুবাই।
 
কিন্তু আমি বলতে পারি যে, ভবিষ্যতে কক্সবাজারটাই হবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। কেননা, খুব স্বল্প সময়ে এখানে বিমান এসে নামতে এবং রিফুয়েলিং করে চলে যেতে পারবে।’
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই রানওয়ে সম্প্রসারণের মাধ্যমে আমি মনে করি, আমরা যে ওয়াদা জনগণের কাছে দিয়েছিলাম সেটা আরও একটা ধাপ আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে প্রথমবারের মত আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে এই যে জলভাগের ওপর আমরা একটা রানওয়ে নির্মাণ করছি সেটাও দৃষ্টিনন্দন হবে এবং অনেকে এটাই দেখতে যাবে। জলভাগের ওপর এই রানওয়ে নির্মাণের সাহস নিয়ে কাজ শুরু করতে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান তিনি।
 
আর প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি নির্ধারিত সময়েই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান সরকার প্রধান।
 
এদিকে, কক্সবাজার বিমানবন্দরের সম্প্রসারিত রানওয়ে নির্মাণের আনুষ্ঠানিক যাত্রায় খুশির জোয়ারে ভাসছে সৈকত-শহরের মানুষ। আঞ্চলিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে আন্তর্জাতিক মানে। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান, এমন আশা স্থানীয়দের।
 
কক্সবাজারকে ঘিরে বাড়ছে স্বপ্ন ও পরিকল্পনার পরিসর। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে শিল্প সংশ্লিষ্ট সব খাতেই উন্মোচিত হওয়ার অপেক্ষায় নতুন দিগন্ত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে পর্যটনখাত।
 
অর্থবাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন সৈকত শহরের মানুষ। কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সাগরে সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন হওয়ায় তাদের মাঝে বইছে খুশির বন্যা।
 
দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে নির্মিত হলে কক্সবাজার বিমানবন্দর ঘিরে তৈরি হবে এভিয়েশন হাব। পরিণত হবে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের অন্যতম সেতুবন্ধনে। এমনটাই মনে করেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
 
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সচিব মোকাম্মেল হোসেন ও সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (সিএএবি)’র চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।
 
চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি মাসে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় বিশ্বের নামকরা বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
 
৯ ফেব্রুয়ারি বেবিচক সদর দফতরে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সিওয়াইডব্লিউসিবি ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন- জেভি’র মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বেবিচক অনুমিত ব্যয়ের চেয়ে অন্তত ২১ শতাংশ কম দর প্রস্তাব করে প্রতিষ্ঠান দুটি। ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হয়।
 
বেবিচক জানায়, নির্মাণ কাজের অনুমতি পাওয়া চীনের ওই দুই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ‘বেইজিং বিমানবন্দর’ নির্মাণের মতো অত্যাধুনিক বিমানবন্দর নির্মাণের অভিজ্ঞতা। এই বিমানবন্দরেও থাকবে সব ধরনের আধুনিকতার ছোঁয়া।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

নরসিংদীতে পোশাককর্মীর পর এবার ৩ সন্তানের জননীকে ধর্ষণের অভিযোগ

Share the post

Share the post আশিকুর রহমান, নরসিংদী :- নরসিংদীর বেলাবতে এক পোশাককর্মীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের পর এবার রায়পুরা উপজেলায় ৩ সন্তানের জননী পঞ্চাশোর্ধ এক নারী ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। পরপর এধরণের ঘটনায় জেলাজুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ছে। তবে বেলাব এর ঘটনায় পুলিশ ২ জনকে আটক করেছেন। আটককৃতরা হলেন, বেলাব উপজেলার মাটিয়াল পাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে দেলোয়ার হোসেন […]

চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোবারকপুরে কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা ও ইফতার মাহফিল

Share the post

Share the postইয়াসিন আরাফাত, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ  চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুরে কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোবারকপুর মাঝাটোলা তরুণ সংঘের আয়োজনে শনিবার (১৫ মার্চ) বিকেলে মাঝাটোলা গ্রামে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়৷ প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন মাদরাসার ৩৫ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজাহার আলী। কোরআন […]