করোনা সংকটে কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় মোরেলগঞ্জের খামারিরা

Share the post

মেজবাহ ফাহাদ,মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধি (বাগেরহাট): করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কোরবানির আগে লকডাউন শুরু হতে যাওয়ায় কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার খামার মালিকেরা। সারা বছর খামারে পরিশ্রম ও বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করার পর এখন পশুর বাজার ও দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

চলছে করোনার তৃতীয় ঢেউ,সরকার এই তৃতীয় ঢেউ মোকাবেলায় কঠোর লকডাউন ঘোষনা করছে।লকডাউনের মেয়াদও বাড়ছে।এদিকে কোরবানীর বাকি মাত্র ১৫-১৬ দিন। এই উপজেলায় এবার প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা এবং তাদের সঙ্গে মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। মোরেলগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি গরুর খামার,এর মধ্যে উপজেলার বারইখালী,নিশানবাড়িয়া,জিউধারা,দৈবজ্ঞহাটি,খাওলিয়া সহ কয়েকটি ইউনিয়নে রয়েছে সবচেয়ে বেশি গরু হৃস্ট-পুস্টকরন খামার।

এছাড়াও বিশেষ করে যারা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে একটি বা চার-পাঁচটি গরু পালন করেছেন, তারা এ বছর উপযুক্ত দামে গরু বিক্রি নিয়ে সংশয়ে আছেন তারা।

ঈদ – উল আযাহার বাকি মাত্র ১৪-১৬ দিন দিন। মোরেলগঞ্জ উপজেলার খামারীরা বলছেন অন্যান্য বছরের মতো এখন পর্যন্ত দেখা নেই ব্যাপারীদের।

এই উপজেলায় কোরবানিযোগ্য পশুপালনকারী খামারিদের প্রত্যাশা ছিল, ঈদের আগে হাটে পশু বিক্রি করে মুনাফা করবেন। কিন্তু তাদের জন্য ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে মহামারি করোনাভাইরাস।

তারা বলেছেন, প্রতিবছর কোরবানির হাট শুরুর মাস দেড়েক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকার গরুর ব্যাপারীরা এসে বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনা শুরু করেন। তবে করোনা পরিস্থিতিতে এবার গরু কেনায় আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না ব্যাপারীদের মধ্যে

তাদের দাবি, করোনার কারণে বিগত বছরের চেয়ে সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সে অনুযায়ী, গরুর দামও বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে জেলার সব পশুহাট বন্ধ রয়েছে। ফলে গরু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

এদিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের দেয়া তথ্যমতে এবারের কোরবানির জন্য মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ৫ হাজার ৭৬৮ টি গবাদিপশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এরমধ্যে গরু ২১৮৮ টি, মহিষ ৫০ টি , ছাগল ১১৬৮ টি, ভেড়া ৫০ টি, বাজা গাভী ১১৩৩ টি, বলদ ১১৭৮ টি ।

বারইখালী গ্রামের খামারি আবুল কালাম শেখ জানালেন, করোনা পরিস্থিতিতে পশু বিক্রি করে ন্যায্যদাম পাওয়া নিয়ে চিন্তায় আছি। কারণ একটি গরুর জন্য দিনে ১৫০ -১৮০ টাকা খরচ হয়। প্রতিদিন গরুগুলোকে খৈল, ভুসি, কুড়ো ও কাঁচা ঘাস দিতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবার গরু বিক্রি করে লাভ করতে পারবো কি-না তা নিয়ে চিন্তায় আছি। কিন্তু পশু বিক্রি না করতে পারলে সাত-আটমাস ধরে খাটানো টাকার অনেকটাই লোকসানে যাবে। পরের কোরবানি পর্যন্ত এসব পশুপালনে অনেক টাকা খরচ হবে।’

একই উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের গুয়াতলে গ্রামের একজন নারী খামারি মাসুমা বেগম বলেন, ‘ছয়মাস আগে এক বস্তা গমের ভুসির দাম ছিল ১ হাজার ১০০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। আগে যে খৈলের দাম ছিল ৩০-৩২ টাকা কেজি। করোনাকালে তা কিনতে হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা দরে। শুধু ভুসি ও খৈলই নয়, সব গো-খাদ্যের দাম গড়ে ২০-২৫ ভাগ বাড়ছে। গরুর খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ও ক্রেতার সংখ্যা কম হওয়ার হতাশায় রয়েছি। অন্যবছর কোরবানির দুইমাস আগে থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাড়ি থেকে গরু নিয়ে যায়। কিন্তু এ বছর কোনো ক্রেতার এখন দেখা মেলে নেই।’

পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের ভাইজোড়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সারাবছরই আমরা গরু কেনাবেচার মধ্যে থাকি। কোরবানির আগের কিছুদিন সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে গত দুইমাস ধরে নিয়মিত হাট বসছে না। আর কোরবানির আগ মুহূর্তেও হাট বসার সম্ভাবনাও খুবই কম। এমতাবস্থায় কোনোভাবেই ভালো ব্যবসার আশা করা যাচ্ছে না।’

উপজেলার দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়নে একজন পাইকারি গরু ব্যাবসায়ী আব্দুল আলিম বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় কোরবানির পশুর চাহিদাও অনেক কমে গেছে। অনেকে আবার স্বাস্থ্যবিধির কারণে পশু কেনা থেকে বিরত থাকছেন। ফলে এবার গরুর বাজার নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছি।’

খাওলিয়া ইউনিয়নের হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তিনটি গরু কিনে বাড়িতে পালন করেছি। তবে গরুগুলো বিক্রি হবে কি-না এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি। কারণ করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো নেই। এবার কোরবানি কম হতে পারে।’

মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জি এম কুদ্দুস এ প্রতিবেদককে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কোরবানি উপলক্ষে গরুপালন করে থাকেন খামারিরা। আমাদের পক্ষ থেকে পশুপালনকারীদের প্রাকৃতিকভাবে পশু মোটাতাজাকরণে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। খামারিরা সেভাবে পশুপালন করেছেন। প্রাকৃতিক উপায়ের তুলনায় রাসায়নিকভাবে মোটাতাজা করলে খরচ বেশি হয় এবং ঝুঁকিও থাকে। গ্রামপর্যায়ে পশু পালনকারীরা এসব বুঝতে পেরেছেন। করোনা মহামারির মধ্যে আমাদের কার্যক্রম একদিনের জন্যও থেমে থাকেনি।

করোনা পরিস্থিতিতে কোরবানির বাজার কিছুটা মন্দা হতে পারে বলে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থান অর্থাৎ যেসব জায়গায় বেশি পশু বিক্রি হয়, সেসব এলাকায় সামাজিক দূরত্ব মেনে পশুর হাট বসানোর চিন্তা রয়েছে। এছাড়া অনলাইনেও পশু বিক্রির জন্য খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আমরা অনলাইনে কোরবানীর গরুর হাট নামে একটি ওয়েবসাইট ওপেন করেছি। কোরবানির আগ মুহূর্তের হাটের জন্য অপেক্ষা না করে খামারিদের অনলাইনে গবাদি পশু বিক্রির জন্য পরামর্শ দিয়েছি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

সিরাজগঞ্জ-২ আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উত্তেজনা বৃদ্ধি

Share the post

Share the postজলিলুর রহমান জনি ,সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জ-২ আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।সিরাজগঞ্জ সদর ও কামারখন্দ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-২ আসন, যা জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আসন হিসেবে পরিচিত। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে বিএনপি এখানে […]

শুভ জন্মাষ্টমি উপলক্ষে সিরাজগঞ্জ বিএনপি নেতা টুকুর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

Share the post

Share the postজলিলুর রহমান জনি,সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জে জন্মাষ্টমি উপলক্ষে র‍্যালি ও আলোচনা সভায় বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণ।সিরাজগঞ্জ, ১৬ আগস্ট ২০২৫: শনিবার সকালে সিরাজগঞ্জে জন্মাষ্টমি উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্যোগে একটি বর্ণাঢ্য র‍্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। […]