

নূর আলম, দুর্গাপুর(নেত্রকোণা):নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলায় গত ১৫ মাসে ৪১টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। নতুন ট্রান্সফরমার কিনতে গিয়ে তাঁদের গুণতে হচ্ছে বড় অঙ্কের টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চুরির ঘটনা বেড়ে গেলেও চোর চক্র ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় উদ্বেগ বাড়ছে।
দুর্গাপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এই কার্যালয়ের অধীনে গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৬৪ হাজার। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎব্যবস্থা চালু রাখতে বিভিন্ন স্থানে ৫, ১০, ১৫, ২৫, ৩৭.৫ ও ৫০ কেভি ধারণক্ষমতার ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি চোর চক্র এসব ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে বেশি চুরি হচ্ছে ৫ থেকে ১৫ কেভির ট্রান্সফরমার। চলতি মার্চ মাসেই চুরি হয়েছে পাঁচটি ট্রান্সফরমার।
সর্বশেষ ২০ মার্চ গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের জাগিরপাড়া এলাকায় এক রাতেই তিনটি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটে। এর আগে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত কুমুদগঞ্জ, মাদুরপাড়, রায় নগর, ঝানজাইল, কেট্টা, বড়বাট্টা, শাখাইয়া, নলজোড়া, বাড়ইপাড়া, শ্রীরামখিলা, পূর্ব বিলাশপুর, ভুলিগাঁও, পূর্ব বাকলজোড়া, খরচকি, মধুয়াকোণা, কালিকাপুর, শ্রীপুর, জাগিরপাড়াসহ সাতটি ইউনিয়নের প্রায় ২৫টি গ্রাম থেকে ৫ থেকে ১৫ কেভির ৪১টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে।
চুরি হওয়া ট্রান্সফরমারগুলোর দাম ৪৯ হাজার থেকে ৭৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমবার ট্রান্সফরমার চুরি হলে গ্রাহকদের অর্ধেক মূল্য দিতে হয়, আর দ্বিতীয়বার চুরি হলে সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করতে হয়। এতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
গত ২০ মার্চ রাতে জাগিরপাড়া বাজারের রাইস মিল ব্যবসায়ী নাইম আহমেদের তিনটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। তিনি বলেন, ‘রাতে দোকান বন্ধ করে বাসায় যাই। সকালে এসে দেখি ট্রান্সফরমার নেই। এতে আমার ব্যবসায় মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।’
স্থানীয় কৃষক আবুল কাশেম বলেন, ‘ফসলি জমির সেচের ট্রান্সফরমার বারবার চুরি হচ্ছে। এতে আমাদের চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। চোরদের ভয়ে এখন আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে।’
দুর্গাপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ট্রান্সফরমার চুরি উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। আমরা থানায় নিয়মিত অভিযোগ দিচ্ছি।’
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় তদন্ত চলছে। চক্রটিকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।’