আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ও চাওয়া পাওয়া – শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার

Share the post

মোঃ শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার,হেড অব অপারেশন,ড্যাফোডিল ইনসটিটিউট অব আইটি, চট্রগ্রাম: শিক্ষা মানুষকে আলোর পথ দেখাবে, পথের সঠিক নির্দেশনা দিবে, মানুষেরমধ্যে থাকা সুপ্ত প্রতিভা জাগিয়ে তুলবে, সৃজনশীল কাজে উৎসাহিত করবেও মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আমরা জানি শিক্ষা জাতীর মেরুদন্ডএটি ছাড়া সবাই অচল। তাইতো আমাদের সবার প্রত্যাশা থাকে ভবিষ্যৎপ্রজন্মকে শিক্ষিত জাতিতে পরিনত করা এবং জাতীর মেরুদন্ড শক্ত করা। শিক্ষারপ্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মনুষ্যত্ব অর্জন করা, এটা হচ্ছে জাতীয় উন্নয়নেরপূর্বশর্ত। কিন্তু বর্তমান অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় আমাদের এই চাওয়াটিতথাকথিত চাওয়া প্রকৃত নয়। সন্তান যেন মানুষের মত মানুষ হয় এটি শুধুবাহ্যিক চাওয়া। আমরা ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় এইমানবিক মূল্যবোধ কতটুকু জায়গা নিতে পেরেছে। মানব শিশু জন্মের পরথেকে মানবিক ও সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার মাধ্যমে দ্বিতীয় বার মানুষহিসেবে জন্ম নিতে হয়। একটি মানব সন্তান জন্মের পর থেকেই শিক্ষা জীবনশুরু করে প্রথমে তার মা-বাবা,ভাই-বোন, পাড়া-প্রতিবেশী সবার কাছ থেকেসামাজিক, মানসিক, পারিবারিক এবং ধর্মীয় মুল্যবোধ তথা আমাদের সকল চাওয়া সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করে। এই শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের প্রতি ও আল্লাহরসৃষ্টিকুলের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠবে। বর্তমানে এই ইট কাঠেরসমাজ ব্যবস্থায় আমরা কি তা পারছি। যদি পেরে থাকি তাহলে এত সামাজিকঅবক্ষয় কেন। আমরা কি তাহলে ব্যর্থতার দিকে যাচ্ছি। যদি তা হয় তাহলেআমাদের ভবিষ্যৎ খুবই বিপদ সঙ্কুল পথে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় আমরা যদিপ্রতিটি পিতা-মাতাকে জিজ্ঞাসা করি সন্তানের প্রতি আপনার চাওয়াপাওয়া কি? আমরা সবাই বলবো সন্তান যেন মানুষের মত মানুষ হয়।এখানটাতেই আমাদের সমস্যা আমরা চাই কিন্তু এ চাওয়া পূরনের জন্য যে শুভসূচনা দরকার সেটা করিনা। আমি মনে করি আমাদের বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটা উচ্চ মার্গিয়। আমরা মানবিক ও মানসিক শিক্ষার থেকে মেধা বিকাশের শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব বেশী দিয়েছি। তাইতো পরীক্ষার পর আমরা ফলাফল উৎসবে মেতে উঠি। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যত উপরের শ্রেণীতে পড়তে যায় তাদেরকে তত বেশী তত্ত¡ীয় ও গানিতিক সমস্যা সমাধান করতে হয়।বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা একটা নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে বাচ্ছারা পড়াশুনা করেসার্টিফিকেট নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে এবং আগামী দিনগুলোতে ও বের হবে।আমাদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগের অভাব নাই। কিন্তু সত্যিকার অর্থে

সজ্জল বা মানবিক মানুষের বড়ই অভাব। বর্তমান অভিবাবক শ্রেণী ও সমাজ বারাষ্ট্র চায় মানবিক ও খাঁটি মানুষ অর্থাৎ যারা ভবিষ্যতে স্ব-স্ব ক্ষেত্রেপ্রতিষ্ঠিত হয়ে সমাজের বিভিন্ন অন্যায় অবিচার, জুলুম ও অপরাধেরবিরুদ্ধে আন্দোলন করবে। অভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে যারা মানুষের অধিকারসত্য ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে পারবে তারাই সত্যিকার অর্থে মানবিক ও খাঁটি
মানুষ। আমরা অভিভাবকগন সহ আমাদের সমাজ রাষ্ট্র এ ধরনের মানুষেরপ্রত্যাশা করে থাকি।তাই আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় মানবিক মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিয়েপ্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত সিলেবাস প্রণয়ন ও জাতী গঠনে
মনোনিবেশ করতে হবে।আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, শিক্ষক শিক্ষার্থীঅভিভাবক কর্মকর্তা সকলের একটাই চাওয়া ভালো রেজাল্ট করা অর্থাৎ হচ্ছেবেশী নম্বর এবং উচ্চতর গ্রেড ইত্যাদি। ছাত্র-ছাত্রীরা এবার পঠিত বিষয়
থেকে কি শিখলো, কতটা জ্ঞান অর্জন করলো অথবা তার জীবনের অর্জিতজ্ঞানের প্রতিফলন কি ঘটলো তা কেউ আমরা যাচাই করিনা।আমাদের শিক্ষার লক্ষ্য অনেকটাই সার্টিফিকেট নির্ভর। আমরা প্রতিনিয়তদেখি ছেলে বা মেয়ে ভালো নম্বর পেলে বাবা-মা রা অনেক খুশি হয় এবংসবাইকে মিষ্টি খাওয়ায়, বাচ্চাকে পুরষ্কৃত করছে আবার ফলাফল খারাপ করলে
তিরস্কৃত এবং শারিরীক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। কিন্তু অভিভাবকসহআমাদের বরাবরই প্রথম চাওয়া ছিল মানুষের মত মানুষ হওয়া অমানুষ যেন নাহয়। বাস্তবে আমরা জগত সংসারের কথা চিন্তা করে ভবিষ্যতে ডাক্তারইঞ্জিনিয়ার বানানোর জন্য মানবিক চাওয়াকে বিসর্জন দেই। আমাদেরসমাজে মানবিক ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কজনই বা পাওয়া যায়, সবাই ছুটেকমিশন বানিজ্যের পিছনে সে বিষয়টা আমরা প্রত্যেকে অত্যন্ত ভালোভাবেজানি এবং উপলব্দি করি। কিন্তু পক্ষান্তরে অত্যন্ত মেধাবী ফলাফল না করেও মানবিকমানুষ হওয়া যায়। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় হাজার কোটি উদাহরন আছেআমরা মানবিকতা বাদ দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে টাকা কামানোর মেশিনবানানোর প্রচেষ্টায় মশগুল থাকি। আমরা মুখে বলি এক কিন্তু অন্তরে প্রত্যাশা
করি আরেক। হাঁ যদি আমরা অভিভাবকগণ ও সরকার মিলে যথাযথ মানবিক মূল্যবোধ সম্ভলিত শিক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত ভালো মানুষ তৈরিতে সক্ষম হতামতাহলে আমাদেরকে শুনতে হতো না ডা: সাহেবরা কমিশনের জন্য অযথা

অপারেশন করিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার সাহেবরা বাঁশ দিয়ে বিল্ডিং বানিয়েছেন আমলা ও নেতারা বিন দেশে বেগম পাড়া বানিয়েছেন।
আমরা প্রত্যাশা করতেই পারি শিক্ষার মাধ্যমে ভাল মানুষ তৈরি হবে, তাহলেআমাদের উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। আমাদের দেশে কোনো মানুষ গৃহহীন,খাদ্যহীন, ক্ষুদাথর্, চিকিৎসা বঞ্চিত থাকবে না। আমরা সবাই সরকারি বে
সরকারি, ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উৎদোগে এ সকল মানবিক কার্যগুলিসম্পাদন করবো। আমাদের মাঝে থাকবে না সম্পদ আহরনের প্রতিযোগিতা।প্রত্যেকে তার অর্জিত অতিরিক্ত অর্থ সম্পদ বিভিন্ন মানবিক উন্নয়ন প্রকল্পে ও সমাজকল্যান মুলক কাজে বিনিয়োগ করবেন। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এই মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ গুলোকে নিয়ে গর্ববোধ করবে।
তাহলে আমরা পারস্পরিক বিদ্বেষ, হানাহানি, দখলদারিত্ব, সন্ত্রাসবাদ প্রতিহতকরতে পারবো।প্রকৃত পক্ষে বর্তমান শিক্ষা মানুষকে বৈষয়িক বুদ্ধি বাড়িয়ে দেয়। বৈষয়িকবুদ্ধি দ্বারা পার্থিব ধনসম্পদ বাড়ি গাড়ি ইত্যাদির মালিক হওয়া যায়। কিন্তুপ্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। প্রখ্যাত একজন শিক্ষাবিদ তার প্রবন্ধে বলেছেনশিক্ষা লাভে বুদ্ধির তিক্ষèতা বাড়ে কিন্তু মানুষের স্বরুপ কেবল তার বুদ্ধিতে নয়,বুদ্ধি মানুষের পথ চলার একটা উপায় মাত্র। তার ইচ্ছা যদি কল্যাণমুখি হয় তবেমানুষ তার নিজের এবং সমাজের ভালো করবে। আর তা যদি অশুভ হয়ে পড়ে তবেবুদ্ধি থাকলেও অকল্যাণ রোধ করা যাবে না। স্কুল কলেজ থেকেই যদি চুরি বিদ্যাপ্রশিক্ষন শুরু করি তা হলে আমরা কর্মজীবনে কিভাবে সংশোধন হবে। তারমধ্যে বড় হয়েও চুরির অভ্যাস থেকে যাবে। যদি তিনি পরবর্তিতে রাষ্ট্রের বড়কর্তা অথবা নেতা হন তা হলে আমাদের কি অবস্থা হবে তা একটু উপলব্দিকরেন। তাই আমাদেরকে নৈতিক শিক্ষায় পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে গুরুত্বদিতে হবে। বাচ্চাদের নৈতিক কার্যক্রমকে মুল্যায়ন করতে হবে এবং উপলব্দিকরতে হবে। তাই কবিতার পংতিমালায় বলতে হয়- “সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি সারাদিন আমি যেন ভাল হয়ে চলি, আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনেআমি যেন সেই কাজ করি ভাল মনে। ভাই বোন সকলেরে যেন ভালবাসি একসাথে থাকি যেন সবে মিলেমিশি”।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated