বাগেরহাটে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য এবং কুটির শিল্প

Share the post
আবহমাব বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য গ্রাম বাংলার চিরচেনা, চির পরিচিত সামগ্রী আর হাতে তৈরী সৌখিনতা সৌন্দর্য আর নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী খ্যাত কুটির শিল্প বা মৃৎশিল্প মোরেলগঞ্জে এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। একদা এখানকার গ্রামের ঘরে ঘরে হাতে তৈরির নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করা গেলেও যন্ত্রচালিত, আধুনিক যুগ জামানার এই সময়ে গ্রামীন ঐতিহ্যের রকমারী সামগ্রীকে তাড়িত করে যন্ত্রচালিত তৈরী পণ্য দখল করে নিয়েছে। প্লাষ্টিক, স্পাত, লোহা, আর নানান ধরনের প্রযুক্তি নির্ভর সামগ্রী দখল করে নিয়েছে কুটির আর হস্তশিল্পের স্থান।মোরেলগঞ্জের গ্রামীন জনপদের অতি পরিচিত কুলা, ঝুড়ি, ধামা, ডালা,এখন দিনে দিনে স্মৃতি হতে চলেছে, কথা হয় মোরেলগঞ্জের বনগ্রাম ইউনিয়নের বসবাসরত এক বোনের সাথে, তিনি একজন মৃৎশিল্পের প্রস্তুতকারক ছিলেন, তিনি একসময় মাটির নানা সরঞ্চাম তৈরি করতো,তা বিক্রি করে চালাতো পুরো সংসার,এখন তিনি স্বামীর আয়ের উপর নির্ভরশীল,কারন এখন কেহ মাটির কোন সরঞ্চাম কিনতে চায় না,এখন তিনি এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন,তবে সরকার পুনরায় এ শিল্প চালু করলে এবং আর্থিক সহায়তা পেলে তিনি আবার এ পেশায় ফিরতে চান। মোরেলগঞ্জ উপজেলা ১৬ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত,একসময় মোরেলগঞ্জ বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা হিসেবে পরিচিত ছিল,এ উপজেলায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটি অংশ এক সময় বাসবেত,কাসাপিতল সহ বিভিন্ন গ্রামীণ শিল্পের কাজ করতো,জানা গেছে, বেশকয়েকটি ইউনিয়নে মৃৎশিল্প তৈরীকারক পরিবারগুলোর মধ্যে চলছে অভাব–অনটন। কারণ তাদের তৈরি পণ্য আগের মত বাজারে চলছে না বলে বদলে যাচ্ছে কুমারপাড়ার জীবনের আসল চিত্র। গ্রামে এ পেশার সাথে জড়িত রয়েছে প্রায় শতাধিক পরিবার।
পূর্বপুরুষের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে মৃৎশিল্প প্রস্তুতকারী পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে মেলায় অংশ গ্রহণের জন্য তৈরী করছে ছোট ছোট পুতুল ও মাটির খেলনা। পূর্বে মৃৎ শিল্পের খ্যাতি ছিল কিন্তু আজকাল অ্যালুমিনিয়াম, চীনা মাটি, মেলা–মাইন এবং বিশেষ করে সিলভারে রান্নার হাড়ি কড়াই প্রচুর উৎপাদন ও ব্যবহারের ফলে মৃৎশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। কথিত আছে মৃৎশিল্প প্রায় দুই থেকে আড়াই শত বছর পূর্ব থেকে চলে আসছে। জানা যায় অতীতে এমন দিন ছিল যখন গ্রামের মানুষ এই মাটির হাঁড়ি কড়া, সরা,বাসন, মালসা, ঘরের লালি, কুয়ার চাক ইত্যাদি দৈনন্দিন ব্যবহারের সমস্ত উপকরণ মাটির ব্যবহার করত কিন্তু আজ বদলে যাওয়া পৃথিবীতে প্রায় সবই নতুন রূপ। নতুন সাজে আবার নতুন ভাবে মানুষের কাছে ফিরে এসেছে।আধুনিকতার ছোয়ায় প্রাচীন মৃৎশিল্পী আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে উপজেলার নদীতীরবর্তী গ্রামের মা বোনেরা এক সময় কাঁথা সেলাই করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করলেও আধুনিকতার এই যুগে কাঁথার কদর নেই কাঁথার স্থানে যন্ত্রচালিত মেশিনে তৈরী বেডসিট, হাতে তৈরী চেটাই ও হারিয়ে গেছে, স্থান দখল করেছে প্লাষ্টিকের বিছানা গ্রামীন জনপদে এক সময় হাক দিয়ে জানান দিত কুলা, ঝুড়ি, ধামা, পালি, বিক্রির কথা, আবার সারাই করার কথাও শোনাতে কিন্তু সময়ের ব্যবধানে আর বাস্তবতার নিরিকে গ্রামে গ্রামে হাক দেওয়র দৃশ্য নেই। মৎস্য শিকারের অন্যতম মাধ্যম জাল তৈরী হয় বর্তমানে মেশিনে, গ্রামীন ভাষায় খেপলা জাল বলা হলেও দৃশ্যতঃ খেপলা জাল বর্তমান সময়ে মেশিনে তৈরী হচ্ছে। মৎস্য শিকারীরা এক সময় বাশের কুতি এবং চেটার তৈরি ছিপে সুতা বরশির মাধ্যমে মৎস্য শিকার করলেও আধুনিক যন্ত্রচালিত যুগে মেশিনের তৈরী ছিপ, সুতাই বর্তমান সময়ের মৎস্য শিকারের অন্যতম মাধ্যম। কৃষি উৎপাদন এবং বিপননে গরুর নাঙ্গলের বিকল্প ছিল না। কিন্তু বর্তমান সময়ে চাষাবাদে গরুর লাঙ্গল এর পরিবর্তে যন্ত্রচালিত বাহনই জমিচাষ করছে, ধান মাড়াই করার জন্য ছিল গরুর উপস্থিতি কিন্তু যন্ত্রচালিত যুগে গরু নয় ধান মাড়াই করার জন্য আধুনিক যন্ত্রের আবিস্কার এবং উপস্থিতি ধান মাড়াই করছে। গ্রামের মাদের অতি পরিচিত ঢেকি হারিয়ে যেতে বসেছে। একদা গ্রামের মা বোনেরা ঢেুিুকর মাধ্যমে ধান মাড়াই করে চাল তৈরী করতো কিন্তু বর্তমান সময়ে গ্রাম বাংলার চিরায়ত বৈশিষ্ট্য ঢেকি হারিয়ে যেতে বসেছে। গ্রাম বাংলার বিবাহ মানেই পালকি কিন্তু সেই পালকি আজ স্মৃতির খাতায় হাতড়াতে হচ্ছে। গ্রামে গ্রামে বেয়ারারা পালকি চড়িয়ে নববধুকে নাচিয়ে গাইয়ে ঘরে ফিরত, গ্রামের শিশু কিশোররা পালকির পিছে পিছে হাটতো, সেই অনন্য অসাধারন দৃশ্য লুকায়িত, নির্বাসিত, নিকট অতীতেও হারিকেনের অস্তিত্ব ছিল, বিদ্যুতের উপস্থিতি আর আলো ঝলমলে যুগ জামানায় হারিয়ে যেতে বসেছে হারিকেন, এক সময়ে গ্রামে গ্রামে হুক্কার উপস্থিতি ছিল, গ্রামীন জনসাধারন হুক্কা টেনে অলস সময় পার করলেও সেই হুক্কার অস্তিত্ব বিপন্ন। গ্রামীণ এসব ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প বা মৃৎশিল্প পুনরায় ফিরিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে এই উপজেলায় কি কি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে সে বিষয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডঃ শাহ-ই আলম বাচ্চু এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান তার সরকার জনবান্ধব সরকার,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সর্বদা গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নের কথা ভাবেন,তিনি বলেন গ্রামীণ জনগোস্ঠোর কর্মসংস্হান সৃস্টির লক্ষে বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদে ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প বা মৃৎশিল্প পুনরায় ফিরিয়ে আনতে সরকার দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প গ্রহন করেছে ,তিনি বলেন মৃৎশিল্প আমাদের অতীত ঐতিহ্য, প্রাচীন এই পেশায় ফিরতে উপজেলা পরিষদ থেকে নারীদের নানবিধ প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা করা হয়েছে যাতে তারা পুনরায় উৎসাহিত হয়ে আবার এই প্রাচীন মৃৎশিল্প পেশায় ফিরতে পারেন,নিজেদের কর্মসংস্হানে ফিরে যেতে পারেন। মোরেলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হকের কাছে গ্রামীণ ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প কারখানা পুনরায় চালুর ব্যাপারে তার সরকারের পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ জনপদের জীবনমান উন্নয়নে দিনরাত পরিস্রম করে যাচ্ছেন,আমরা মোরেলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ গ্রামের জেলে,তাতী,কামার,কুমার সহ বিভিন্ন স্রেনীপেশার মানুষকে প্রাচীন এই পেশায় ফিরতে পুনরায় উৎসাহ দিচ্ছি,তিনি বলেন যাতে হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন এই শিল্প আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসুক সে লক্ষে উপজেলা পরিষদ
মৃৎশিল্প প্রস্তুতকারকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্য আর কুটির শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে এ ব্যাপারে সরকারের কর্মসুচি কি সে বিষয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রায়হান কবির এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকার ইতমধ্যে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প গ্রহন করেছে,গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে পুনরায় কুটিরশিল্পে ফিরিয়ে আনতে গ্রামের বসবাসরত মৃৎশিল্প প্রস্তুতকারী যেমন বাসবেত,কাসাপিতন,কামার, কুমার,তাতীদের খুঁজে খুজে দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে,প্রশিক্ষণ শেষে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়ত প্রাদান করা হবে বলে জানান

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

পূর্বধলায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী গ্রেফতার

Share the post

Share the post সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা : নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় মো. মাসুদ রানা (৩৬) নামে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের এক কর্মীকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ।গ্রেফতারকৃত মাসুদ রানা উপজেলার সদর ইউনিয়নের লাল মিয়া বাজার (বামনডহর) এলাকার মো. জালাল উদ্দিনের ছেলে। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দুপুরের দিকে মাসুদ রানাকে জেলা আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। এরআগে গত […]

দুর্গাপুর গণহত্যা দিবস পালিত

Share the post

Share the postদুর্গাপুর(নেত্রকোণা) প্রতিনিধি :নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে সোমবার সকালে উপজেলা পরিষদ হলরুমে আলোচনা সভা হয়। আলোচনা শুরুর আগে গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে এক আলোচনা সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর এর সভাপতিত্ব ও একাডেমিক সুপারভাইজার নাসির উদ্দিন এর সঞ্চালনায় বক্তব্য […]