নেত্রকোনার আলোকিত ব্যক্তি শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার আর নেই
সোহেল খান দুর্জয়,নেত্রকোনা : নেত্রকোনা আলোয় আলোকিত ব্যক্তি শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার আর নেই বুধবার দুপুর ২টা ৪৫ মিঃ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় স্বাধীনতা পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত দেশবরেন্য লেখক মৃত’্যবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তিনি স্থ্রীসহ এক ছেলে ও মেয়ে রেখে যান। কবি স্বপন পাল লেখকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান বিকেলে তার মরদেহ নেত্রকোনায় নিজ বাসভবন সাতপাই বানপ্রস্থে আনা হবে।
নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দপাড়া গ্রামে ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ আগস্ট (বাংলা ১৩৪৩ সনের ২ ভাদ্র) তারিখে যতীন সরকারের জন্ম হয় । বাংলাদেশের একজন প্রগতিবাদী চিন্তাবিদ ও লেখক অধ্যাপক যতীন সরকার। তার আনুষ্ঠানিক লেখাপড়া শুরু হয় রামপুর ফ্রি বোর্ড প্রাইমারি স্কুলে। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মেট্রিক পরীক্ষায় পাস করেন। টিউশনি ক’রে টাকা জমিয়ে ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে আইএ-তে ভর্তি হন নেত্রকোণা সরকারী কলেজে। এ সময় নেত্রকোণা কলেজের ছাত্রসংসদের সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হন। আইএ পাশের পর ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে বিএ ক্লাশে ভর্তি হন। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে বিএ পরীক্ষা দিয়েই জীবিকার তাগিদে শিক্ষকতা শুরু করেন নেত্রকোণার আশুজিয়া হাইস্কুলে। এরপর তিনি শিক্ষকতা করেন বারহাট্টা সিকেপি পাইলট হাই স্কুলে। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়নের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এমএ পাস করেন তিনি ১৯৬৩-তে। এ বছরই তিনি যোগ দেন ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর হাই স্কুলে বাংলার মাস্টার হিসেবে। পরবর্তী বৎসরে,১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে,তিনি ময়মনসিংহ শহরের নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা বিষয়ে লেকচারার পদে চাকুরি লাভ করেন। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে কানন আইচ-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। যতীন সরকার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তার রচিত গ্রন্থসমূহ গভীর মননশীলতা ও মুক্তচিন্তার স্বাক্ষর বহন করে। ১৯৬০-এর দশক থেকে তিনি ময়মনসিংহ শহরের সকল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি অসাধারণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
সময়ের অগ্রজ চিন্তাবিদ যতীন সরকার। তার প্রকাশিত ৩৫টি বইয়ের মধ্যে ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা’,’পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু-দর্শন’,’বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য’,’প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন’ উল্লেখযোগ্য। পেশাগত জীবনে সাহিত্যের কীর্তিমান অধ্যাপক। সাহিত্য-সমাজ-সংস্কৃতি-ইতিহাস- দর্শন-রাজনীতির পরিসরে তার লেখার উপস্থিতি বলিষ্ঠ। তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার।