উত্তর আগ্রাবাদে ডিউকের ‘দেমাগ’ ভাঙতে মরিয়া তিন বিদ্রোহী
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৪ নং উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নাজমুল হক ডিউক পুড়ছেন ঘরের আগুনে। কারণ এ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নবঞ্চিত তিনজন প্রার্থী স্বতন্ত্র পদে লড়ছেন। দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে বহিস্কারের হুঁশিয়ারির পরও এই তিনজন দমে যাননি। জয়ের আশা নিয়ে এলাকায় জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে বিএনপির ফরিদুল ইসলাম বলছেন, আওয়ামী লীগের নিজেদের অন্তর্কোন্দল জয়ের ব্যাপারে তাকে আশাবাদী করেছে।
স্বতন্ত্র পদধারী তিন প্রার্থী জাবেদ নজরুল ইসলাম, রকিবুল আমিন, রাশেদুল ইসলামের তিনজনের কথার একই সুর— ডিউক এলাকায় মানুষের সাথে মিশতে পারেননি। যাননি বিচার-সালিশের কাজে। বিচারের জন্য দেখিয়েছেন থানা। তাই ডিউকের ‘দেমাগ’ ভাঙতে চান তারা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পশ্চিমাংশে উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের অবস্থান। এর দক্ষিণে ২৭ নং দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড, পূর্বে ২৮ নং পাঠানটুলী ওয়ার্ড ও ২৩ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পশ্চিমাংশে উত্তর আগ্রাবাদ ওযার্ডের অবস্থান। এর দক্ষিণে ২৭নং দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড, পূর্বে ২৮নং পাঠানটুলী ওয়ার্ড ও ২৩নং উত্তর পাঠানটুলী ওয়ার্ড, উত্তরে ১২নং সরাইপাড়া ওয়ার্ড ও ২৫নং রামপুর ওয়ার্ড এবং পশ্চিমে ২৫নং রামপুর ওয়ার্ড ও ২৬নং উত্তর হালিশহর ওয়াার্ড অবস্থিত। এ ওয়ার্ডের উল্লেখযোগ্য এলাকাগুলো হল— হাজীপাড়া, পানওয়ালা , মনসুরাবাদ, গুলবাগ, উত্তর আগ্রাবাদ, মোল্লাপাড়া, মুহুরিপাড়া।
২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জাবেদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার স্ত্রী ফারহানা জাবেদ আগে থেকেই নির্বাচিত কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবার আমিও উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করছি। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে আমি জড়িত। আশা করছি সাধারণ ভোটাররা আমাকেই ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন।’
তবে বিদ্রোহীদের আনাগোনায় মোটেও শঙ্কিত নন ডিউক। ডিউক জানান, ‘আমি রোজা রেখেই ঈদ করতে চাই। রমজানে সিয়াম-সাধনা শেষেই ঈদ আনন্দের হয়। তেমনি আমি আমার গত ৫ বছর জনগনের উন্নয়নের সাধনা করেছি। তাই ঈদের মতনই আমার নির্বাচনে বিজয় আনন্দের হবে। সামাজিকভাবে একজন কাউন্সিলর যে পরিবর্তনগুলো আনা দরকার গত পাঁচ বছরে সেগুলো আমি আনতে পেরেছি বলে আমি মনে করি।’
সদ্য সাবেক এই কাউন্সিলর বলেন, ‘আমি আমার গত পাঁচ বছরের মেয়াদে এই ওয়ার্ডের অভ্যন্তরে প্রায় ৩৮ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন করেছি এবং আরো কিছু প্রকল্প চলমান আছে। এছাড়াও আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের ২৫১ কোটি টাকার কাজ প্রায় শেষের পথে।’
কিন্ত তার এসব কথাকে ‘ফাঁকা বুলি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী নজরুল ইসলাম জাবেদ। জাবেদ জানান, নাজমুল ডিউক মানুষের সমস্যা শুনতে চান না। বিচার-সালিশের কাজে খুব কমই সময় নিয়েছেন। কেউ কোনো বিচার চাইতে গেলে থানা দেখিয়ে দিয়েছেন। তিনিই মনে হয় একমাত্র ব্যক্তি যিনি ব্যবস্থাপনায় অনার্স-মাষ্টার্স শেষ করেছেন। আর তার শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা সামাজিক অনুষ্ঠানে বলে বেড়াতেন। অন্যকে হেয় করতেন।’
জাবেদ আরও বলেন, ‘তিনি সাধারন মানুষের সাথে মিশতে পছন্দ করতেন না। মুখে মিষ্টি কথা বললেও মোটেও জনদরদী ছিলেন না। করোনাকালীন লকডাউনে তখন ত্রাণ বিতরণ করা হল তিনি সেটি এলাকার তার পছন্দকে কয়েকজন ব্যক্তিকে মনোনীত করে তাদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন। মনোনীত ব্যক্তিরা দরিদ্র ও অসহায় ব্যক্তিকে না দিয়ে নিজেদের বাসায় নিয়ে গিয়েছেন।’
২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ড স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জাবেদ নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রী ফারহানা জাবেদ আগে থেকেই নির্বাচিত কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবার আমিও উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করছি। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে আমি জড়িত। আশা করছি সাধারণ ভোটাররা আমাকেই ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন।’
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে নিজেকে ‘বিদ্রোহী’ মানতে নারাজ জাবেদ নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি তো আওযামী লীগের হয়ে নির্বাচন করছি না। টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকে স্বতন্ত্র পদে লড়ছি। আমাকে কেন মনোনোয়ন দিল না তা আমি বুঝতে চাইনি। তাই এখন আর আওয়ামী লীগের ব্যানারে কাজ করছি না। যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হই, তারপরও কোন দলের ব্যানার খুঁজব না।’
অপর দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী রকিবুল আমিন ও রাশেদুল ইসলামও ডিউককে হঠানোর দৃঢ় প্রত্যয় জানিয়েছেন। ডিউককে মনোনয়ন দিয়ে আওয়ামী লীগের মত বড় একটি দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে জানান রাশেদুল ইসলাম।
তবে ২৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ‘দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তই সবার ওপরে। এখানে বিদ্রোহীদের কোনো সুযোগ নাই। আমরা সবাই মিলে নাজমুল হক ডিউককেই নির্বাচিত করব ইনশাল্লাহ।’