করোনায় মৃত নারীর দাফনে অংশ নিতে চান দেলোয়ারা

Share the post

চট্টগ্রাম প্রতিবেদক: প্রাণঘাতি করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের অন্তিম শবযাত্রা হচ্ছে অত্যন্ত করুণভাবে। স্ব স্ব ধর্মীয় নিয়ম মেনে দাফন-সৎকার দূরের কথা, জানাজা পড়ার লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মৃত মুসলমান ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে।

কোনো কোনো জায়গায় দাফনে দিচ্ছে বাধা। ইরাকে বাবার লাশ নিয়ে ৫ দিন ঘুরে কোথাও দাফন করতে পারেননি ছেলে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন সবখানে। কেউ এগিয়ে না আসায় ভারতে চার কন্যাই বাবার লাশ কাধে করে নিয়ে গেছেন শ্মশানে।

করোনা নামক অদৃশ্য এই দানবের ভয়ে চিরআপন, প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা এমনকি স্বজনরাও দাঁড়াচ্ছেন না করোনায় মৃত ব্যক্তিদের পাশে।

করোনায় মৃত ব্যক্তি ঘিরে যখন এমন নিষ্ঠুরতা, যুগপৎ অবহেলা-ঘৃণা ছড়ানো, ছিটানো, তখনই করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঘৃণা নয়, পরম মমতায় শেষবিদায় দিতে চান দেলোয়ারা বেগম নামে এক সাহসী নারী।

দিলোয়ারা বেগম ক’দিন আগে তার এই ইচ্ছার কথা জানিয়ে একুশে পত্রিকাকে বলেছেন, ‘আমি খুব কষ্টের সাথে লক্ষ করছি, এক করোনা ভাইরাস এসে সারাবিশ্ব জিম্মি করে ফেলেছে। কথায় কথায় মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। নিষ্ঠুরভাবে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। মৃত্যু হওয়া মানুষটিকে আমরা স্বাভাবিক নিয়মে, সম্মানের সাথে বিদায়টাও জানাতে পারছি না। অন্তিম যাত্রায় স্বজন-শুভার্থী দূরের কথা, স্ত্রী দাঁড়াচ্ছে না স্বামীর পাশে, স্বামী দাঁড়াচ্ছে না স্ত্রীর পাশে। কেমন যেন অচেনা সবকিছু!’

দেলোয়ারা বেগম বলেন, পদদলিত মানবতা, মানবিকতার এই ক্রান্তিকালে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, চট্টগ্রাম এবং পাশ্ববর্তী এলাকায় করোনায় আক্রান্ত কোনো নারী মারা গেলে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তাকে গোসল দিয়ে, পুতপবিত্র করে কাফন পরিয়ে প্রস্তুতের সমস্ত কাজ আমি একা, নিজ হাতে করবো।

নগরের জিইসি মোড় এলাকার ইউনেস্কো সংলগ্ন মদিনা টাওয়ারেই থাকেন দিলুয়ারা বেগম। স্বামী নজরুল ইসরাম বাচ্চু ব্যবসায়ী। তিনিও পরোপকারী, সামাজিক মানুষ। দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে এবং দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। স্বামী এবং ৭ম শ্রেণী পড়ুয়া কনিষ্ঠ ছেলে নিয়ে থাকেন দিলুয়ারা বেগম।

দিলুয়ারা বেগমের বাপের বাড়ি নগরের ব্যাাটারি গলি এলাকায়। ছোটকাল থেকেই অত্যন্ত পরোপকারি, উদার ও সামাজিক মানুষ হিসেবে সংশ্লিষ্ট মহলে পরিচিত তিনি। সংগ্রামী, সাহসী, প্রতিবাদী নারী হিসেবেও চট্টগ্রামের সাংবাদিক, চিকিৎসক মহলে পরিচিতি আছে তার। সমস্ত ভয়, প্রলোভন উপেক্ষা পুত্রকে ভুল চিকিৎসা দেওয়া প্রভাবশালী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে একাই লড়েছিলেন তিনি। জেলে যেতে হয়েছে ওইসব চিকিৎসকদের।

বিপদে-আপদে মানুষের থাকার মাঝেই আনন্দ খুঁজে পান দেলোয়ারা বেগম। তারই অংশ হিসেবে করোনা-দুর্যোগে লাশে পরিণত হওয়া মানুষগুলোর প্রতি শেষযাত্রায় ভালোবাসা দেখিয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাগ্যবতী নারী হতে চান তিনি। আর এক কাজটি করতে গিয়ে মরতে হলেও তার কোনো আপত্তি নেই। দেশের এই যুদ্ধে নিজেকে উৎসর্গ করার মাঝেই জগতের সুখ, প্রশস্তি।

আর এই মহৎ কাজটি করতে সর্বাত্মক প্রস্তুত আছেন দেলোয়ারা বেগম। এমন মানবিক কাজে যখনই প্রয়োজন হবে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ের মদিনা টাওয়ারে যোগাযোগ করতে একুশে পত্রিকার মাধ্যমে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

নরসিংদীতে ১৭ মামলার আসামী গ্রেফতার অস্ত্র-মাদক ও গানপাউডার উদ্ধার

Share the post

Share the postআশিকুর রহমান,নরসিংদী : নরসিংদীর রায়পুরা থেকে পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ১৭ মামলার পলাতক আসামী তৈয়বকে তার দুই সহযোগীসহ গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ(ডিবি)। সোমবার (১৮ আগষ্ট) সকালে ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কায়েস আকন্দ গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে তৈয়বুর রহমান ওরফে […]

ভোলার চর কুকরী মুকরীতে শুটকি উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

Share the post

Share the postমোঃ সামিরুজ্জামান, ভোলা প্রতিনিধি: ভোলা জেলার চর কুকরী মুকরীতে এডাপটেশন লার্নিং সেন্টারের উদ্যোগে আজ শনিবার একদিনব্যাপী “শুটকি উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা” বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে প্রয়োজনীয় উপকরণ বিতরণ করা হয়। প্রশিক্ষণে স্থানীয় জেলে ও নারী সদস্যদের জন্য সহজ পদ্ধতিতে নিরাপদ শুটকি উৎপাদন, সঠিক ব্যবস্থাপনা, ছোট জায়গায় অধিক পরিমাণে শুকানোর কৌশল […]