আশিকুর রহমান, নরসিংদী :-নরসিংদীর সদর উপজেলায় নেশাখোর স্বামী ফরিদ মিয়ার (৪৪) দেয়া আগুনে স্ত্রী, সন্তান, শ্যালিকাসহ পাঁচ জন ঝলসে গেছে।
বুধবার (২২ অক্টোবর) গভীর রাতে সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের সঙ্গীতা এলাকায় এ চ্যাঞ্চলকর ঘটনা ঘটে।
এতে ফরিদ মিয়ার স্ত্রী রিনা বেগম (৩৮), তার দুই ছেলে আরাফাত (১৫) ও তাওহীদ (৬) এবং শ্যালিকা সালমা বেগম (৩৪) এবং শ্যালিকার ছেলে ফরহাদ (১২) দগ্ধ হন।
অভিযুক্ত স্বামী ফরিদ মিয়া পেশায় একজন পিকআপভ্যান চালক এবং নেশাখোর বলে এলাকাবাসীর কাছে সুপরিচিত।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ফরিদ মিয়া মাদকাসক্ত হওয়ায় স্ত্রী রিনা বেগমের সাথে দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য জীবনে পারিবারিক কলহ চলে আসছিল। এ নিয়ে তাদের দু’জনের মাঝে বেশ কয়েকবার ঝগড়াঝাঁটির সৃষ্টি হয়। পরে রিনা বেগম তার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি সঙ্গীতা এলাকায় সন্তানদের নিয়ে চলে আসেন এবং বসবাস করেন। এসব ঘটনার জের ধরে বুধবার রাত ২টার দিকে ফরিদ মিয়া শ্বশুর বাড়িতে ঢুকে ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকায় স্ত্রী, সন্তান ও শ্যালিকার গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে ঘরের বাইরে থেকে দরজা তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়। তাদের ডাক-চিৎকারে এলাকাবাসী টিনের ভেড়া ভেঙ্গে ঘরের ভিতর থেকে আগুনে ঝলসানো অবস্থায় পাঁচজনকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনজনকে রাজধানীর বার্ন ও প্লাস্টিক ইউনিটে পাঠায়।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান বলেন, আজ ভোর রাতের দিকে নরসিংদী এলাকা থেকে এক নারী ও তার দুই সন্তানকে দগ্ধ অবস্থায় বার্ন ইউনিটের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে রিনা বেগমের শরীরের ৫৮ শতাংশ, তৌহিদের শরীরের ১৬ শতাংশ এবং ফরহাদের শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাদের তিনজনকেই এইচডিইতে শিফট করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নরসিংদী মডেল থানার উপপরিদর্শক অনিক কুমার গুহ বলেন, ‘৯৯৯ এ খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তবে কীভাবে অগ্নিকাণ্ড হয়েছে তা আমরা এখনো বলতে পারছি না। তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।
এদিকে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকার বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ না পেলেও কেন এই ঘটনা ঘটেছে। তা জানতে তদন্ত করছে পুলিশ। সেইসাথে আসামিদের ধরতে পুলিশী অভিযান চলছে।
দগ্ধ সালমা বেগমের বাবা মহন মিয়া বলেন, ফরিদ নেশাগ্রস্ত, সে আমার মেয়ের উপর দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার করছে। সে রাতে তাদের আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিলো। আমি তার বিচার চাই।

