

সোহেল খান দূর্জয়,নেত্রকোণা প্রতিনিধি : ভেঙে গেছে নেত্রকোণার লাখ লাখ মানুষের স্বপ্ন ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢল এখন প্রবল বেগে ঢুকছে নেত্রকোণায়।দূর্গাপুর কলমাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে পানি প্রবেশ করে নতুন এক আতংকের জন্ম দিয়েছে নেত্রকোণা জেলাজুড়ে। ইতিমধ্যে বারহাট্টা, কলমাকান্দা ও দূর্গাপুরের বিস্তৃত এলাকা হয়ে গেছে প্লাবিত। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে নদী ভাঙনের ঘটনায় নতুন করে অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে নেত্রকোনার বন্যা পরিস্থিতি।
এছাড়া বারহাট্টার সাহতা,চিরাম,আসমা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কংশ নদীর ইতিমধ্যে ভেঙে যাওয়ায় অন্তহীন দুভোর্গে বন্যাকবলিত মানুষ। কিন্তু কংশ নদীর বিভিন্ন জায়গাই গত বৃহস্পতিবার ভেঙে যাওয়ায় ‘মরার উপর খাঁড়া ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে বারহাট্টার মাটি ও মানুষের জীবনে। বিশেষ করে বিশুদ্ধ খাবার পানীর অভাবে হাকাকার করছে এ এলাকার মানুষ।
বারহাট্টা উপজেলার চিরাম গ্রামের বাসিন্দা মুদি দোকানদার দিল মিয়া বলেন, তীব্র পাহাড়ি ঢলের ধাক্কায় নদী ভেঙে গেছে প্রায় ২৫ ফুট। ধীরে ধীরে পানির বেগে রাস্তা ঘাঠ আরও ভাঙছে। গতকাল সকাল পৌনে ১১ টার দিকে লামার পাড়া রাস্তায় কমপক্ষে ৭০ ফুট অংশ ভেঙে গিয়েছে। বাঁধ ভেঙে পাহাড়ি ঢল ঢুকে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় পানি কোনো বাধা না পেয়ে তীব্র গতিতে সরাসরি কংশে গিয়ে ঢুকছে। ফলে পুরো নেত্রকোনা জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।
ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে বানভাসি বারহাট্টা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ খাবারের তীব্র সংকটে ভুগছে। সোমেশ্বরী নদী উপচে পানি লোকালয়ে আসা অব্যাহত থাকায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা বাড়ছে। দূর্গাপুর উপজেলায় বন্যাতে হাজারো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। খাবার পানির অভাবে ঝুঁকি নিয়েই অনেকে দূষিত পানি পান করছেন।
কলমাকান্দা উপজেলা প্রশাসন জানায়, উপজেলার প্রায় আটটি ইউপিই বন্যা কবলিত এলাকা। পুরো উপজেলায় বন্যার পানিতে অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বানভাসি অনেক এলাকার মানুষদেরকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল ও শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। অনেক এলাকায় খাবারের ব্যবস্থা হলেও বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র হয়েছে। বানের পানিতে বাড়ি-ঘর ডুবে যাওয়ায় অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানান, তার ইউপির কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি।বিভিন্ন স্থানে বাঁধ রক্ষায়ও কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
ত্রাণের তালিকায় বিশুদ্ধ পানি নেই। অনেক এলাকায় চুলা জ্বালিয়ে পানি ফুটানোর মত অবস্থা নেই কোথাও। কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবুল হাসেম জানান, উদ্বাখালি নদীতে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। নদী ভেঙে যাওয়ায় নেত্রকোনার অন্যান্য উপজেলায়ও আশঙ্কা আছে পানি বৃদ্ধির। ইতিমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকায় চাল বিতরণ করা হয়েছে। আরও চাল ও শুকনো খাবারের চাহিদার কথা জেলা প্রশাসনের কাছে জানানো হয়েছে।
এদিকে, উজানে ঢল ও ভারী বর্ষণে নেত্রকোনার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। নতুন করে জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে। বন্যার পানিতে সড়ক প্লাবিত হওয়াতে জেলা সদরের সঙ্গে কয়েকটি উপজেলার সরাসরি যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রবল স্রোতে নিমিষেই উধাও হয়ে গেছে কয়েকটি গ্রাম। নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গতকাল শুক্রবার সকালে সোমেশ্বরী নদীর পয়েন্টে কংশ নদীর পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার আটপাড়া উপজেলা সদরে কংশ পানি বিপৎসীমার ১৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। একই সময়ে নেত্রকোণার উজানে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ২১৮ মিলিমিটার। এ কারণে ব্যাপক পাহাড়ি ঢল নামছে নেত্রকোণায়। পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার দূর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। এর মধ্যে কুল্লাগড়া, গাওগান্দিয়া, ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল খালেক জানান, যেভাবে পানি বাড়ছে, তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে দুই দিনের মধ্যে পুরো উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে যাবে। এসব পরিবারের মধ্যে প্রশাসন শুকনা ও রান্না করা খাবার বিতরণ করছে।বারহাট্টা উপজেলায় বেশ কয়েকটি আশ্রয়ণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখানে কয়েক শত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। নেত্রকোণা জেলায় ১৫ দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। নামছে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল। এতে গত শনিবার থেকে জেলার ১০টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত উপজেলার মধ্যে জেলা বারহাট্টা ও কলমাকান্দা এবং দূর্গাপুর উপজেলা বেশি আক্রান্ত। এসব উপজেলায় প্রায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মাজহারুল ইসলাম জানান, পুরো উপজেলাই এখন বন্যাকবলিত। সাহতা,রায়পুর,আসমা ও চিরাম ইউনিয়নের অবস্থা বেশি খারাপ। পুরো উপজেলায় প্লাবিত। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস জানান, বন্যার্ত পরিবারের মধ্যে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের সব দিক থেকে সার্বিক প্রস্তুতি আছে।