বিকাশের প্রতারকচক্র ৩০ সেকেন্ডে টাকা ওঠায় চট্টগ্রামে, ফোন যায় বাগেরহাট থেকে
‘আপনার বিকাশ একাউন্ট আপডেট করতে হবে, না হলে একাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে। আপনার পিন নম্বর বলুন’— বিনীত কণ্ঠে বাগেরহাট থেকে ফোন যায় ঢাকার এক নারীর কাছে। সরল মনে পিন নম্বরটি দিতেই সেকেন্ডের মধ্যে সেই তথ্য চলে আসে চট্টগ্রামে। মুহূর্তেই চট্টগ্রামে থাকা প্রতারকচক্রের সদস্যরা ওই নারীর একাউন্ট থেকে সব টাকা হাতিয়ে নেয়। মাঝখানে সময় লেগেছে কেবল ৩০ সেকেন্ড।
প্রতারণা করে বিকাশ একাউন্টে থাকা টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এমন চক্রের খোঁজ পেয়েছে পুলিশ— যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিকাশ একাউন্টধারীদের কাছে ফোন করে বাগেরহাটে বসে। আর ফোনে প্রতারণা সফল হলে সেই টাকা ক্যাশআউট হয় চট্টগ্রামে। এই চক্রটি ভুয়া ও অন্যের এনআইডি দিয়ে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলে মাত্র ৩০ সেকেন্ডে অন্যের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে পারদর্শী।
গত ১২ ডিসেম্বর এমন প্রতারণার শিকার শিউলী নামে এক নারী রাজধানীর কলাবাগান থানায় মামলা দায়ের করার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ চট্টগ্রাম, বাগেরহাট ও ঢাকা থেকে এই সংঘবদ্ধ চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করে।
জানা গেছে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গত ২২ ডিসেম্বর বিকাশ প্রতারকচক্রের মূল হোতা জুবায়ের ইসলামকে বাগেরহাট থেকে গ্রেপ্তার করার পর তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে শহীদুল ইসলাম ও মাসুদুর রহমান নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়া ঢাকা থেকে একই চক্রের আরও দুই সদস্য মুকুল হাওলাদার ও শামীম মোল্লাকে ধরা হয়। তাদের কাছ থেকে ১৫টি মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন অপারেটরের ২০টি সিম উদ্ধার করা হয়।
যে নারীর অভিযোগসূত্রে এই প্রতারকচক্রের খোঁজ পাওয়া গেছে, ভুক্তভোগী সেই নারী শিউলী জানিয়েছেন, বিকাশের প্রধান কার্যালয় থেকে ফোন করা হচ্ছে— এমন কথা বলে তার কাছে একটি ফোন আসে। অপরপ্রান্তের ব্যক্তি শিউলীকে বলেন, ‘আপনার বিকাশ একাউন্ট আপডেট করতে হবে, না হলে একাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে। আপনার পিন নম্বর বলুন।’ সরল মনে শিউলী তাদের ছয় সংখ্যার পিন নম্বরটি দেন। এর মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে তার একাউন্ট থেকে সব টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
বিকাশ প্রতারকচক্রের সদস্যরা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তারা চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়ান। টাকা পাঠানোর ভান করে তারা বিকাশের বিভিন্ন এজেন্টের দোকান থেকে কৌশলে হিসাব খাতার ছবি তুলে নেন। এরপর সেই ছবি পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাগেরহাটের জুবায়ের ইসলামের কাছে। ছবি থেকে ফোন নম্বর বাছাই করে জুবায়ের টার্গেট করা বিকাশ একাউন্টধারীকে ফোন দেওয়ার কাজটি নিজেই করে থাকেন। সবসময় তাদের মূল লক্ষ্য থাকে, পিন নম্বরটি হাতিয়ে নেওয়া। এটা পেলেই তারা মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিকাশের টাকা ট্রান্সফার করে নেন নিজেদের একাউন্টে। এরপর সেই টাকা ক্যাশআউট করা হয় চট্টগ্রামে।
ক্যাশআউট করার ক্ষেত্রেও তারা আরেক কৌশলের আশ্রয় নেয়। পাঁচ হাজার টাকার বেশি টাকা তুলতে এনআইডি লাগে বলে, তারা প্রতিবারই পাঁচ হাজার টাকার কম ক্যাশআউট করে। অন্যদিকে প্রতারকচক্র নিজেরা যেসব একাউন্ট খোলে, সেগুলো খোলা হয় কখনও ভুয়া এনআইডি ব্যবহার করে, কখনও বা আবার অন্যজনের এনআইডি ব্যবহার করে। এছাড়া বিভিন্ন অপারেটরের সিমও কৌশলে অন্য লোকের এনআইডি ব্যবহার করে নিবন্ধন করে।