উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে উত্তাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের পদত্যাগের একদফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। অবস্থান কর্মসূচি থেকে উপাচার্যের দ্রুত পদত্যাগ বা অপসারণের দাবি জানায় তারা। সোমবার (৫ মে) বেলা ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। অবস্থান কর্মসূচির পর বেলা ১টার দিকে গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। বিক্ষোভ মিছিলটি ভিসি বাংলোর সামনে দিয়ে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীদের “যে উপাচার্যকে পাই না, সেই উপাচার্যকে চাই না”, “শুচিতার পদত্যাগ করতে হবে”, “যে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে, সেই উপাচার্যকে চাই না”, “যে ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকেন না, সেই ভিসিকে চাই না” প্রভৃতি বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় আহ্বায়ক রাকিব আহমেদ বলেন, “এই উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়কে একদমই ধারণ করেন না। তিনি এই আট মাসে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তুলেছেন। কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেন না। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করার দিনই তিনি তার পদে থাকার নৈতিকতা হারিয়েছেন।”
তিনি আরও জানান, “আগামীকাল বেলা ১১টার মধ্যে উপাচার্য পদত্যাগ না করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক শাটডাউন করে দেওয়া হবে। তবে শিক্ষার্থীদের সার্বিক কল্যাণ বিবেচনায় একাডেমিক কার্যক্রম চালু থাকবে।”
আন্দোলনকারীরা আরও বলেন, “জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আমরা দক্ষিণাঞ্চল অচল করিনি, কিন্তু আগামী পরশু থেকে আমরা বাধ্য হয়ে দক্ষিণাঞ্চল অচল করে দেওয়ার মতো কঠোর কর্মসূচি নিতে পারি।”
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মোকাব্বেল শেখ বলেন, “স্বৈরাচারী মনোভাবের এই উপাচার্যকে দ্রুত পদত্যাগ করতে হবে। তিনি একের পর এক প্রশাসনে ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন শুরু করেছেন। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করলে আমাদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মামলা দায়ের করেন। আমরা আন্দোলন করছি, আগামীকাল থেকে প্রশাসনিক শাটডাউনসহ আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
আন্দোলনকারী আরেক শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ বলেন, “এক দফায় আমাদের আন্দোলনে আসার কারণ বিগত অনেক দিন ধরে আপনারা জানেন যে আমাদের আন্দোলন চলমান রয়েছে। কিন্তু এতদিনেও আমাদের যৌক্তিক ও সহজে বাস্তবায়নযোগ্য দাবিসমূহে উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। এমনকি যেসব দাবি খুবই সাধারণ ও সহজে সমাধানযোগ্য ছিল, তাও উপেক্ষিত হয়েছে। এতে আমরা হতাশ হয়েছি, কারণ এমন দাবিতে আদৌ আন্দোলনের প্রয়োজন পড়ার কথা নয়।
বরং প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা ও জিডি করা হয়েছে, যা আমাদের কঠোর আন্দোলনের পথে ঠেলে দিয়েছে। বিগত সাত মাসে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ, পরিকল্পনা বা রোডম্যাপ আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়নি।
একই সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করেছি, ‘জুলাই বিপ্লবে’ যারা শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, তাদের বিভিন্ন পদে পদায়ন করা হয়েছে; আর যারা শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিল, তাদের নানাভাবে হয়রানি ও হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী একজন উপাচার্যের সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে থাকার কথা থাকলেও, আমাদের উপাচার্য বেশিরভাগ সময় অনুপস্থিত থাকেন। ফলে প্রশাসনিক স্থবিরতা তৈরি হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বাভাবিক গতিতে পরিচালিত হতে পারছে না।
সাত মাসের পর্যবেক্ষণে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, বর্তমান উপাচার্যের অধীনে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীদের অভিমতের ভিত্তিতে আমরা এক দফা দাবিতে উপনীত হয়েছি—তিনি যেন পদত্যাগ করেন।আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাই, যেন দ্রুত একজন যোগ্য ও দক্ষ উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়। অন্যথায়, আমরা আরও কঠোর কর্মসূচির দিকে অগ্রসর হতে বাধ্য হব।”
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও বরিশাল মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, “বিভিন্ন দাবি নিয়ে তিন সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চলছে। তিনি চাইলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসতে পারতেন, কিন্তু কোনো দাবিতে কর্ণপাত করেননি। এই ভিসি শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা ইউজিসিকে আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে এই ভিসিকে অপসারণ করে একজন সৎ ও যোগ্য ভিসি নিয়োগ দিতে হবে।”
উল্লেখ্য, গত ১৭ এপ্রিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে স্বৈরাচারের পুনর্বাসন ও জুলাই আন্দোলনের পক্ষে অবস্থানকারীদের হয়রানির অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনের ১৮তম দিনে এসে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবি ঘোষণা করেন।