বিজয়ের ৫০ তম বছর পেরিয়ে আজ আমাদের অর্জন সমূহ-শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার
শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার: আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজ অনেক দূর এগিয়ে এনেছেন তার সুযোগ্যউত্তরসুরী বাংলার কান্ডারী আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার সুযোগ্যনেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ বিজয়ের ৫০ তম বছর পেরিয়ে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত আন্তর্জাতিকদরবারে। আমাদের অর্থনৈতিক অর্জন সমূহকে জনগণের সেবার দ্বার গোড়ায় পৌঁছাতে হবে। তাহলেইবঙ্গবন্ধুর আজীবন স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেওয়া এই বাংলাদেশ আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রমকরতে হয়েছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা,শিশু মৃত্যুহার কমানো এবং দারিদ্রতা হ্রাস করণের ক্ষেত্রে আমরা উল্লেখযোগ্য উন্নতি প্রদর্শনকরতে আমরা সক্ষম হয়েছি।বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণ ঘটেছে।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশথেকে আজকের এই উত্তোরণ যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস, সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে এটি একটি বড় অর্জন। আমাদের এটি সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহনের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিকঅগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে।
বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে
পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারন পূর্বক সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে।
বিজয়ের গত ৫০ বৎসরের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সফলতা সমূহ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপন
ও ২য় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন বিবেচনাধীন, পদ্মা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু-১ বাস্তবায়ন ও
দ্বিতীয় সেতু পরিকল্পনাধীন, ঢাকা মেট্রোরেল বাস্তবায়ন ও পাতাল রেল পরিকল্পনাধীন, রূপপুর
পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নাধীণ, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন, পায়রা
গভীর সমুদ্র বন্দর সহ জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখার মতো হাজারো প্রকল্প চলমান আছে।
শিক্ষাখাতে শতভাগ ছাত্রছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ, নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে
প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত উপবৃত্তি প্রদান বর্তমান সরকারের অগ্রগতির অন্যতম
নিয়ামক। এছাড়াও ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ ও শিশু শিক্ষার্থীর হার ৯৭.৭
ভাগে ঊন্নিতকরণ। এছাড়াও শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন ২০১২ প্রনয়ন ও গঠন করা হয়েছে শিক্ষা
সহায়তা ট্রাস্ট।স্বাস্থ্য খাতের অর্জন সমূহঃ আমাদের স্বাস্থ্য খাতের সবচেয়ে বড় অর্জন টিকা খাতে, শিশুদের ও চলমান করোনার টিকা দান কর্মসূচীতে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম আদর্শ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক,উপজেলায় ৫০ শয্যার হাসপাতাল ও জেলা পর্যায়ে মেডিক্যালকলেজ স্থাপনের মাধ্যমে বড় ধরনের অগ্রগতি সাধন করেছে। স্বাস্থ্য সেবাকে মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে ১২ মেডিক্যাল স্থাপন ও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৪৭ হাজারের ও বেশী দক্ষ জনবল অর্থাৎ নার্স ও ডাক্তার। তথ্য প্রযুক্তিতে অর্জন সমূহঃ ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে সরকার নিয়েছে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদকে আনা হয়েছে ডিজিটাল সেন্টারের আওতায়।
টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৩৭ লক্ষ, ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪
কোটি ৪৬ লক্ষের মত, সরকারের সমুদয় মন্ত্রনালয়কে আনা হয়েছে তথ্য প্রযুক্তির আওতায়।
বর্তমানে আমরা ৪এ প্রযুক্তি থেকে ৫এ প্রযুক্তিতে প্রবেশ করেছি। অতি সম্প্রতি পরিক্ষামূলক
বাস্তবায়ন করেছে রাষ্ট্রীয় টেলিটক কোম্পানী।
বিদ্যুৎ খাতে অর্জন সমূহঃ বর্তমান সরকারের দূরদর্শী পদক্ষেপের ফলে এখাত অভুতপূর্ব সফলতা
এসেছে। বিরামহীন বিদ্যুৎ সরবরাহ দেশের উন্নয়নে অগ্রনী ভ’ূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে
বাংলাদেশে মোট ২৫২৩৫ (মে: ও:) বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন করেছে যা বর্তমান চাহিদার
বেশী।
ভূমি ব্যবস্থাপনায় অর্জন সমূহঃ ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করতে ৫৫ জেলায় বিদ্যমান
ম্যাপ ও খতিয়ান কম্পিউটারাইজেশনের কাজ সম্পন্ন করার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। ভূমির
পরিকল্পিত ও সুষ্ঠ ব্যবহার নিশ্চিত করতে মোট ২১ জেলার ১৫২টি উপজেলায় ডিজিটাল ল্যান্ড
জোনিং ম্যাপ সম্বলিত প্রতিবেদন প্রনয়ন করা হয়েছে। প্রনিত হয়েছে কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি
ব্যবহার আইন ২০১২ এর খসড়া।
শিল্প ও বানিজ্য খাতে অর্জন সমূহঃ বাংলাদেশে পোষাক শিল্পের পাশাপাশি প্রসার ঘটেছে হাউজিং ,
জাহাজ ভাঙ্গা ও নির্মান শিল্প, ঔষধ শিল্প ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, সফটওয়ার শিল্প,
আউটসোসিং শিল্প বর্তমানে বিশ্ববাজারে আমাদের বড় সুযোগ হয়ে দাড়িয়েছে।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অর্জন সমূহঃ সমাজের অবহেলিত দু:স্থ, বয়স্ক, বিধাবা, স্বামী
পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধী সহ অন্যান্য খাতে সরকার ব্যপকভাবে ভাতা প্রদান করছে। এছাড়াও
গৃহহীনদের মাঝে ভূমি ও গৃহ প্রদান, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধিসহ আরও অনেক আর্থ-সামাজিক
নিরাপত্তামুলক প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
জাতিসংঘ শান্তি মিশনে অর্জন সমূহঃ বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যোগদানের পর থেকে এ
পর্যন্ত বিশ্বের ৩৯টি দেশের ৬৪ শান্তি মিশনে খ্যাতি ও সফলতার সাথে তাদের কার্যক্রম
পরিচালনা করেছে। এযাবৎকালে শান্তি মিশনের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহনকারী ১১৫টি দেশের
মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অন্যতম।
যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন সমূহঃ উন্নত রাষ্ট্র গঠনে যোগাযোগ ব্যবস্থার ভূমিকা সর্বাগ্যে তাই
আমাদের সরকারও এই খাতের প্রকল্প সমূহ বাস্তবায়ন করছে। পদ্মা বহুমূখী সেতু, এমআরপিটি,
কর্ণফুলি ট্যানেল,বাস র্যাপিড ট্রানজিট, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রেল লাইন প্রকল্প
সমূহ।
৩০ লাখ শহীদেও আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত লাল সবুজের বাংলার
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হতে পেরে আমরা গর্বিত। আমরা বর্তমান প্র্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধার
সন্তানেরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে
র্দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা যা এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়ন সহ শিক্ষা স্বাস্থ্য, লিংঙ্গ
সমতা, কৃষি, দারিদ্রসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানীমুখী শিল্পায়ন, পোশাক শিল্প, ঔষধ
শিল্প,রপ্তানীআয় বৃদ্ধি, সামরিক খাতের উন্নয়ন সহ নানা অর্থনৈতিক সূচকে আমাদের অগ্রগতি।
সবশেষে আমরা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে আসুন
দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত সুখী সমৃদ্ধ
বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে কাজ করি।