

আলিফুল ইসলাম আলিফ ,ক্যাম্পাস প্রতিনিধি : রাজনীতি হলো সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার একটি পদ্ধতি, যেখানে ক্ষমতা ও নীতির মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা হয়। এটি নৈতিক, স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক হওয়া উচিত, যাতে সবাই মত প্রকাশের সুযোগ পায়। পাশাপাশি, রাজনীতিতে সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ আচরণ জরুরি। উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করতে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব প্রয়োজন, যাতে দেশ এগিয়ে যেতে পারে। আগামী বাংলাদেশে কেমন ছাত্র রাজনীতি চাই এই তরুণ প্রজন্ম , তাদের ছাত্র রাজনীতির বিষয় গুলো তুলে ধরেছি কয়েকজনের বক্তব্যের মাধ্যমে ।
মোঃ হেমায়েত হোসেন হৃদয় , সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ।
রাজনীতি একটি সামাজিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ক্ষমতা অর্জন, ব্যবহার ও বিতরণ করা হয়। রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মানবতার কল্যাণ ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। তরুণদের মতে, রাজনীতি জনকল্যাণমূলক, ন্যায়সঙ্গত ও জবাবদিহিতামূলক হওয়া জরুরি। তারা বিশ্বাস করে রাজনীতিতে তিনটি চর্চা থাকা উচিত— বিসর্জন দেওয়া, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর ও জনকল্যাণমূলক কাজ করা।
তরুণদের ভাবনায় রাজনীতি কখনো ব্যক্তি বা পরিবারকেন্দ্রিক হতে পারে না; এটি নাগরিকদের সামাজিক অধিকার। তারা চায় যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে নেতৃত্ব আসবে, যেখানে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। বারাক ওবামা বলেছেন, পরিবর্তন কখনো সহজ নয়, তবে অসম্ভবও নয়।
তরুণরা বিশ্বাস করে, রাজনীতি হতে হবে সৎ, গণতান্ত্রিক, ন্যায়পরায়ণ ও সেবামূলক। হিটলার বলেছিলেন, প্রত্যেক নাগরিকের রাজনীতি সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকা জরুরি, যাতে তারা যৌক্তিক সমালোচনা করতে পারে। নেপোলিয়ন মনে করতেন, শিক্ষিত নেতৃত্বই শক্তিশালী দেশ গড়তে পারে। তরুণদের মতে আগামীর রাজনীতিতে তাদের এই আসা উচিত যাদের বিসর্জনের প্রত্যয় সেবামূলক মনোভাব জনকল্যাণমূলক কাজ করার প্রবল ইচ্ছা রয়েছে।
বর্তমান রাজনীতিকে তরুণরা তোষামদ ও স্বার্থসিদ্ধির মাধ্যম হিসেবে দেখে এবং পরিবর্তনের আহ্বান জানায়। তাদের স্বপ্ন নৈতিকতা, গণতন্ত্র, সুশাসন, স্বাধীনতা, জবাবদিহিতা ও জনকল্যাণমূলক রাজনীতি । তরুণদের চাওয়া পুরনো গতানুগতিক রাজনীতিক কাঠামো ভেঙে নতুন রাজনীতি কাঠামো স্থাপন করা যেটা হবে রাজনীতিক বিপ্লব।
মো: ফেরদৌস মিয়া , জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ।
সময়ের পরিক্রমায় রাজনীতির ধরণ ও কাঠামো পরিবর্তিত হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে তরুণ প্রজন্ম এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন, সক্রিয় এবং প্রযুক্তি-নির্ভর। তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে, জবাবদিহিতা দাবি করছে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চাইছে।
আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি, যখনই সমাজে অন্যায় সংঘটিত হয়, তরুণরাই প্রথম প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। জুলাই বিপ্লবের মতো আন্দোলন তারই এক উজ্জ্বল উদাহরণ, যেখানে তরুণরা ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। একইভাবে, সমাজের যেকোনো অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার হয়ে সুষ্ঠু বিচার ও সমাধান দাবি করে।
প্রযুক্তির বিকাশের ফলে এখন তথ্য পাওয়া যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি সেটি দ্রুত সমাজ ও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তরুণরা যেকোনো ইস্যু সম্পর্কে দ্রুত অবগত হচ্ছে এবং জনমত গঠনে ভূমিকা রাখছে। এর ফলে ক্ষমতার অপব্যবহার কমছে, এবং রাজনীতিতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হচ্ছে।
সুতরাং, ভবিষ্যতের রাজনীতি হবে এমন এক ব্যবস্থা, যেখানে স্বচ্ছতা থাকবে, জনগণের অংশগ্রহণ থাকবে, এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তরুণদের সচেতনতা ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে গঠিত এই নতুন রাজনৈতিক ধারা সমাজকে আরও ন্যায়সঙ্গত, গণতান্ত্রিক ও উন্নত করতে পারে।
রায়হান রানা , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ।
বাংলাদেশের তরুণরা আগামীর রাজনীতিতে সততা, স্বচ্ছতা ও জনকল্যাণমূলক নীতির প্রতিফলন দেখতে চায়। তারা দুর্নীতিমুক্ত, গণতান্ত্রিক এবং প্রযুক্তিনির্ভর রাজনীতি চায়, যেখানে জবাবদিহি, মানবাধিকার ও সমান সুযোগ নিশ্চিত হবে।
তরুণরা মনে করে, ই-গভর্নেন্স ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা বাড়ানো সম্ভব। তারা নারীর ক্ষমতায়ন, শ্রেণী বৈষম্য হ্রাস এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানকে রাজনীতির মূল লক্ষ্য হিসেবে দেখতে চায়, যাতে তারা ভবিষ্যতে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে। তারা মনে করে যে, দেশের প্রযুক্তি ও ইনোভেশন খাতে বিনিয়োগ বাড়ালে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও শক্তিশালী হবে।
তরুণরা বিশ্বাস করে, প্রযুক্তি-নির্ভর প্রশাসন দুর্নীতি কমাবে এবং জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করবে। তাই, তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি উন্নয়নমুখী বাংলাদেশ গড়ে তোলা জরুরি।