

ফয়সাল আলম সাগর, বিশেষ প্রতিনিধি : কক্সবাজারের পেকুয়ায় সাব মেরিন নৌ-ঘাটি সড়কের আলহাজ্ব কবির আহাম্মদ চৌধুরী পেকুয়া বাজার পয়েন্টে যানজট নিরসনে এই প্রথম উপজেলা প্রশাসনের সতর্কতা মূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করা হলেও নিয়ম নীতির কোন তোয়াক্কা নেই কারো কাছে। অপরদিকে যানজট নিয়ন্ত্রণে পেকুয়ায় ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা থাকলেও তা কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। ফলে কংক্রিটের শহরে যানজট যেন নিত্যদিনের সঙ্গী “স্থানীয়রা জানায় একটি আধুনিক জায়গায় অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এই যানজট।” যানজটে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে বৃহত্তর এই বানিজ্যিক পয়েন্ট পেকুয়ায় যানজট নিরসনে ডিভাইডার স্থাপন করা হলেও বছরের ব্যবধানে সেটি বিস্তীর্ণ হয়ে সীমাহীন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। এতে অসস্তিকর তীব্র যানজট আরও বেগতিক হয়ে উঠে। ফলে যাতায়াত বিপাকে পড়ে উপজেলার প্রায় দুই লক্ষাধিক কর্মব্যস্ত সাধারণ মানুষ ও জরুরী সার্ভিস অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস এবং শিক্ষার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, অসহনীয় তীব্র যানজটে অতিষ্ঠ পথচারী। পাঁচ মিনিটের পথ অতিক্রম করতে সময় লাগে ঘন্টা। উপজেলা প্রশাসনের ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।
সরেজমিন দেখা যায়, পুরো পেকুয়া বাজারের দু’পাশ জুড়ে সড়কের ওপর ব্যাটারীচালিত ইজিবাইক ও সিএনজি’র অবৈধ কাউন্টার। এছাড়া সড়ক দখলকরে দাপটে বিক্রি করছে বিভিন্ন ফলমূল বিক্রেতা। সড়কের বিভিন্ন অংশে ডিভাইডার সরিয়ে বেপরোয়া পার্কিং করছে। অবস্থাদৃষ্টে দেখলে মনে হয়- কতৃপক্ষ দেখেও যেনো দেখছেনা। বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন আক্ষেপ ছুড়ে বলেন, প্রতিবছর এই বাজার থেকে সরকার কোটি টাকার ওপরে রাজস্ব খাতে আদায় করছে। কিন্তুু সুফল পাচ্ছেনা উপজেলাবাসী। আমরা এখান থেকে পরিত্রাণ চাই।
এদিকে জীবিকার তাগিদে সরকারি বিধিনিষেধ অপেক্ষা করে লাইন্সেস বিহীন অসংখ্য ব্যাটারী চালিত (বিপজ্জনক) অটোরিকশায় চালকের স্থানে শিশু। স্বজন হারানো পেকুয়া বাজারের ব্যবসায়ী আবদুল আলিম জানান, সড়কে আর কত প্রাণ গেলে কতৃপক্ষের ঘুম ভাংবে। গত এক মাসের ব্যবধানে একই সড়কে একই জায়গায় ইজিবাইকের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছে আওয়ামী নেতা নাছির উদ্দীন (৫০) ও শিক্ষার্থী ইশরাক মনি (০৭) নামে দুইজন।
পেকুয়ায় যানজট নিরসনে ” দৈনিক ইনকিলাবসহ” বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর প্রথম বারের মত গত (১০ জানুয়ারি) পেকুয়ায় ট্রাফিক পুলিশের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো। নিয়োগের পর প্রথম দুই তিন সপ্তাহ পেকুয়া বাজার সড়কে যানজট মুক্ত থাকলে ও এখন শুদুই দীর্ঘশ্বাস।
এই বিষয়ে পেকুয়ায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) মাহাবুব এ প্রতিবেদকে জানান, পেকুয়ায় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব রয়েছে মাত্র দুই জন। জনবল সংকটের কারণে প্রর্যাপ্ত সেবা বাজার এলাকায় দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। এছাড়া সরকারি নীতিমালা অমান্য করে ৫’শ অধিক অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুর হাতে বিপজ্জনক ইজিবাইকের বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি জানান কাউকে শাস্তির আওতায় আনতে গেলে বিভিন্ন মহল থেকে ফোন করে। তখন একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। উপজেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈনুল হোসেন চৌধুরী জানান, ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী সড়ক ব্যবস্থাপনার দুটি সভা করেছিলাম যেখানে অনেক গুলো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো। তারমধ্যে “বাজার এলাকায় গাড়ি পার্কিং নিষেধ, উপজেলা প্রশাসন” নামে সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে কিন্তু আশানুরূপ সুফল পাওয়া যায়নি। এছাড়া যানজট নিরসনে বাজারে ছয়জন ভলান্টিয়ার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো, অধিকাংশ সময় তারা দায়িত্ব অবহেলার কারণে তাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ পেকুয়া বাজারে যথাযত দায়িত্বে অবেহেলার কারণে ট্রাফিক বিভাগের সাথে কথা বলবো এবং সড়কের ওপরে যে অব্যবস্থাপনা সৃষ্টি করে বিভিন্ন ফলমূল বিক্রি করছে সে বিষয়টা নিয়ে বাজারে দায়িত্বরত তহশিলদার ও চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একদিকে জনবল সংকট অন্যদিকে বিভিন্ন সংগঠন থাকার কারণে ইজিবাইকের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং কিছু সংগঠন ধরাছোঁয়ার বাহিরে থেকে যায়। আমরা চেষ্টা করবো এই সপ্তাহের মধ্যে আরও একটা সভা করে সুনির্দিষ্ট কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার।