নেত্রকোনায় পৌরসভার লাইসেন্সে চলছে ব্যাটারিচালিত মেট্রোরিকশা, দূর্ভোগ চরমে
সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা: নেত্রকোনা পৌরসভার লাইসেন্স নিয়ে চলছে কয়েক হাজার ব্যাটারিচালিত মেট্রোরিকশা (ইজিবাইক)। সারা দেশের ব্যাটারিচালিত রিক্সা-ভ্যান বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাসহ সড়ক পরিবহন বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অমান্য করে ব্যাটারিচালিত ওই অট্রোরিকশার লাইসেন্স দিচ্ছে নেত্রকোনা পৌর কর্তৃপক্ষ। ফলে শহরে যেমন বেড়েছে যানজট, তেমনি দেখা দিয়েছে চরম বৈদ্যুতিক সমস্যা। সরেজমিন দেখা গেছে, ব্যাটারিচালিত ওই মেট্রোরিকশাগুলোর পেছনে বা চালকের বসার সিটের নিচে সাঁটানো হয়েছে নেত্রকোনা পৌরসভার লাইসেন্স। নেত্রকোনা পৌরসভার সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক বছর মেয়াদি ওই লাইসেন্সগুলো কয়েক দফায় নবায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়াও নিয়ম বহির্ভূতভাবে এর আগেও নেত্রকোনা পৌরসভার সাবেক মেয়র ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্স। পুরো শহরজুড়ে লাগামহীন যানজট লেগে থাকায় ওইসব অটোরিকশা চলাচলে দুই শিফট পদ্ধতি চালু করা হয়। এর ফাঁকে সড়কে নামতে শুরু করে ব্যাটারিচালিত মেট্রোরিকশা। বর্তমানে শহরজুড়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার পাশাপাশি চলাচল করছে প্রায় ৮০০০ ব্যাটারিচালিত মেট্রোরিকশা। এ ছাড়াও রয়েছে লাইসেন্সপ্রাপ্ত অনেক প্যাডেল চালিত রিকশা।
এ ছাড়াও যার ফলে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বাস টার্মিনাল এলাকায় রীতিমতো বেঁধে থাকছে যানজট। যানজট নিরসনে মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগী, শিশু, বৃদ্ধ, মহিলাসহ নানা বয়সি যাত্রী আর সাধারণ মানুষ। মেট্রোরিকশা চালক মো. হযরত বলেন, ২০ হাজার টাকায় তিনি লাইসেন্সটি পেয়েছেন। টাকাগুলো নিয়েছেন পৌরসভার লোকজন। চালক রবিউল ইসলাম বলেন, পৌরসভা থেকে মেট্রোরিকশার লাইসেন্স আর নম্বরপ্লেট বিক্রি করার সুযোগে তারা এই ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাচ্ছেন। পৌরসভার লোকজন লাইসেন্স ও প্লেট বিক্রি করেছেন। নেত্রকোনা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা বলেন, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পায়েচালিত রিকশার লাইসেন্স দিয়ে অবৈধ মেট্রোরিকশার বৈধতা দেওয়ার ষড়যন্ত্র চালানো হয়েছে। দ্রুত অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
নেত্রকোনা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের এক সদস্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, ‘নেত্রকোনা পৌরসভা থেকে চলাচলের জন্য ব্যাটারিচালিত মেট্রোরিকশা (ইজিবাইক) গুলোকে পায়েচালিত রিকশার লাইসেন্স দিয়েছে। লাইসেন্স দেওয়ার দায়িত্ব তাদের না। পৌরসভার মেয়র সাহেব পায়েচালিত রিকশার লাইসেন্স দিয়েছেন মেট্রোরিকশায়। ব্যাটারিচালিত মেট্রোরিকশা (ইজিবাইক) আমাদের সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়াও এই লাইসেন্স দেওয়া নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো মিটিং করেননি পৌর কর্তৃপক্ষ।’ ইজিবাইক বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্যের বিষয়টি মেয়র সাহেবের বলে জানান তিনি। বক্তব্য নিতে নেত্রকোনা পৌরসভার সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, ২০২১ সালের (২০ জুন) সড়ক পরিবহনবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় সড়ক দুর্ঘটনারোধে সারা দেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর সারা দেশে চলা অবৈধ ব্যাটারিচালিত ৪০ লাখ ইজিবাইক বন্ধের নির্দেশসহ আমদানি ও ক্রয়-বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা আর অবৈধ ইজিবাইক আমদানি থেকে বিরত থাকতে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে রুল জারি করেন বিচারপতি মামনুন রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ।তা এখনো চলমান রয়েছে।