সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা: দীর্ঘ তিন বছর পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের করা হিন্দু সম্প্রদায়ের দোকান দখলমুক্ত হয়েছে জগদীশ মন্ডল নামে এক ব্যক্তির দুটি দোকান ঘর। তার কাছ থেকে ভাড়ায় নিয়ে ওই দুটি দোকান ঘর দখলে নিয়েছিল ফজল হক নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি।কিন্তু দোকান ফেরত চাইতে গিয়ে দোকানের মালিক একাধিকবার মারধরের শিকার হয়েছেন জগদীশ ও তার ছেলে। একাধিকবার স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের দারস্থ হয়েও কোনো সুফল মেলেনি জগদীশের। অবশেষে গত মাসের (২৪ আগস্ট) শনিবার নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌরশহরের থাকা সেনাবাহিনীর সহায়তায় ওই দুটি দোকান ঘর ফিরে পেয়েছেন জগদীশ। জানা গেছে, জগদীশ মন্ডল মোহনগঞ্জ পৌরশহরের উত্তর দৌলতপুরের বাসিন্দা। আর দোকান দখলে রাখা ফজল হক একই উপজেলার পানুর গ্রামের বাসিন্দা।
এদিকে শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর ) স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা ও জগদীশ মন্ডলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পৌরশহরের খাদ্য গুদামের পূর্ব দিকে শেয়ালজানি খালের পাড়ে থাকা দুটি দোকান ঘর অনেক বছর আগে রেলওয়ে থেকে ইজারা নেন জগদীশ। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি ফজল হকের কাছে একটি দোকান ঘর চার বছরের জন্য ভাড়ায় দেন জগদীশ। পরে আর বছর মৌখিকভাবে ভাড়া নেন ফজল হক। ওই পাঁচ বছর ভাড়া ঠিকঠাক মতো দিলেও এরপর দোকানটি দখলে নিয়ে নেন ফজল হক। ভাড়া চাইতে গেলে উল্টো হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান তিনি। কয়েক দফা ভাড়া চাইতে গিয়ে মারধের শিকার হন জগদীশের ছেলে শুভ সরকার। এমনকি একবার শুভ সরকারের স্ত্রীকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করে ফজল হকের লোকজন। পরে পাশে থাকা অপর দোকানটিও নিজের কব্জায় নিয়ে নেন ফজল হক। এসব নিয়ে মামলা হলেও কোনো ফল হয়নি। এমনকি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কাছে একাধিকবার নিলিশ করেও কোনো কাজ হয়নি। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ফজল হকের সঙ্গে আর কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না অসহায় পরিবারটি। তাই সরকার পতনের পর এলাকায় সেনাবাহিনী আসায় কাগজপত্র নিয়ে সেখানে যান জগদীশ। পরে বৈধ কাগজপত্র দেখে দোকান দুটি গত(২৪ আগস্ট ) শনিবার উদ্ধার করে দেয় সেনাবাহিনী।
এ বিষয়ে জগদীশ মন্ডলের ছেলে শুভ সরকার জানান, দোকান ঘরটি ভাড়ায় নেওয়ার পর পাঁচ বছর ঠিকমতো ভাড়া দিয়েছিল। তারপর ফজল হক দখলে নিয়ে যায় দোকানটি। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কাছে গিয়েছি কিন্তু তারা কোনো সমাধান দিতে পারেনি। ফজল হক প্রভাবশালী হওয়ায় কাউকেই পাত্তা দেননি। একবার ভাড়া অথবা দোকান বুঝিয়ে দিতে বললে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে বেধড়ক মারধর করে। পরে উল্টো আমাদের অপর দোকানটিও দখলে নিয়ে নেয়। মামলা করে কোনো ফল পাইনি। তিনি আরও জানান, সম্প্রতি সেনাবাহিনী এলাকায় আসার পর কাগজপত্র তাদের দেখাই ও বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলি। পরে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা কাগজপত্র দেখে ও আশপাশের লোকজনের কাছে খোঁজখবর নিয়ে ঘটনার সত্যতা পায়। পরে তারা দোকান দুটি উদ্ধার করে দেয়। আমরা সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞ।এবিষয়ে অভিযুক্ত ফজল হক বলেন, ওই দোকান ভাড়ায় ছিলাম। ছেড়ে চলে এসেছি। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলাম। আগেই এসব দোকান ছেড়ে দেওয়ার দরকার ছিল। এ বিষয়ে পৌর কাউন্সিলর মানিক তালুকদার বলেন, জগদীশ মন্ডল একজন নিরিহ মানুষ। তার দোকানগুলো দখলে দীর্ঘদিন ধরে দখলে ছিল। এগুলো সেনাবাহিনীর সহায়তায় উদ্ধার হয়েছে। এতে পরিবারটির খুব উপকার হয়েছে। আমরা সকলেই সহযোগিতা করেছি।