চসিকে তড়িঘড়ি নগদ ৩০ লাখে চেইনড্রোজার ভাড়ায় নিয়ে প্রকৌশলীর পকেটভারি
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আবর্জনা পরিবহনে চেইনড্রোজার সংকটের সুযোগে কোনো নিয়ম না মেনেই দরপত্র ছাড়াই নগদ টাকায় ভাড়ায় নেওয়া হয় দুটি চেইনড্রোজার। এজন্য এক উপসহকারী প্রকৌশলীকে তড়িঘড়ি দেওয়া হয় অগ্রিম ৩০ লাখ টাকা। একটি বসিয়ে রেখে আরেকটি দিয়ে দিনে মাত্র ৩-৪ ঘন্টা কাজ করানো হয়েছে। তবু দুই মাসে দুটি চেইনড্রোজারের ভাড়া বাবদ ব্যয় দেখানো হল নিখুঁত হিসাবে— ২৯ লাখ ২৬ হাজার ৪০০ টাকা! অভিযোগ উঠেছে, কয়েকজন কর্মকর্তা নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, এমন অভাবনীয় অনিয়মের পেছনে মূল ভূমিকা রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের যান্ত্রিক শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী আনু মিয়ার। যান্ত্রিক শাখার আবর্জনা পরিবহনে চেইনড্রোজার সংকটের কথা বলে তড়িঘড়ি তাকেই দেওয়া হয় অগ্রিম ৩০ লাখ টাকা। কর্পোরেশনের বিশাল অংকের এ অর্থ ব্যয় করতে মানা হয়নি দরপত্রের ন্যূনতম নিয়মও। অনিয়মের বিষয়টি জানার পর এক অফিসে আদেশে ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) মাধ্যমে চেইনড্রোজার ভাড়া নেওয়ার সুপারিশ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু এই আদেশ না মেনে নগদ টাকা দিয়ে ভাড়া নেওয়া হয় দুটি চেইনড্রোজার। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ৫ লাখ টাকা বা তার চেয়ে বেশি অর্থ হলে দরপত্রের মাধ্যমে মালামাল কেনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, নিজেদের পকেট ভারি করার জন্যই দরপত্র ছাড়া ভাড়া নেওয়া হয়েছে দুটি চেইনড্রোজার। স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত কয়েকগুণ বেশি দামে নেওয়া হয় সেগুলো। সিটি কর্পোরেশনের খাতায় দুটি চেইনড্রোজার ভাড়া নেওয়ার কথা দেখানো হলেও প্রতিদিন কাজ করানো হতো একটি দিয়ে। নিয়ম অনুসারে প্রতিদিন ৮ ঘন্টা করে কাজ করানোর কথা থাকলেও মূলত সেটা করানো হয়েছে মাত্র ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। এভাবে নয়ছয় করে দুই মাসে ব্যয় হিসেবে দেখানো হয় ৩০ লাখ টাকা।
জানা গেছে, চলতি বছরের ৩০ জুন চট্টগ্রামের হালিশহর টেনজিং গ্রাউন্ডে (টিজি) স্তুূপীকৃত আবর্জনার মাটি লেভেলিং করার জন্য শ্রমিকসহ চেইনড্রোজার ভাড়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। প্রতিদিন ১৬ ঘন্টা সিডিউল মোতাবেক দুটি চেইনড্রোজার ভাড়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করার জন্য সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক বরাবরে সুপারিশও করা হয়। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা না করেই সরাসরি ভাড়া নেওয়া হয় দুটি চেইনড্রোজার। আর চলতি বছরের ৬ অক্টোবর ওই দুটি চেইনড্রোজারের ভাড়াবাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৯ লাখ ২৬ হাজার ৪০০ টাকা।
অভিযোগের তীর যার দিকে, যান্ত্রিক শাখার সেই উপসহকারী প্রকৌশলী আনু মিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের পরবর্তী সময়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। সিটি কর্পোরেশনের সাগরিকায় স্থাপিত অ্যাসফল্ট প্ল্যান্টে দায়িত্বরত থাকাকালেও ব্যক্তিগত লাভের উদ্দেশ্যে সেখান থেকে দুটি স্কেভেটর এনেই কোতোয়ালী থানার ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় ভাড়া দেন এই কর্মকর্তা। কয়েক মাস ধরে স্কেভেটর দুটি ব্যক্তিগত কাজে ভাড়া দেওয়ার ঘটনা জানতে পেরে সরেজমিনে সেখানে যান ওই এলাকার কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব এবং পাথরঘাটা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন বালী। পরে বিষয়টি সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের কানে যাওয়ার পর উপসহকারী প্রকৌশলী আনু মিয়ার কাছ থেকে মুচলেকা দিয়ে তাকে ওই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে সদ্য সাবেক দুই কাউন্সিলর কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব ও ইসমাইল হোসেন বালী বলেন, সিটি কর্পোরেশনের প্রত্যেকটি মালামাল সরকারি সম্পদ। ওই সময় উপসহকারী প্রকৌশলী আনু মিয়া ব্যক্তিগত লাভের জন্য সাগরিকা থেকে দুটি স্কেভেটর এনে ভাড়া দিয়েছেন— এমন অভিযোগ পেয়ে হাতেনাতে ধরি তাকে। পরে মেয়র সাহেবের কাছে মুচলেকা দিয়ে অভিযোগ থেকে রেহাই পান তিনি।
সূত্র বলছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলেও চাক্তাই খালের আবর্জনা খননের ওঠানো মাটিও বিনা অনুমতিতে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।