আ.লীগের মেয়র পাঁচ বছর ধরে, অফিস করতে পারেননি একদিনও!
চট্টগ্রাম : ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর নৌকা প্রতীক নিয়ে রাউজান পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন চটগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদ্যগত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিত। প্রায় ৫ বছর অতিবাহিত হতে চললেও একটি দিনের জন্যে প্রাণখুলে, নির্বিঘ্নে অফিস করতে পারেননি তিনি।স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, এমন কী ঘটেছে যে, আওয়ামী লীগ শাসনামলে আওয়ামী লীগেরই মেয়র দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না?তবে রাউজান পৌরসভার মেয়র দেবাশীষ পালিতের দাবি, একেবারে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি তা নয়, প্রথম ৬ মাস তিনি ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেছেন, নিয়মিত অফিস করেছেন।তাহলে বাকি সময়টাতে কেন অফিস করতে পারেননি- একুশে পত্রিকার এমন প্রশ্নে দেবাশীষ পালিত বলেন, আমি কেন অফিস করতে পারিনি তা আপনারা মিডিয়াকর্মীরা ভালোভাবেই জানেন। জানেন রাউজানের মানুষ ও আমার দলের নীতিনির্ধারণী মহল।তিনি বলেন, রাউজানে আওয়ামী রাজনীতির নামে একক পরাশক্তি কিংবা প্রভুত্ব বজায় রাখতে চান যারা এবং যারা সেক্ষেত্রে আমাকে প্রতিবন্ধক মনে করেন তাদের নানামুখি ষড়যন্ত্র ও বাধার কারণে আমি নিয়মিত অফিস করতে পারিনি। আমি তাদের ভয়ংকর রকমের নোংরা রাজনীতির শিকার।তারপরও গ্রামের বাড়িতে বসে এবং আমার শহরের বাসা থেকে নাগরিক সনদ, প্রত্যয়নপত্র, ওয়ারিশান সনদসহ সংশ্লিষ্ট সেবাগুলো মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। দূর থেকে সমন্বয় করে নিয়মিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের টেন্ডার করেছি। প্রতি বছর বাজেট তৈরি করেছি। আনুষ্ঠানিকভাবে বাজেট ঘোষণা করতে না পারলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দিয়েছি।
দেবাশীষ পালিত বলেন, যারা আমার দায়িত্ব পালনে পদে পদে কাঁটা বিছিয়েছেন, তারাই আবার দুই মাস আগে আমি দায়িত্ব পালন করছি না, কর্তব্য পালনে অবহেলা করছি মর্মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দরখাস্ত করে আমাকে বরখাস্ত করার সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করে ফেলেছিলেন।
কাকতালীয়ভাবে ঘোষণার মাত্র এক ঘণ্টা আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে সেই আয়োজন ভেস্তে যায়। কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেই আমার সমস্ত আমলনামা। বলেন দেবাশীষ পালিত।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামি ডিসেম্বরের মধ্যে রাউজানসহ দেশের পৌরসভাগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। সেই নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা জানতে চাইলে রাউজান পৌর মেয়র দেবাশীষ পালিত বলেন, আমি রানিং মেয়র। স্বাভাবিকভাবেই মনোনয়ন চাইবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নির্বাচন করবো। তবে মনোনয়ন লাভের জন্য মরিয়া হয়ে উঠবো না।-যোগ করেন তিনি।
ধরুন, মনোনয়ন পেলেন। ফের নির্বাচিতও হলেন। কিন্তু আগেরবারের মতো চেয়ারেই বসতে পারলেন না। সেক্ষেত্রে জনগণকে পুনরায় বঞ্চিত করা হবে না?
এই প্রশ্নে দেবাশীষ পালিত বলেন, আমি জনগণকে কখনও বঞ্চিত করিনি। হাজার প্রতিকূলতার মাঝেও জনগণের প্রয়োজনে, জনগণের দোরগোড়ায় আমি হাজির হয়েছি। রাউজানের জনগণ আমাকে ভালো করেই চিনেন, জানেন। তাদের সোদামাটি ও ভালোবাসার রঙ মাখিয়েই আমি দেবাশীষ পালিত। আমার সামনের বাধাগুলোকেও তারা ভালো করে চিনেন।
১৯৯৯ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে রাউজান পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন দেবাশীষ পালিত। আওয়ামী লীগ সরকারের দুই বছর এবং বিএনপি সরকারের তিনবছর দায়িত্ব পালন করেন দেবাশীষ।
সেই সময়কার দায়িত্ব পালন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চমৎকার পরিবেশে সেই ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছি। বিএনপি ক্ষমতায়, স্বাভাবিকভাবে তখন বিএনপির আধিপত্য। সেই আধিপত্য ঠেকিয়েই সফলভাবে আমি দায়িত্ব পালন করেছি। অথচ এখন আমার দল ক্ষমতায়, আর এই সময়টাতে আমি দায়িত্ব পালন করতে পারছি না।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাইরের শত্রুকে মোকাবিলা করা যায় যতই শক্তিশালী হোক, কিন্তু ঘরের শত্রু মোকাবিলা করা কঠিন। আর সেই ঘরের শত্রুকে ফেস করতে হচ্ছে বারবার মৃত্যু উপত্যকা থেকে ফিরে আসা আওয়ামী লীগের তৃণমূলকর্মী দেবাশীষ পালিতকে।
তবে একটি মহলের দাবি, ষড়যন্ত্র ও বিরোধিতা করলে দেবাশীষ পালিত কখনও পৌরসভার মেয়র হতে পারতেন না। সবার সহযোগিতা নিয়েই সেদিন তিনি মেয়র হয়েছিলেন। অথচ মেয়র হয়েই তিনি বলতে শুরু করলেন একক প্রচেষ্টায় মেয়র হয়েছেন। দায়িত্ব পালনে কেউ তাকে বাধা দেয়নি। তিনি যদি বাসায় বসে এবং ফেসবুক অপারেট করে অফিস ও রাজনীতি করতে চান তাহলে কার কী করার আছে?
প্রসঙ্গত, গেলো পৌরসভা নির্বাচনে সাবেক পৌরমেয়র প্রয়াত শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বেবীকে প্রার্থী ঘোষণা করেন স্থানীয় সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। পরে সেই প্রার্থী পরিবর্তন করে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড দেবাশীষ পালিতকেই চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা দেয়। শত প্রতিকূলতার মাঝেও বিপুল ভোটে রাউজানের মেয়র নির্বাচিত হন দেবাশীষ।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিত তৃণমূল থেকে উঠে আসা আওয়ামী লীগ নেতা। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত তৎকালীন এনডিপির সশস্ত্র সন্ত্রাস, রক্তক্ষয়ী সংঘাত-সংঘর্ষের পথ বেয়ে রাজনীতিতে উঠে এসেছেন তিনি। বারবার তিনি মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন। তার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে তা শুধু নয়, তার বাবা-মা, পরিবারের সদস্যদেরও এনডিপির সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয়েছিল বহুবার।