৫ রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও টেকনাফে কঠোর লকডাউন
করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা ও উখিয়া-টেকনাফের ৫টি ক্যাম্প কঠোর ‘লকডাউন’ করে দেয়া হয়েছে। এর মাঝে টেকনাফ উপজেলাকে দশ দিন আর রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ১২ দিনের জন্য লকডাউন দিয়েছে কক্সবাজার জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। ২১ মে থেকে শুরু হয়েছে কঠোর এ লকডাউন।জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সমন্বয়ক কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।মানবিক আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মাঝে হঠাৎ করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। গাদাগাদি অবস্থানের ফলে এখানে করোনার প্রাদুর্ভাব দ্রুত বাড়ার আশংকায় উখিয়া-টেকনাফের ৫টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২০ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ১২ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষনা করা হয়েছে। এসব ক্যাম্পে গত কয়েকদিনে বেশি করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।লকডাউনের আওতায় আসা ক্যাম্প গুলো হলো, কুতুপালং ওয়েস্ট ২, ৩, ৪, ১৫ ও টেকনাফের ২৪ নম্বর ক্যাম্প।
কক্সবাজার শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।আরআরআরসি কার্যালয় সূত্র মতে, বৃহস্পতিবার (২০ মে) পর্যন্ত ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৪১ হাজার ৪৭৭ জন রোহিঙ্গার নমুনা টেস্টের আওতায় এসেছে। এদের মাঝে করোনা পজিটিভ এসেছে ৯১৩ জনের। তন্মধ্যে উখিয়া উপজেলার ক্যাম্প গুলোতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭৪০ জন এবং টেকনাফ উপজেলার ক্যাম্প গুলোতে আক্রান্ত ১৭৩ জন। এরমধ্যে মারা গেছেন ১৩ জন করোনা আক্রান্ত রোহিঙ্গা। গত ১৪ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে ক্যাম্প গুলোতে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৬৫ জন। আর ১৯ ও ২০ মে পরপর ২ দিন ৪৫ জন করে রোহিঙ্গা করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এতে উদ্বেগ বেড়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কক্সবাজারে করোনা রোগী বাড়তে থাকায় গত ১৯ মে কক্সবাজার জেলায় করোনা সংক্রমণ রোধে সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এর সাথে জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির অনলাইন সভা হয়। জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প গুলোতে করোনা সংক্রমণ আশংকাজনক বেড়ে যাওয়ায় কিছু কিছু রোহিঙ্গা ক্যাম্প লকডাউনে সিদ্ধান্ত হয়। সে সিদ্ধান্তের আলোকে একইদিন আরআরআরসি অফিসে অনুষ্ঠিত পৃথক আরেকটি জরুরী সভায় প্রাথমিকভাবে কুতুপালং ওয়েস্ট ২, ৩, ৪, ১৫ ও ২৪-এ ৫টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ১২ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষনা করা হয়। এগুলো ছাড়া অন্য ক্যাম্পেও যাতায়াত ও চলাচলে কঠোরতা পালন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সচিব সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম শরনার্থী শিবির বলে খ্যাত উখিয়া টেকনাফের ৩৩ টি রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের প্রত্যেকটিতে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে কুতুপালং ওয়েস্ট ২, ৩, ৪, ১৫ ও ২৪-এ ৫ টিতে অপেক্ষাকৃত বেশী রোহিঙ্গার করোনা শনাক্ত হয়। তাই লকডাউন চলাকালে ক্যাম্প সমুহে জরুরী বিষয় ছাড়া সবকিছুর যাতায়াত বন্ধ থাকবে। এসময় ক্যাম্প থেকে কোন শরনার্থী বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বের হতে পারবেন না। তেমনি ইচ্ছে করলেই ক্যাম্পের ভেতরে যেতে পারবেন না কোন স্থানীয় বা কর্মরত এনজিওর সংশ্লিষ্টরা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ক্যাম্প গুলোর সর্বত্র আইনশৃংখলা বাহিনী রাতদিন লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। লকডাউন চলাকালে জরুরী ও অত্যাবশ্যকীয় কর্ম, খাদ্য, চিকিৎসা ব্যতীত এনজিও, আইএনজিও, জাতিসংঘের সংস্থাসহ ক্যাম্প সমুহে কর্মরত সংশ্লিষ্ট সকলের গাড়ি চলাচল এবং আসা যাওয়াও সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।
এদিকে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় দশ দিন বিধিনিষেধ বা ‘লকডাউন’ দিয়েছে প্রশাসন। শুক্রবার (২১ মে) থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এ লকডাউন শুরু হয়েছে বলে জানান টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. পারভেজ চৌধুরীইউএনও পারভেজ চৌধুরী বলেন, কক্সবাজার জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে আবারেও ১০ দিনের (২১ মে থেকে ৩০ মে) জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় এ উপজেলায় শুক্রবার সকাল থেকে কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলায় মাইকিং করা হচ্ছে।
ইউএনও বলেন, লকডাউন সময়ে টেকনাফ থেকে কোনও লোক বাইরে এবং বাইরে থেকে কেউ ভেতর প্রবেশ করতে পারবে না। শুধু ওষুধের দোকান ছাড়া বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত হাট বাজার ও দোকানপাট খোলা থাকবে। তবে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকবে।
এদিকে, রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প গুলোতে করোনা সংক্রমণ আশংকাজনক বৃদ্ধিতে জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প গুলো অপেক্ষাকৃত বেশী করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে জানিয়ে, এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সহসায় কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প গুলোতে করোনা সংক্রমণ আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সমন্বয়ক কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব রোধে করনীয় সবকিছুই করছে প্রশাসন। আক্রান্ত সকলের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করে সচেতনতার মাধ্যমে এর বৃদ্ধি রদ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। সেটা নিশ্চিতেই টেকনাফ উপজেলা ও ঘনবসতির ৫টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সবার আন্তরিক সহযোগিতা পেলে করোনা প্রতিরোধে সফলতা আসবে বলে আশা করেন ডিসি।