ট্রেনে ঢাকা ছাড়ছেন অর্ধলক্ষ মানুষ

Share the post

পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বৃহস্পতিবার তিনটি ঈদ স্পেশালসহ ৩৭ জোড়া আন্তঃনগর আর ১৮টি লোকাল ও মেইল ট্রেনে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ঢাকা ছাড়বেন।

বুধবার (১৯ এপ্রিল) সরকারিভাবে ঈদের ছুটি শুরু হলেও ট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে আরও তিন দিন আগে থেকেই। ঈদের ছুটি পাওয়া মাত্র মানুষ ভিড় করছে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে। তবে অন্য সময়ের মতো ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনে এসেও রেলস্টেশনে টিকিটের জন্য মানুষের ভিড় লক্ষ করা যায়নি। টিকিট কাউন্টারে কিছুটা জটলা থাকলেও মেইন স্টেশন চত্বর ফাঁকাই বলা যায়।

সকাল ৬টায় রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস সঠিক সময়ে ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় চতুর্থ দিনের ঈদযাত্রা। এবার ঈদে ভোগান্তি ছাড়াই স্বাচ্ছন্দ্যে যাত্রা করছেন ঘরমুখী লাখো মানুষ।

গত তিন দিন বেশ কয়েকটি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। তবে আজ (বৃহস্পতিবার) তেমনটি দেখা যায়নি। শুধু সোনার বাংলা ট্রেনটি ছাড়া আর সব কটি ট্রেন সঠিক সময়ে কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে গেছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সকাল ৭টার সোনার বাংলা ট্রেনটি স্টেশন ত্যাগ করে সকাল সাড়ে ১০টায়।

উত্তরবঙ্গের ট্রেনগুলোতে কিছুটা ভিড় থাকলেও পূর্বাঞ্চলের ট্রেনগুলো ছিল বেশ ফাঁকা। এর অন্যতম কারণ, শতভাগ অনলাইন টিকিটিং সিস্টেম। যারা ১০ এপ্রিল অনলাইনে আগাম টিকিট কেটেছিলেন তারাই যাত্রা করছেন। অনলাইন টিকিট ছাড়াও ট্রেন ছাড়ার দুই ঘণ্টা আগে পাওয়া যাচ্ছে স্ট্যান্ডিং টিকিট। যাত্রীদের চাপ থাকায় যাত্রার দিনে শতকরা ২৫ ভাগ স্ট্যান্ডিং টিকিট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে।

অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ট্রেনে ঘরমুখী মানুষ ঝামেলা ছাড়া বাড়িতে যেতে পারছেন। কালোবাজারির মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট কেনা বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে স্টেশনের বাইরে তেমন বিশৃঙ্খলা নেই। এমনকি ট্রেনের ভেতরের পরিবেশও স্বস্তিদায়ক। তাই ঈদযাত্রায় ট্রেনে ভ্রমণ করতে পেরে উচ্ছ্বসিত যাত্রীরা। অনলাইনে টিকিটের ঝামেলা পেরিয়ে যারা নিশ্চিন্তে উঠে বসেছেন ট্রেনে, তাদের ঈদ আনন্দ যেন শুরু হয়ে গেছে তখন থেকেই।
চট্টগ্রামগামী চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনে বাড়ি যাচ্ছেন সাখাওয়াত হোসেন। পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রথম বর্ষে। গ্রামে যাচ্ছেন বাবা-মা পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে। তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদে ট্রেনের চিত্র পুরো পাল্টে গেছে। এমন সুন্দর ও শৃঙ্খল পরিবেশ এর আগে দেখিনি। আমি আগেই অনলাইনে টিকিট কেটে রেখেছিলাম। সেটা প্রিন্ট করে স্টেশনে ঢোকার সময় দেখাতে হয়েছে। স্টেশনের ভেতরেও কোনো মানুষের চাপ নেই।’

এদিকে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেসের যাত্রী আলী হোসেনের কাছে এবারের ঈদে ট্রেন যাত্রাটা একেবারেই অন্যরকম। ঈদ করতে নিজের শহরের উদ্দেশে রাজধানী কমলাপুর স্টেশন ছেড়েছেন তিনি।

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি সময় সংবাদকে বলেন, ‘অন্যান্য বছর সারা রাত স্টেশনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতাম। কিন্তু ভিড়ের কারণে সিটে বসতেই পারতাম না। এবার সেই চিত্র নেই। স্টেশনে ঢোকার পথেই টিকিট চেক করল কয়েকবার। কোনো ভিড় ছাড়া ট্রেনে উঠেছি, সহজেই এসে সিটে বসলাম। এত স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা আমি এর আগে কখনো দেখিনি।’
 
এদিকে এবার ঈদযাত্রায় শেষদিন পর্যন্ত এমন স্বস্তিদায়ক হবে জানিয়ে রেল কর্মকর্তারা বলছেন, শতভাগ অনলাইনে টিকিট বিক্রি এবং টিকিট যার ভ্রমণ তার নিশ্চিত করতে গৃহীত কার্যক্রমই এবার লাঘব করেছে ভোগান্তি। এখন ঘরমুখী সব মানুষই সুস্থ ও শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ করতে পারবেন বলেও জানান তারা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated