নলুয়া মার্কেটে আগুন ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি
আল হাবিব,সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের নলুয়া নতুনবাজার মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনায় একটি মালভর্তি গোদামঘর, একটি মোদীমালের দোকান ও দুইটি চায়ের স্টল, মার্কেটের টিনের ছাদ, পাকা দেয়াল, দরজা-জানালাসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শনিবার (০২ জানুয়ারী) দিবাগত রাতে এই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়রা প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নেভাতে সক্ষম হন। রোববার (০৩ জানুয়ারী) খোজ নিয়ে জানা যায়, নলুয়া নতুন বাজারে ৪ দোকানের একটি মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এই মার্কেটের পূর্ব দিকের দোকান এবং পশ্চিম দিকের দোকান চায়ের স্টল। মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে একটি মোদী মালের দোকান অপরটি ফ্রেশ ও প্রাণ কোম্পানীর বিভিন্ন পণ্যের গোদামঘর। এই গোদামঘর থেকে প্রথমে আগুনের সুত্রপাত হয়। পরে মোদীমালের দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন ছড়িয়ে পড়ে দুই দিক থেকে দুই চায়ের স্টলেও। তবে কীভাবে আগুন লেগেছে কেউ বলতে পারেননি। স্থানীয়রা জানান, ফ্রেশ ও প্রাণ কোম্পানীর ডিলারদের গোদাম ঘরে আগুন লাগার ঘটনার খবর প্রথমে মোদী দোকানের মালিক খলিল মিয়ার ছেলে জুয়েল মিয়া ও সাথে থাকা রানা মিয়া মোবাইল ফোনে এলাকার একাধিক ব্যক্তিকে জানান। প্রতিদিনের মতো ওইদিনও তাঁরা ঘুমিয়ে ছিলেন মোদীমালের দোকানে। এই ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দা জলিল মিয়া, জনি মিয়া, শহীদ মিয়া, আকামত মিয়া, আব্দুল হক, দেলোয়ার হোসেনসহ অনেকে আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে দৌঁড়ে আসেন। তাঁরা পার্শ্ববর্তী মুগাই নদীতে পাওয়ার পাম্প মেশিন লাগিয়ে পানি ছিটিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। মোদী মালের দোকানে ঘুমিয়ে থাকা জুয়েল মিয়া জানান, আমরা প্রতিদিনের মতো ওইদিনও দোকানে ঘুমিয়ে ছিলাম। রাতে হঠাৎ পাশের গোদাম ঘরে আগুন লাগার ঘটনা টের পেয়ে দ্রুত ঘুম থেকে জেগে উঠে মোবাইল ফোন দিয়ে আমার সাথে থাকা রানা মিয়া এলাকার কয়েক জনকে এই বিষয়ে জানান। আমাদের সুর চিৎকারে পার্শ্ববর্তী বাসিন্দারা চলে আসেন এবং অনেক সময় চেষ্টা করে আগুন নেভাতে সক্ষম হন। চায়ের স্টালের মালিক রহমত আলী জানান, আগুন লাগার ঘটনা শুনে বাড়ি থেকে দ্রুত চলে আসি। ততক্ষণে আমার দোকানের টিভি, চকেস, একাধিক সিলিং ফ্যান, আসবাবপত্র ও তৈরি মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। অপর চায়ের স্টলের মালিক সানোয়ার হোসেন জানান, তাঁর দোকানের টিভি, চকেস, সিলিং ফ্যান, আসবাবপত্র ও তৈরি মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে প্রায় ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। মোদী মালের দোকানের মালিক খলিল মিয়া জানান, আগুন লাগার ঘটনায় তাঁর দোকানের চাল, ডাল, পেয়াজ, রসুন, তেল, মসলাপাতি, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরণের মালামাল পুড়ে ছাই হয়েছে। এতে প্রায় ৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ফ্রেশ ও প্রাণ কোম্পানীর স্থানীয় ডিলার জহির মিয়া ও আব্দুল বারীক জানান, প্রতিদিনের মতো ওইদিন রাত অনুমান ১১টায় গোদামঘর থেকে কাজ শেষে বাড়ি চলে যান। গভীর রাতে আগুন লাগার ঘটনার খবর পেয়ে দৌঁড়ে আসেন। এসে দেখেন তাঁর গোদাম ঘরের সব মালামাল পুড়ে ভষ্ম হয়েছে। তাঁরা আরও জানান, এটা গোদাম ঘরের বাইরে থেকে কেউ শত্রুতা করে আগুন দিয়েছে। তাঁদের দাবি মালামাল পুড়ে অনুমান ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার এবং দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান তাঁরা। মার্কেটের মালিক মো. মঈন উদ্দিনের পক্ষে পরিবারের লোকজন জানান, আগুনের ঘটনায় মার্কেট ঘরের টিনের ছাদ, পাকা দেয়াল, দরজা, জানালা, সিলিংসহ অন্তত: ২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার এস.আই জাহাঙ্গীর আলম, সুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুছ সাত্তার, জাহাঙ্গীরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মুকশেদ আলী, সমাজ সেবক ও ব্যবসায়ী এরন মিয়া, ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। সদর মডেল থানার এস. আই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রবিবার সকালে আমি আগুন লাগার ঘটনা প্রাথমিকভাবে সরেজমিন তদন্ত করেছি। এই ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের খুজে বের করে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।