বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পিআর: সম্ভাবনা না সংকট?

Share the post
ফাহাদ, সোনারগাঁ : পিআর নির্বাচন পদ্ধতি: কী, কেন ও কোন দেশে আছে এই ব্যবস্থা বাংলাদেশ একটি একক ও কেন্দ্রিক রাষ্ট্র (Unitary State), এখানে সমাজ কাঠামো তুলনামূলকভাবে অভিন্ন। ফলে PR পদ্ধতি আঞ্চলিকতা, ধর্মীয় মেরুকরণ, এবং বিদেশি প্রভাবিত গোষ্ঠীর উত্থান ঘটাতে পারে রাজনীতিতে দলীয় শৃঙ্খলা দুর্বল এবং নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, প্রশাসন সবকিছুই কাঠামোগত দুর্বলতায় জর্জরিত। ফলে PR ব্যবস্থায় এক ধরনের ‘রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা’ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। পি আর পদ্ধতি চালু হলে ভারত কি কোনো বাড়তি সুবিধা পাবে?
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানা প্রকার কূটনৈতিক ও গোপন প্রভাব রেখেছে ভারত । PR ব্যবস্থায় ছোট ছোট দল সংসদে ঢুকে পড়লে, সেখানে ভারত-সমর্থিত বা ভারতপন্থী দলও সংসদে আসার সম্ভাবনা থেকে যায়! এছাড়া, সীমান্তবর্তী অঞ্চলের জাতিগত বা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কোনো সংগঠন PR ব্যবস্থায় সংগঠিত হয়ে সংসদে ঢুকলে সেটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় চরম হুমকি তৈরি করতে পারে।
বাংলাদেশে PR নিয়ে আলোচনা হঠাৎ এত বেড়ে গেল কেন?২০২৫ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল তরুণ সমাজের পক্ষ থেকে গণতন্ত্রের প্রতীকী পুনর্জাগরণ। সেই প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ অংশগ্রহণমূলক ও জবাবদিহিমূলক রাজনৈতিক কাঠামোর দাবি তোলে। এর মধ্যেই PR পদ্ধতিকে “অন্তর্ভুক্তির একটি সম্ভাব্য পথ” হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, “সংসদে আসন দিলেই গণতন্ত্র হয় না।” যদি সেই অংশগ্রহণ রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতাকে দুর্বল করে, তাহলে সেটা কোনো সমাধান নয়, বরং বড় সংকট।
কী হতে পারে সম্ভাব্য সমাধান?
বাংলাদেশের মতো দেশে হঠাৎ করে পূর্ণাঙ্গ পিআর ব্যবস্থা চালু না করে ধাপে ধাপে, কাঠামোগত প্রস্তুতির মাধ্যমে পদ্ধতিটি বাস্তবায়ন করা বাঞ্ছনীয়। এজন্য কয়েকটি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু: ভবিষ্যতে যদি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠিত হয়, তবে প্রথম ধাপে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে সকল শ্রেণি-পেশা ও গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা যেতে পারে।
নিম্নকক্ষে FPTP পদ্ধতি বজায় রাখা: বর্তমানে বিদ্যমান সরাসরি ভোটে বিজয়ী হওয়ার পদ্ধতি (FPTP) নিম্নকক্ষে অস্থায়ীভাবে বজায় রাখা যেতে পারে, যাতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
দশ বছর পর মূল্যায়ন: এক দশক পরে এই পদ্ধতির ফলাফল পর্যালোচনার মাধ্যমে পূর্ণ পিআর ব্যবস্থায় যাওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনা করা যেতে পারে।
গণতান্ত্রিক কাঠামো শক্তিশালী করা: শুধু নির্বাচনী পদ্ধতি বদল নয়, বরং গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, জবাবদিহিতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, এবং নাগরিক সচেতনতা। এসব ছাড়া শুধু পদ্ধতির পরিবর্তন এক নতুন সংকট তৈরি করতে পারে।
পিআর পদ্ধতি নিঃসন্দেহে গণতান্ত্রিক অন্তর্ভুক্তির একটি সম্ভাব্য পথ, তবে এর সাফল্য নির্ভর করে দেশের সামগ্রিক সাংবিধানিক প্রস্তুতি, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতিশীলতার উপর।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

সাতক্ষীরা সীমান্তে ১১ লক্ষাধিক টাকার ভারতীয় মালামাল জব্দ

Share the post

Share the postসৈয়দ আব্দুস সালাম পান্না, সাতক্ষীরা : বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট ২০২৫) তারিখ সাতক্ষীরা ব্যাটালিয়ন (৩৩ বিজিবি) এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় চোরাচালান বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ৯৫ বোতল ভারতীয় মদ এবং ১০০ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিলসহ প্রায় বারো লক্ষ টাকার ভারতীয় মালামাল আটক করেছে। বিজিবি জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কাকডাঙ্গা বিওপির আভিযানে গেড়াখালী ও মজুমদার খাল […]

সাতক্ষীরায় জলবায়ু পরিবর্তন ও নারীর সহিংসতা প্রতিরোধে সংলাপ

Share the post

Share the postসৈয়দ আব্দুস সালাম পান্না, সাতক্ষীরা : জলবায়ু পরিবর্তন ও নারীর সহিংসতা প্রতিরোধে বার্ষিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সকালে লিডার্স এর আয়োজনে, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) ও এম্বাসী অব সুইডেন এর সহযোগিতায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কমিউনিটি ভিত্তিক জলবায়ু সহনশীলতা ও নারী ক্ষমতায়ন কর্মসূচি (সিআরইএ) প্রকল্প এর আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও […]