

এমনিতেই করোনা মহামারিতে ধুঁকছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তার ওপর দেশটির অভ্যন্তরীণ সহিংসতা ‘দ্বিতীয় মহামারি’ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। হঠাৎ করেই দেশটিতে ধর্ষণ ও হত্যার হার বেড়ে গেছে। সে দেশে দিনে শতাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। আর প্রতি তিন ঘণ্টায় খুন হচ্ছেন একজন নারী। তাদের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক অপরাধের পরিসংখ্যানে ধর্ষণের পরিমাণ ৭.১ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯,৫৫৬ জন নারী। প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা নভেম্বরে বলেছিলেন, ‘এই পরিসংখ্যান লজ্জাজনক’। এএফপি। সাম্প্রতিক সময়ে আইনের একজন ছাত্রীকে খুন করে তার দেহ টুকরো টুকরো করে একটি স্যুটকেসে ভরে রাখা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্রীকে ওজন মাপার স্কেল দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে হয়েছিল। একই সময়ে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে হত্যার পর গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। এই তিনটি ঘটনাই বলে দিচ্ছে কতটা বর্বর যুগে ফিরে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার সভ্যতা।
সেপ্টেম্বরে পার্লামেন্ট লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার বিষয়ে আইন কঠোর করার জন্য তিনটি বিল পাস হয়েছে। কিন্তু আইনজীবীরা বলছেন, এগুলো সমস্যার কারণগুলোর সমাধান করবে না। একটি অলাভজনক সংস্থা ফাদার এ নেশনের প্রতিষ্ঠাতা ক্রেইগ উইলকিনসন বলেন, ‘দক্ষিণ আফিকার পুরুষরা প্রায় ক্ষেত্রেই বাবা ছাড়া বেড়ে ওঠে। তারা সহিংসতার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে। পুরুষত্বের মিথ্যে ধারণা এবং ব্যাপক বেকারত্বের কারণে ওই সহিংসতা টর্নেডোয় রূপ নিয়েছে।
তিনি জানান, দুষ্কৃতকারীদের মাধ্যমেই নয়, পারিবারিকভাবেও দক্ষিণ আফ্রিকার নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। স্বামী কিংবা ভাইদের হাতে মার খাচ্ছেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের অঙ্গহানিও হচ্ছে। অপরাধের জন্য কুখ্যাত জোহানেসবার্গজুড়ে একদল নারী কমলা রঙের পোশাক পরে টহল দিচ্ছেন। তারা স্কুলফেরত কিশোর-কিশোরীদের রাস্তায় নিরাপত্তার জন্য কাজ করছেন। নারীহত্যা এবং নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার প্লেগ মোকাবিলা করতে লিঙ্গভিত্তিক এই সহিংসতা ব্রিগেড তৈরি করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এই নিরাপত্তা দলের নাম ডনিং অরেঞ্জ বিবস। দক্ষিণ আফ্রিকায় বিপ্লবের প্রতীক হচ্ছে কমলা রঙ। সহিংসতা প্রতিরোধে এর কর্মীরা দৃঢ়সংকল্প নিয়ে দলে যোগ দিয়েছেন।