চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের ‘গভীর রাতে ঘোষিত’ পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে রহস্য

Share the post

চট্টগ্রাম সংবাদ: চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের ‘গভীর রাতে ঘোষিত’ পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। তবে সেই কমিটিকে গায়েবি ও ভুয়া বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগ নেতারা।

এদিকে চার নেতা স্বাক্ষরিত সাত পৃষ্ঠার সেই কমিটি বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। অন্যদিকে এ ঘটনায় নগর কিংবা কলেজ ছাত্রলীগ, দায় নিতে চায়নি কেউ।

জানা যায়, রোববার (১৫ মে) দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের ১৩৬ সদস্যের ‘পূর্ণাঙ্গ কমিটি’ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় ব্যাপক তোলপাড় ও সমালোচনা।

আলোচিত সেই কমিটির বিজ্ঞপ্তি পর্যালোচনায় দেখা যায়, এতে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের নিজস্ব প্যাড ব্যবহার করা হয়েছে। যার ডান পাশে রয়েছে সংগঠনের নগর সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের স্বাক্ষর ও সিল। অন্যপাশে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম ও সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজের স্বাক্ষর ও সিল। প্রতিটি স্বাক্ষরে তারিখ ১৫ মে ২০২২।

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে ‘কমিটি-পাল্টা কমিটি’ নিয়ে এমনিতেই অস্বস্তি বিরাজ করছিল চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগে। এরমধ্যে এ ঘটনায় রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম কলেজের ২৫ সদস্যের আংশিক কমিটি হয়। এরপর দীর্ঘ তিন বছর ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছাড়াই চলছিল ছাত্রলীগের এই ইউনিটটি। আংশিক কমিটির সভাপতি মাহমুদুল করিম ও সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ দুজনই শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী বলে পরিচিত।

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গত ছয়মাস ধরে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে তোড়জোড় শুরু করেন। তবে কমিটিতে কাদেরকে রাখা হবে তা নিয়ে বাধে বিপত্তি। মাহমুদুল ও সুভাষের নিজস্ব পছন্দের ‘মাইম্যানদের’ নিয়ে কমিটি তৈরি করে পাঠানো হয় নগর ছাত্রলীগের হাইকমান্ডের কাছে। তবে সেই কমিটি ‘অপছন্দ’ হওয়ায় অনুমোদন না দিয়ে ঝুলিয়ে রাখেন নগর সভাপতি-সম্পাদক। এরপর হঠাৎ রোববার (১৫ মে) গভীর রাতে একটি ফেসবুক আইডি থেকে সাত পৃষ্ঠার কমিটি প্রকাশিত হয়।

সেই কমিটিতে দেখা যায়, নাম আসা সব নেতাই মাহমুদুল বা সুভাষ মল্লিক সবুজের অনুসারী। তবে সেই কমিটিকে অবৈধ ও ভুয়া বলে দাবি করেছেন মাহমুদুল করিম। এ ব্যাপারে সুভাষ মল্লিক সবুজ প্রথমে চুপ থাকলেও পরে তিনিও সুর মেলান ‘ভুয়া কমিটি’ বলে। যদিও এ ঘটনায় চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের একাধিক নেতার অভিযোগের তীর ছুটছে কলেজ সভাপতি ও সম্পাদকের দিকেই।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি আসাদুজ্জামান বলেন, কলেজ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ইচ্ছে করে এটি সামনে এনেছেন। তারা মূলত নিজেদের মাইম্যানদের নিয়ে কমিটি করতে চেষ্টা চালিয়ে আসছেন অনেকদিন ধরে। অনেককে অঘোষিতভাবে সম্পাদকীয় পদও দিয়েছেন। কাউকে দিয়েছেন চিঠি। এখন নিজেরা ফাঁদে পড়ে বিষয়টি অস্বীকার করছেন।

অন্যদিকে সোমবার (১৬ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম ও সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চট্টগ্রাম কলেজে কোনো কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি।

এ বিষয়ে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম মহানগরনিউজকে বলেন, জাল স্বাক্ষর দিয়ে এটি কেউ  করেছে। আমরা কমিটি দিলে কলেজ ছাত্রলীগের নিজস্ব প্যাডে দিব। নগর ছাত্রলীগের প্যাডে কমিটি দেওয়ার এখতিয়ার আমরা রাখি না। এটা কে বা কারা করেছে তা আমরা জানি না। মূলত ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করতেই এ ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

তবে তিনি ‘পূর্ণাঙ্গ কমিটির লিস্টের’ বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমরা অনেক আগে কলেজ ছাত্রলীগের প্যাডে কমিটির লিস্ট জমা দিয়েছিলাম নগর ছাত্রলীগ হাইকমান্ডকে।

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজও একই সুরে সুর মিলিয়ে বলেন,  এটা আমরা করিনি। কারা করেছে সেটা আপনিও জানতে পারবেন না, আমরাও পারব না। এটা কেউ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে করেছে। আমরা তদন্তের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আমরা সাংগঠনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনেই মহানগরনিউজকে এই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভুয়া বলে দাবি করেছেন।

সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু বলেন, এটি ভুয়া কমিটি। আমাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে কে বা কারা এটি করেছে।

অন্যদিকে জাকারিয়া দস্তগীর মহানগরনিউজকে বলেন, এটি সম্পূর্ণ ভুয়া কমিটি। স্বাক্ষর জালিয়াতি যারা করেছে তাদের খুঁজছি। এটা নিয়ে তদন্তও চলছে। এ ব্যাপারে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিব।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated