নেত্রকোনায় বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ ঐতিহ্যের বাঁশ শিল্প, কমছে পণ্যের কদর

Share the post
সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা : নেত্রকোনায় গ্রামীণ জনপদে বাঁশ শিল্প এখন তেমন চোখে পড়ে না। বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর থেকে তৈরি বিভিন্ন পণ্যের দাম দিনদিন বাড়ছে। তাই বাঁশের তৈরি পণ্যের কদরও কমে যাচ্ছে গ্রামগঞ্জে। ফলে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত জেলার প্রতিটি ইউনিয়নের নারী ও পুরুষ কারিগরদের ভাগ্যে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন। আগে বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদ থেকে শুরু করে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে মানুষ গৃহস্থালি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বেত ও বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করত। কালের বিবর্তনে আধুনিক জীবনধারায় প্লাস্টিকের ব্যবহার ও দিনদিন বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় তা এখন বিলুপ্তির পথে। কালের বিবর্তনে বাঁশের তৈরি পণ্য এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না। বাঁশের মূল্য বৃদ্ধি আর অপ্রতুল ব্যবহারের কারণে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প আজ হুমকির মুখে। আজ থেকে ১৪-১৫ বছর আগেও বাঁশের তৈরি সামগ্রী বাচ্চাদের দোলনা, পাখা, কুলা, চালনীসহ বিভিন্ন প্রকার আসবাবপত্র গ্রামঞ্চলে বিস্তার ছিল। কিন্তু এখন এর কদর নেই বললেই চলে। যে বাঁশ আগে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় পাওয়া যেত, সেই বাঁশ বর্তমান বাজারে কিনতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায়। বাঁশের দাম যেমন বেড়েছে সেই পরিমাণ বাড়েনি এসব পণ্যের দাম। চাহিদা অনুযায়ী বাঁশের উৎপাদন কম থাকার কারণে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ ঘর বাড়ি নির্মাণে প্রয়োজন মতো বাঁশ বৃদ্ধি হচ্ছে না।
সরেজমিনে জেলার কয়েকটি উপজেলার কয়েকটি বাজারে গিয়ে বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র বিক্রি করতে আসা কুদ্দুস আলী, সাহেব আলী, শাহজাহান, রিয়াজ উদ্দিন জানায়,তাদের প্রত্যেকের গ্রামে প্রতিটি পরিবার এ কাজে নিয়োজিত আছে। অতি কষ্টে বাঁশ শিল্প টিকিয়ে রাখতে ধার-দেনা ও বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে কোনোরকম জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তারা। বৃদ্ধরা বলছেন, গ্রামীণ জনপদে বাঁশ ছিল একটি ঐতিহ্য। প্রতি বাড়িতে কমবেশি চাষ হতো বাঁশ। যা দিয়ে তৈরি হতো নিত্যদিনের গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত সকল ধরনের জিনিসপত্র। তবে এখনো মাঝেমধ্যে গ্রামীণ উৎসব ও মেলাগুলোতে বাঁশ ও বেতজাত শিল্পীদের তৈরি খোল, চাটাই, খলুই, ধামা, টোনা, পাল্লা, মোড়া, বাইর, পাতি, খাচা, উন্যা চোখে পড়ে।জেলার প্রতিটি গ্রামে কম বেশি অনেক পরিবার এ পেশায় সম্পৃক্ত ছিল। বাঁশ-বেত দিয়ে তারা তৈরি করত গৃহস্থালি ও সৌখিন নানা পণ্যসামগ্রী। তা দেখতে অনেকটা আকর্ষণীয় ছিল। এসব বিক্রি করেই চলত নেত্রকোনার গ্রামগঞ্জের এসব মানুষের জীবনযাপন।
নেত্রকোনার গ্রামঅঞ্চলে সরেজমিনে গিয়ে আরো খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাঁশের দাম বৃদ্ধি, খরচের তুলনায় লাভ কম ও দিনদিন চাহিদা কমে যাওয়ায় ক্ষুদ্র এ শিল্পের কারিগরদের অধিকাংশই এখন আদি পেশা বদল করে কৃষিসহ নানা পেশায় যুক্ত হয়েছেন। জেলার বারহাট্টা বাজার, লক্ষীগঞ্জ বাজার,রামপুর বাজার, গাগলাজুর বাজার,ও লেপসিয়া বাজারে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করতে আসা বেশ কয়েকজন কারিগর বলেন, বিভিন্ন সমিতি থেকে বেশি সুদ দিয়ে টাকা নিয়ে কোনো রকমে টিকে আছেন তিনি। এ শিল্পটির উন্নতির জন্য সরকারিভাবে যদি অল্প সুদে ঋণ দেওয়া হয় তাহলে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ আমিরুল ইসলাম বলেন, বাঁশ শিল্পের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার জন্য বেশি বেশি বাঁশ চাষ করতে হবে। যেহেতু এটি একটি অর্গানিক প্রোডাক্ট। বিভিন্ন কুটির শিল্পে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র সংরক্ষণ করে এ শিল্পকে ধরে রাখতে হবে। এছাড়া প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বর্জন করতে হবে। তাহলে বিভিন্ন প্রকার রোগবালাই থেকে মানুষ রেহাই পাবে। বাঁশের তৈরি পণ্যের কদরও বাড়বে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

নেত্রকোনায় বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতবিনিময় ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত 

Share the post

Share the postসোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা : বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি নেত্রকোণা জেলা শাখার উদ্যোগে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৮ নভেম্বর) নেত্রকোণা আবু আব্বাস ডিগ্রি কলেজের হলরুমে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জানা গেছে, জেলার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা (৮ সেপ্টেম্বর) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের প্রেরিত চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে অধিদপ্তর থেকে […]

নেত্রকোনা শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে পৌর প্রশাসক আরিফুল ইসলাম সরদার

Share the post

Share the postসোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা : নেত্রকোনা পৌরসভার উদ্যোগে শুরু হয়েছে বাস টার্মিনাল সহ বিভিন্ন সড়কের দুই পাশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান। এই অভিযানে সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন পৌর প্রশাসক আরিফুল ইসলাম সরদার। বুধবার (২৯ অক্টোবর) ১২ থেকে ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকার রাস্তার দু’পাশে চলে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। এ সময় পথচারী, ব্যবসায়ী, চালক ও যাত্রীদের উদ্দেশে ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে […]